পানছড়িতে রাবার ড্যাম

১২ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায়

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় চেঙ্গি নদীতে নির্মিত রাবার ড্যাম । প্রথম আলো
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় চেঙ্গি নদীতে নির্মিত রাবার ড্যাম । প্রথম আলো

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় চেঙ্গি নদীর ওপর রাবার ড্যাম নির্মিত হওয়ায় এক হাজার ২০০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। ৮০ মিটার দীর্ঘ ও প্রায় আড়াই মিটার উচ্চতার এই বাঁধ খাগড়াছড়ি জেলার একমাত্র রাবার ড্যাম। সম্প্রতি বাঁধটি চালু হওয়ায় জেলার খাদ্য উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছেন কৃষিবিদেরা।
পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর এলাকায় নির্মিত এই রাবার ড্যাম দেখতে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন। এ কারণে বাঁধটির নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তদারকি ও পাহারা না থাকায় বর্তমানে এক রকম অরক্ষিত অবস্থায় আছে এটি। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী এটির ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব উপকারভোগী কৃষকদের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো বাঁধটি কৃষকদের বুঝিয়ে দেয়নি।
পানছড়ি উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, এই বাঁধ চালু হওয়ায় সেচের আওতায় এসেছে এক হাজার ২০০ হেক্টর জমি। ছোট কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে এর পাশাপাশি আরও ৩০০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। প্রকল্পের কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকায় এখন রাবার ড্যামটি উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এটি হস্তান্তর করা যাবে।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চেঙ্গি নদীর ওপর রাবার ড্যাম স্থাপনের ফলে নদীর পানি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাঁধের পাশে রয়েছে রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির কার্যালয়। তবে কার্যালয়টির কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। চলছে নদী তীরে কংক্রিটের ব্লক বসানোর কাজ।
রাবার ড্যাম প্রকল্পের জন্য সেতু নির্মাণ করা হলেও সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়নি। সড়কে ইট বসানোর কাজ চলছে। বাঁধ এলাকায় বেড়াতে এসেছেন কয়েক শ লোক। অনেকেই বাঁধের ওপরে উঠে ছবি তুলছিলেন। এ সময় বাঁধটির রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কাউকে দেখা যায়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায় (এলজিইডি), ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৩ সালের জুন মাসে। কিন্তু প্রকল্পটি গত ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরও বাঁধের বেশ কিছু কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে।
পানছড়ির পূর্ব শান্তিপুর এলাকার কৃষক কামিনী রঞ্জন চাকমা জমিতে বোরো ধানের বীজ বপন করেছেন। তিনি জানান, প্রতি বছর বোরো মৌসুমে সেচ সংকট দেখা দেয়। এ বছর থেকে রাবার ড্যামের কারণে পানির সংকট আর থাকবে না বলে তিনি আশা করছেন।
এদিকে এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী কৃষকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘চেঙ্গি নদী রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি’। এ সমিতির সভাপতি সুধাংশু বিকাশ চাকমা বলেন, ‘বাঁধটি চালু হলেও ব্যবস্থাপনার বিষয়টি এখনো সমিতির কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে বাঁধের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা এখনো কৃষকদের হাতে নেই। এরপরও বাঁধ এলাকায় গোসল, নদীতে নামা ও ছবি তোলার বিষয়ে দর্শনার্থীদের সতর্ক করে দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দিয়েছি আমরা।’