মনের জানালা

'বুঝতে পারছি না আমি কার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াব'

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

সমস্যা
আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। কিছুদিন হয় আমি মানসিকভাবে খুব অসুস্থ। আমি একটা বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক মেয়েকে পছন্দ করি, কিন্তু ওকে প্রপোজ করতে পারছি না। এখন হঠাৎ করে আবার আমার ক্লাসের আরেকজনকে পছন্দ হয়েছে। আমার মনে হয় সে–ও আমাকে পছন্দ করে। যেমন ক্লাসে আমি যখন ওর দিকে তাকাই, ও তখন হাসে। আবার যখন তাকাই না, ও তখন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আমি এটাই বুঝতে পারছি না যে আমি কার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াব! এ কারণে আমি কাউকে কিছু বলতে পারছি না। সামনে আবার এসএসসি পরীক্ষাও আছে। এখন যদি একটা নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি, তাহলে পরে আমার অনেক সমস্যা হবে; পরীক্ষার রেজাল্টও ভালো হবে না। আব্বু-আম্মু খুব মন খারাপ করবে। কিন্তু আমি যখন পড়তে বসি, তখন শুধু আমার কারও না কারও কথা মনে পড়ে! আর আমার সবকিছু ওলট–পালট হয়ে যায়। পড়াশোনা বাদে অন্য কিছু করতে গেলেও শুধু ওদেরই কথা মনে পড়ে। আবার মাঝে মাঝে স্বপ্নেও দেখি ওদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছে। তখন আর ঠিক থাকতে পারি না। মনে হয়, ওদের কাউকে না কাউকে প্রপোজ করি। আমি এখন কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ

তুমি এখন তিনটি মানসিক দ্বন্দ্বে রয়েছ। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কোন মেয়েটির সঙ্গে তুমি সম্পর্ক করবে; আর একটি হলো, ওদের কাউকে এখনই তোমার ভালো লাগার কথা বলবে কি না। সবচেয়ে বড় যে দ্বন্দ্বটি তা হচ্ছে, তুমি প্রেমে জড়িয়ে পড়লে তোমার বাবা-মায়ের প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না। এতগুলো দ্বন্দ্ব একসঙ্গে হওয়ার কারণে তুমি খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছ। যেহেতু তুমি দশম শ্রেণিতে পড়ছ, এই সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্কুল পেরিয়ে কলেজে ঢোকার আগের এই পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারলে তোমার মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে, তা তোমাকে কলেজেও ভালো করতে উত্সাহিত করবে। তোমাদের বয়সের ছেলেমেয়েদের যদি শৈশব থেকেই বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে সুস্থ বন্ধুত্ব তৈরি করতে সমাজ, পরিবার ও শিক্ষকেরা সহায়তা ও উত্সাহিত করতে পারতেন, তাহলে এই সংকটময় বয়সে এসে তোমরা বড় একটি পরীক্ষার আগে এই মানসিক ঝুঁকির মধ্যে পড়তে না। এ ছাড়া তোমাদের মনের কথাটি কীভাবে প্রকাশ করবে, সেই যোগাযোগের দক্ষতাটিও পরিবারে বা বিদ্যালয়ে কোথাও শেখানো হয় না। তুমি যদি অষ্টম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় মেয়েটির সঙ্গে শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্ক করতে পারতে, তাহলে ওকে একটি মানুষ হিসেবে জানার সুযোগ পেতে এবং তোমার পছন্দ-অপছন্দ ও রুচির সঙ্গে ওর ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের কতটুকু মিল রয়েছে, সেটিও বোঝার একটি চমত্কার সুযোগ হতো। এখন যে মেয়েটিকে তোমার ভালো লাগছে, তাকেও যদি তুমি সহপাঠী ও বন্ধু হিসেবে প্রথমে গ্রহণ করে নিতে পারো, তাহলে ভালো হয়। তার সঙ্গে একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে থাকা যায় কি না, তা–ও তুমি তখন বুঝতে পারবে। যেহেতু তোমাদের বয়সের অনেকের ভাবের আদান-প্রদানের দক্ষতা ঠিকমতো গড়ে ওঠেনি, সে কারণে প্রথমেই প্রেমের সম্পর্ক করতে গিয়ে অনেকের মধ্যে এত বেশি মনোমালিন্য ও তর্কবিতর্ক হয় যে লেখাপড়া ও জীবনধারার ওপরে এর একটি অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কাউন্সেলিংয়ের অভিজ্ঞতায় আমাকে এই অভিজ্ঞতাগুলো শুনতে হয়। আমার অনুরোধ থাকবে, তুমি অন্তত তোমার বর্তমান সহপাঠীকে তোমার মতোই অন্য একটি মানুষ হিসেবে দেখে ওর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলো। এখনই কোনো সিরিয়াস প্রেমের সম্পর্কে না গিয়ে সহপাঠী হিসেবে দুজনই দুজনকে লেখাপড়ার বিষয়ে সাহায্য করো। পরস্পরকে উত্সাহ দাও ভালোভাবে লেখাপড়ায় মনঃসংযোগ করতে। এতে করে ওই মেয়েটিও তার বাবা-মায়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। এরপর আরও একটু পরিণত বয়সে গিয়েও যদি তোমার ও ওর মনে হয় যে তোমরা বন্ধুত্বের সম্পর্কে অন্য একটি মাত্রা যোগ করতে চাও, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের কথা চিন্তা কোরো, কেমন?


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.