সকাল হলো দিনের ভিত্তি। ভালো সকাল আপনার শক্তি, মেজাজ এবং কাজের দক্ষতা বাড়ায়। কিন্তু কিছু অভ্যাস দিন শুরু হওয়ার আগেই আপনার ক্ষতি করে। এসব ছোট ছোট ভুল আপনার স্বাস্থ্য, সুখ এবং উৎপাদনশীলতার জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এখানে সকালে করা উচিত নয়, এমন ১০টি অভ্যাসের কথা রইল, সঙ্গে একটি বোনাস রুটিন, যা আপনার দিনকে সুন্দর করে তুলবে।
চোখ খুলেই ফোনে ঝাঁপিয়ে পড়া মানে সরাসরি স্ট্রেসের মধ্যে ঝাঁপ দেওয়া। সামাজিক মাধ্যমের নোটিফিকেশন, অফিসের ই–মেইল বা অহেতুক রিল মানসিক চাপ বাড়ায় এবং চোখের ক্ষতি করে। এর বদলে রাতে ফোন ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোডে রাখুন এবং সকালে ১৫-৩০ মিনিট ফোন ছাড়া সময় কাটান। শান্তভাবে দিন শুরু করুন।
অ্যালার্ম স্নুজ করা সহজ, কিন্তু এটা আপনার মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে। ফলে ঘুম ভাঙার পরও ‘স্লিপ ইনার্শিয়া’ বা ক্লান্তি থেকে যায়, যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে পারে। প্রথম অ্যালার্মেই উঠে পড়ুন।
সাত-আট ঘণ্টা ঘুমের পর আপনার শরীর পানিশূন্য থাকে। পানি না খেলে ক্লান্তি ও মাথা ঝিমঝিম করে। সকালে উঠেই এক গ্লাস পানি খান। লেবুর রস আর সামান্য লবণ মিশিয়ে সাধারণ পানিকে ইলেকট্রোলাইট বানিয়েও খেয়ে ফেলতে পারেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি খাওয়া অনেকের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। কিন্তু খালি পেটে চা বা কফি খেলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বাড়ে, রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং পেটে সমস্যা হতে পারে। আগে ভালোভাবে নাশতা করুন, তারপর নাহয় চা–কফির কাপে চুমুক দিন।
যাঁরা দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন, তাঁদের অনেকে সকালে নাশতা না খেয়ে একবারে ‘ব্রাঞ্চ’ বা সকাল ও দুপুরের খাবার মিলিয়ে খান। ব্যস্ততা বা ওজন কমানোর কথা ভেবে নাশতা বাদ দেওয়া মোটেও ভালো অভ্যাস না। এটা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, শক্তি কমায় এবং মেজাজের ওপর ফেলে নেতিবাচক প্রভাব। প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও কার্ব–সমৃদ্ধ সাধারণ নাশতা খান, যেমন দইয়ের সঙ্গে ফল বা ডিমের সঙ্গে টোস্ট।
সকালে দুর্ঘটনার খবর বা সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক কনটেন্ট মনকে চাপে ফেলে। এর বদলে বই পড়ুন, গান শুনুন, দেখতে হলে ভালো ভিডিওই দেখুন। দিনের পরের অংশ রাখুন খবর দেখার জন্য।
বিছানা থেকে সোজা কাজের ডেস্কে যাওয়া শরীর ও মনের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। ৫-১০ মিনিট স্ট্রেচিং, হাঁটা বা যোগাসন রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মেজাজ ভালো রাখে।
সকালে একসঙ্গে একাধিক কাজ করলে মনোযোগে চিড় ধরে এবং চাপ বাড়ে। একবারে একটি কাজ করুন। বিছানা গোছানো বা দিনের পরিকল্পনা করুন শুরুতেই। এতে দিনটা শুরু হবে শান্তভাবে।
শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে। বক্স ব্রিদিং করতে পারেন। চার সেকেন্ড শ্বাস নিন, ধরে রাখুন, ছাড়ুন আবার ধরে রাখুন। কিংবা তিনবার গভীর শ্বাস নিন। এতেও মনটা সতেজ হবে।
ই–মেইলে, সামাজিক মাধ্যমে বা অন্যান্য বিষয়ে সকালে তাড়াহুড়া করে প্রতিক্রিয়া দেখালে পুরো দিন মাটি হতে পারে। তাই চট করে কোথাও প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। আগে ভাবুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
আপনারও যদি এসব অভ্যাস থাকে, তাহলে আতঙ্কিত হবেন না। প্রতিদিন একটি করে অভ্যাস বদলান। অ্যালার্ম স্নুজ করে আবার ঘুমানো বন্ধ করুন, পানি পান করুন বা ফোন এড়িয়ে চলুন। সকালটা আপনার দিনের ভিত গড়ে দেয়। আর বাকিটা দিন আপনার জীবন গড়ে তোলে। তাই ছোট ছোট পরিবর্তন শুরু করুন আজই।
সূত্র: প্লামহেলদিফাইন ডটকম