
প্রিয় হাফিজ! মৃত্যু চিরন্তন সত্য। জন্ম নিলে মৃত্যুবরণ করতেই হবে। তবুও কিছু মৃত্যু রয়েছে, যা মানা যায় না। যার চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে। মৃত্যুর এই ইস্পাতকঠিন দেয়াল বাধ্য করেছে তোমার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে। মৃত্যুর এই প্রাচীর ভাঙবে, এমন সাধ্য আছে কার?
প্রিয় হাফিজ, তোমার সঙ্গে কাটানো স্মৃতিগুলো মনে হলেই আমরা পীড়িত হয়ে পড়ছি। আজও আমাদের নস্টালজিক করে রাখে তোমার সঙ্গে কাটানো সময়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের প্রথম ক্লাসে তোমাকে দেখেছি উৎফুল্ল ও বন্ধুবৎসল। কী আড্ডা, কী প্রেজেন্টেশন, কী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সব ক্ষেত্রেই তোমার ছিল সরব পদচারণ। তোমাকে হারিয়ে ফেলব, এটা কখনো ভাবিনি। কী এমন হয়েছিল যে তোমাকে এভাবে, এই সময়ে চলে যেতে হলো? আমরা রিক্ত আজ তোমাকে হারিয়ে। আমরা শূন্য আজ আমাদের মধ্যে তোমাকে না পেয়ে। ওপারে ভালো থেকো প্রিয় বন্ধু। তোমাকে আমরা মিস করব।
আবদুর রহমান জামী, শিক্ষার্থী, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(সদ্য প্রয়াত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের সহপাঠী)
এক বছর হয়ে গেল, অথচ মনে হয় এই তো সেদিন আপনার সঙ্গে মনের কথাগুলো ভাগাভাগি করেছি। সত্যি বলছি, আপনার প্রতি আকর্ষণ আগের মতো আর নেই। আপনার চেনা সেই অভিমানী মেয়েটা বদলে গেছে। কারণ, তার অভিমান ভাঙানোর মানুষ নেই। আমি আর নেই আপনার আমি। কতবার ভেবেছি, যা হওয়ার হবে, আপনাকে আবার আপন করে নিই। পরমুহূর্তে আবার নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি। খুব ইচ্ছা করে আপনার কাছে গিয়ে সবার নামে নালিশ করি, সবাই আমাকে কষ্ট দেয়। কেউ বুঝতে চায় না আমাকে। তারপর মনে পড়ে, আপনিও তো সেই দলে...।
সত্যি, যারা ভালোবাসার মানুষকে আগলে ধরে রাখতে পারে, তারা অনেক ভাগ্যবান। আমাকে বেশির ভাগ মানুষ বলে, ‘বিয়ে কর, দেখবি তোর আর খারাপ লাগছে না। কিন্তু আমি কী চাই তা একটি বারও কেউ বুঝতে চায় না।’
অনেক ধন্যবাদ আমাকে আপনার পাশে থাকতে দেওয়ার জন্য। নতুন করে কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারব কি না, জানি না। মনে একটা ভয়, এই ভয় কাটিয়ে ওঠা কঠিন। আপনার নামে অধুনায় তৃতীয় আর শেষ চিঠি এটা। আপনি পড়বেন কি না, জানি না। বুকের খুব গভীরে আপনার স্মৃতিগুলো চাপা দিয়ে রাখব। একসময় আপনাকে আর মনে করব না। আমার ওই পাগলামি আর থাকবে না। আপনার ভালোবাসার বসন্ত আর আসবে না।
ফাতেমা
বাংলা সাহিত্য পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। বিরক্তও লাগে সমপরিমাণে। বিরক্ত লাগার কারণ, বাংলা সাহিত্যের বেশির ভাগ প্রেম-ভালোবাসা, কামনা-বাসনা, বিরহ দিয়ে পরিপূর্ণ। যখনই সাহিত্য পড়ি, তখনই সাহিত্যের সব লেখার মধ্যে তাকেই খুঁজি, তাকেই ভাবি। তারই বিগত সব কর্মকাণ্ড মনশ্চক্ষুর মধ্যে পরিষ্কারভাবে ভেসে ওঠে। পড়া বাদ দিয়ে নিমীলিত লোচনে তাকে নিয়ে ভাবনার পালা শুরু হয়। আমি তাকে এখনে ভুলতে পারিনি; কীভাবে ভুলব, কেনইবা ভুলব? দুটি প্রশ্নেরই উত্তর আছে। আমি বরং দ্বিতীয় প্রশ্নটারই উত্তর লেখার চেষ্টা করি, কারণ প্রথম প্রশ্নটার উত্তর আপেক্ষিক। কেন আমি সজ্ঞানে অকৃতজ্ঞের মতো আচরণ করে তাঁকে ভুলে যাব? যে কামিনীকে দেখে আমার হৃদয়ে হাজারবার উৎসুক ভালোবাসার উদয় হয়েছে, যার মাধ্যমে আমি ভালোবাসার সংজ্ঞা শিখেছি, বিপুলা পৃথিবীর অন্যতম সুখগুলোর একটি আস্বাদন করতে পেরেছি (প্রেম-ভালোবাসা) নির্বিঘ্নে, তাকে কী করে ভুলি? তার মতো হৃদয় উৎসর্গকারী, পরমা সুন্দরীকে ভুলে যাওয়া কি এ প্রেমিকের জন্য সমীচীন হবে?
শেখ রাফিউল, মাগুরা
যখন ছেলেটা খারাপ সময় পার করে, তখন কোনো কিছুই তার অনুকূলে থাকে না। তখন মানুষ তাকে টিস্যু ভেবে ছুড়ে ফেলে। এমনকি তার যে ভালোবাসার কাছের মানুষটা, সেও বারবার ছুড়ে ফেলে দিতে চায় অনেক দূরে। ছেলেটা তখন বাস্তবতাটাকে মেনে নেয়, অপরের তুচ্ছ ব্যবহার থেকে অনেক কিছুই শেখে। ছেলেটা গোধূলির আলোয় একা বসে তার অশ্রুভরা নয়ন মুছতে চায়, কিন্তু তার অশ্রুর স্রোত মুছে কি কমানো যায়!
ছেলেটা একটু পাগলও বটে। বৃষ্টি নাই, বাদল নাই, সবকিছু উপেক্ষা করে মেয়েটাকে দেখবেই একবার, কিন্তু মেয়েটা বুঝতে চায় না সেসব। ছেলেটার খুব মন খারাপ হয়। ছেলেটা আসলেই মেয়েটাকে অনেক বেশি ভালোবাসে আর আগলে রাখতে চায় সারা জীবন। ছেলেটির কত স্বপ্ন মেয়েটিকে ঘিরে। ওর স্বপ্নগুলো মনে হয় আর কোনো দিন পূরণ হবে না।
আরাফাত (ছেলেটা), নটর ডেম কলেজে, ঢাকা।