এখন আমের মৌসুম। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে, ট্রেনে আম আসছে ঢাকায়। তবে এর মধ্যে ঢাকায় এক ছাদবাগানে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাড্ডার নূরের চালা এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলামের ছাদবাগানে ঝুলে আছে শত শত আম। আর এসব আম বাজারের যেকোনো আমকে টেক্কা দেওয়ার মতোই। স্বাদ–গন্ধও অসাধারণ।
পেশায় ব্যবসায়ী সফিকুল নিজ বাসার ছাদে বাহারি ফুল আর ফলের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন চমৎকার ছাদবাগান। সে বাগানেই এখন রাজত্ব করছে হরেক রঙের নানা জাতের আম।
মৌসুমি থেকে বারোমাসি—সব রকম আমের গাছ আছে সফিকুলের সংগ্রহে। তাঁর কথা, ‘বছরের যখনই আসবেন, আমার ছাদে আমের দেখা পাবেন। বারোমাসি মালয়েশিয়ান লুবনা আম থেকে থাই কাটিমন—সবই আছে। তাই ফল আসে সারা বছর। আমের এই ভর মৌসুমে গাছভর্তি পাকা, পরিপক্ব আম যেমন আছে, কোনো ডালে মুকুল বা গুটি আমও আছে। আছে মহাচানক, রঙিন আমেরিকান পালমার, থাই নামডকমাই, থাই ব্যানানা আম, হাঁড়িভাঙা, কিউজাই, পুনাই, চেন্নাইসহ অনেক জাতের আম।
ছাদবাগানের ক্ষেত্রে কেউ পছন্দ করেন ফুল গাছ, কেউ ফলের। সফিকুল ইসলামের পছন্দ দুটোই। তাই তাঁর বাগানে ফলের গাছের পাশাপাশি ফুল গাছও আছে। শীত, বসন্তে বাগান ছেয়ে থাকে নানা রকম ফুলে। আর ফলের মধ্যে বেশি আছে আমগাছ। নিকটবর্তী নার্সারি থেকে শুরু করে বৃক্ষমেলা, এমনকি দেশের যে প্রান্তে ভালো আমের খোঁজ পেয়েছেন, সেখান থেকে চারা এনেছেন নিজে গিয়ে।
বারোমাসি লুবনা আমের গাছটা দেখিয়ে জানালেন, সেটা কুমিল্লার কোটবাড়ী থেকে আনা। ছাদে সে গাছটি এখন আমে ভরা। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গির সীমান্তবর্তী মন্ডুমালা গ্রামে বিশাল এলাকাজুড়ে ২০০ বছরের পুরোনো যে সূর্যপুরী আমগাছটি আছে, সেই গাছের কলম করা চারাও আছে তাঁর ছাদবাগানে।
প্রতি মৌসুমে তিন থেকে চার মণ আম হয় সফিকুল ইসলামের ছাদে। যেহেতু একবারে সব আম পাড়া হয় না, তাই কড়ায়গণ্ডায় হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে জাতভেদে এই বাগানের একেকটি আমের ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত। এ বছর ডাল ছাঁটাইয়ের কারণে আমের ফলন অন্য বছরের তুলনায় কম। তারপরও দুই মণের কম হবে না। এখনো গাছে এক মণের মতো আম ঝুলছে।
পারিবারিক যেকোনো আয়োজন থেকে শুরু করে বন্ধুদের আড্ডা, সবই হয় সফিকুলের ছাদবাগানে। আম তো বটেই, বাগানের যেকোনো ফল খাওয়ার জন্য রীতিমতো উৎসবের আসরই বসে। বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে ডেকে আম ছাড়াও অন্য ফল খাওয়ান নিয়মিত। সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুরা এলে বাগানের আম কেটে খাওয়ানোর মতো আনন্দ আর কিছুতে হয় না।’
রোদ–ঝড়–বৃষ্টি আর পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচাতে প্রতিটি আম ব্যাগিং করা হয়। আম বড় হলে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টও করেন, কিন্তু বন্ধু–স্বজনেরা না এলে সেটা পাড়া হয় না। বন্ধুদের কেউ নির্দিষ্ট দিনে আসতে না পারলে কুরিয়ারও করেন। অনেক সময় দেখা যায়, ফলের চেয়ে পাঠানোর খরচ কয়েক গুণ হয়ে যাচ্ছে; তারপরও নিজের গাছের ফল স্বজনদের পাঠিয়ে তৃপ্তি পান এই ছাদবাগানি।
ছাদবাগানে আমগাছ রাখতে চাইলে সফিকুল ইসলামের পরামর্শ—
প্রথমেই বারোমাসি আমগাছ বেছে নিন, যাতে সারা বছর কোনো না কোনো গাছে আম থাকে।
ছাদে রাখুন আম্রপালি, থাই ব্যানানা, হাঁড়িভাঙা, হিমসাগরের মতো মৌসুমি আমও।
এরপর যোগ করুন গৌড়মতী ও বারি ৪। এসব জাত কিছুটা দেরিতে ফল দেয়। মানে অন্যান্য আম ফুরিয়ে এলে, এসব আম পাকতে শুরু করে।
বিশ্বস্ত নার্সারি ও বৃক্ষমেলা থেকে ছাদবাগানের উপযোগী সঠিক জাতের চারা বেছে নিন।
মাটিতে পর্যাপ্ত জৈব সার দিন।
ক্ষতিকর রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করুন।
২৫ জুন থেকে ঢাকার আগারগাঁও বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠে শুরু হচ্ছে জাতীয় বৃক্ষমেলা। আমের চারা সংগ্রহ করতে পারেন সেখান থেকেও।