>ডাকটিকিটে গল্প
তুমি নিশ্চয়ই হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার কাহিনি জানো। অনেক ইতিহাসবিদের মতে, হ্যামিলিনের ঘটনা কেবল গল্প নয়। ছোট্ট শহর হ্যামিলিন ছিল জার্মানিতে। হ্যামিলিনের জাদুঘরে আজও একটি প্রাচীন টিনের বাঁশি আছে। ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে ইঁদুর-শিকারিরা এ ধরনের বাঁশি ব্যবহার করত। আর ইতিবাসবিদদের মতে, হ্যামিলিনের ঘটনাটি ঘটেছিল ১২৮৪ সালের জুলাই মাসে। তো এই গল্প ধরে ১৯৫৯ সালে হাঙ্গেরি একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে, জার্মানি করে ১৯৭৮ সালে, আর অস্ট্রিয়া ১৯৯৮ সালে। ডাকটিকিটগুলো দেখতে দেখতে গল্পটিও আবারও শোনাচ্ছেন নিজাম বিশ্বাস

ওয়েসার নদীর তীরে শান্ত শহর হ্যামিলিন। সুখ–স্বাচ্ছন্দ্যে শহরবাসীর দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে শহরজুড়ে শুরু হলো ইঁদুরের উৎপাত। একটি-দুটি নয়, লাখ লাখ ইঁদুর ঘরের জিনিস, অফিসের কাগজ কেটে কুটি কুটি করে ফেলছে। আর পোষা বিড়ালেরা এসব খ্যাপাটে ইঁদুরের হাত থেকে বাঁচতে শহর ছেড়ে পালাল। হ্যামিলিনের মেয়র গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মিটিংয়ে বসলেন। কেউই কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।
এমন সময় অদ্ভুত বেশভূষার এক লোক এসে জানালেন, তাঁর কাছে জাদুর বাঁশি আছে। এ বাঁশির সুরে যেকোনো প্রাণীকে তিনি বশ করতে পারেন। ইঁদুরের হাত থেকেও হ্যামিলিনবাসীকে তিনি উদ্ধার করতে পারবেন। তবে এ কাজের জন্য তাঁকে ১০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিতে হবে। লোকটির প্রস্তাবে মেয়র রাজি হলেন।
রাস্তায় নেমে এলেন বাঁশিওয়ালা। বাঁশিতে ফুঁ দিতেই মায়াবী এক সুর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল, অমনি হুমড়ি-ধুমড়ি খেয়ে ইঁদুরেরা লোকটির কাছে ছুটে এল। বাঁশিওয়ালা ওয়েসার নদীর দিকে হেঁটে চললেন, তাঁর পিছু নেচে নেচে চলল শহরের সব ইঁদুর। নদীর জলে ধীরে ধীরে নামলেন তিনি, বাঁশির সুরে দিশেহারা ইঁদুরেরাও ঝাঁপিয়ে পড়ল জলে। অবশেষে ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা পেল হ্যামিলিনবাসী।
বাঁশিওয়ালা এবার মেয়রের কাছে এলেন তাঁর পাওনা বুঝে নিতে। কিন্তু মেয়র তাঁকে ১০ হাজার নয়, মাত্র ১০০ স্বর্ণমুদ্রা দিতে চাইলেন।
মেয়রের এ বিশ্বাসঘাতকতা লোকটির সহ্য হলো না। কোনো মুদ্রা না নিয়েই তিনি বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়। বাঁশিতে আবারও ফুঁ দিলেন; আশ্চর্য মায়াবী এক সুর ছড়িয়ে পড়ল শহরে। এবার শহরের সব শিশু নেচে নেচে ছুটল বাঁশিওয়ালার পেছনে। তারপর হ্যামিলিনের পূর্ব পাশঘেঁষা পাহাড়ের আড়ালে শিশুদের নিয়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন সেই বাঁশিওয়ালা।