'জীবনের উত্সব' জাম্বালা

যোগ, সংগীত ও জীবন চৈতন্যের উত্সবে জাম্বালার কয়েকজন অংশগ্রহণকারী
যোগ, সংগীত ও জীবন চৈতন্যের উত্সবে জাম্বালার কয়েকজন অংশগ্রহণকারী

কে নেই সেখানে? বলা ভালো কারা যাননি! ভারতের নানা প্রান্তের মরমি সুফি-সাধকেরা, ইস্তাম্বুলের দরবেশ, তিব্বতের তান্ত্রিক সাধু, চীনের শাওলিন ভিক্ষু আর নানান দেশের যোগ গুরু ও সংগীতশিল্পীদের মহামিলনে সম্প্রতি জমজমাট এক উত্সবমুখর তীর্থই হয়ে উঠেছিল ভারতের গোয়ার অশ্বেম সমুদ্রসৈকতটি।

পানাজি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে গোয়ার তুলনামূলকভাবে কম কোলাহলের সৈকত অশ্বেমে ‘জাম্বালা’ নামের এ ‘যোগ, সংগীত ও জীবন চৈতন্যের উত্সব’ও ভারতে এই প্রথম। কিন্তু কখনো জপ-মন্ত্রের জলদ-গম্ভীর ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে, কখনো বাদ্যযন্ত্রের মূর্ছনায়, কখনো গীত-নৃত্যে পাগলপারা প্রাণ-কাড়া এমন সাধুসংঘই বসেছিল গোয়া সমুদ্রসৈকতে। দুই দিনের আসরটি ছিল এই সপ্তাহের শনি ও রোববার।

এখানে সমুদ্রসৈকতের পরিচিত হুল্লোড় নেই, নেই সুরার মাতলামি। চিত্কার করছেন না কেউ কিন্তু আছে প্রাণের উচ্ছ্বাস, যেন রহস্যময় এক ইন্দ্রজালে বাঁধা পড়ে আছেন সবাই। আয়োজকদের ভাষায়, এ আসর হলো জীবন নবায়নের উত্সব। মন আর শরীর এখানে আলাদা নয়, একাত্ম।

জাম্বালার আয়োজক সেভেন্টি ইভেন্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্টিন ডাকস্তা উত্ফুল্ল কণ্ঠে প্রথম আসরের সাফল্যের কথা জানান। তিনি আশাবাদী এ সাফল্যের হাত ধরেই গোয়ার সৈকতে ধারাবাহিকতা পাবে এ উত্সব।

ডাকস্তা বলেন, ‘জাম্বালা এমন একটি উত্সব, যেখানে ভারত ও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যোগ গুরু, আধ্যাত্মিক শিক্ষক, সাধক এবং উপশমকারীরা একত্র হয়েছেন। সংগীত, নৃত্য, আধ্যাত্মিকতা এবং সরাসরি বিনোদনের একটি বাছাইকৃত সমাবেশ এটি।’

যোগাসনে বসার জন্য মাদুর হাতে নারী-পুরুষেরা যাচ্ছেন এদিক-সেদিক, হালকা রঙের সব তাঁবুর কাপড় সৈকতের মৃদুমন্দ বাতাসে উড়ছে। আর সে রহস্যময় আলো-আঁধারির মধ্যে বাতাসে ভেসে আসছে মনোমুগ্ধকর বাজনার শব্দ। দুই দিনের জন্য অশ্বেম সৈকতের চেহারা এমনই পাল্টে গিয়েছিল।

ডাকস্তা জানিয়েছেন, ‘শান্তি ও স্বস্তির সন্ধানে আসা অভ্যাগতরা এখানে কয়েক স্তরের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে আছে পাঁচ ধরনের যোগসাধনা, সুফি নৃত্য, তান্ত্রিক উপশম, দেহ-মন-আত্মাকে জানা-বোঝার পাঠ, পাথর ও স্ফটিকের উপশম।’

দুই দিনের এ উত্সবে ধ্যান ও যোগ সাধনার বিভিন্ন পাঠ, জপ-মন্ত্র, যূথবদ্ধ ধ্যান ও মহাকাশ-বীক্ষণের ওপর বেশ কয়েকটি বিশেষ কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জাম্বালায় আয়েনগার স্কুল অব ইয়োগার শিক্ষকরা তো ছিলেনই, ছিলেন ভারতের দীপিকা মেহতা ও জাহাঙ্গীর পাখিওয়ালা, কানাডার ইয়ন ফিন, ক্যালিফোর্নিয়ার জেনেট স্টোন এবং সংগীতশিল্পী ম্যাডোনার সাবেক শিক্ষক ডানকান ওঙের মতো দুনিয়াজোড়া খ্যাতিমান সব যোগ গুরুও।

ভারতের ধর্মশালায় তিব্বতি ওয়ার্কস অ্যান্ড আর্কাইভসের পরিচালক ও দালাই লামার সাবেক সহকারী গেশে লাখদোর লা, সুফি নৃত্যশিল্পী জিয়া নাথ এবং আজমির দরগার চিশতি ফাউন্ডেশনের সাইয়েদ সালমান চিশতির মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি জাম্বালাকে অন্য মাত্রা জুগিয়েছে।