নানা কারণেই অনেকে মাছ খেতে চান না। তবে মাছ দারুণ পুষ্টিকর খাবার। মাছে রয়েছে আমিষ, ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় বহু খনিজ উপাদান। একেবারেই মাছ না খেলে আদতে কি দেহের কোনো ক্ষতি হয়?
মাছের পুষ্টি পেতে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কেউ কাঁটার ভয়ে মাছ খান না, কারও কাছে মাছ বিস্বাদ, কেউ বলেন ‘গন্ধ লাগে’, কেউ আবার ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষভোজী হওয়ার কারণে মাছ রাখেন না খাদ্যতালিকায়।
মাছ না খেলে কী হয়, সে সম্পর্কে জানালেন টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান।
যেকোনো প্রাণিজ আমিষই প্রথম শ্রেণির আমিষ। অর্থাৎ এতে দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব অ্যামিনো অ্যাসিড পাবেন আপনি। মাছের ক্ষেত্রেও বিষয়টি তা–ই।
এ ছাড়া মাছে পাবেন ভিটামিন বি এবং আয়রন, জিংক, আয়োডিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সেলেনিয়ামের মতো খনিজ উপাদান। ছোট মাছে ভিটামিন এই বেশি থাকে। কাঁটাসহ ছোট মাছ খাওয়া হলে তা থেকে আপনি পাবেন ক্যালসিয়াম।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো—মাছের তেলে আপনি পাবেন ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে এ উপাদানটি খুব প্রয়োজন। বাড়ন্ত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই উপাদান।
ডিএইচএ এবং ইপিএ আমাদের দেহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ইলিশ এবং সামুদ্রিক মাছে এই দুটি উপাদান থাকে সবচেয়ে বেশি।
রক্তের ভালো চর্বির মাত্রা বাড়াতে আর খারাপ চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাছের তেল দারুণ উপকারী। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ এবং স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে মাছের তেল খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন, ছোট এবং মাঝারি আকারের মাছের তেল উপকারী। খুব বড় মাছ, যেগুলোতে চর্বির মতো জমাট তেলতেলে অংশ থাকে, সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
মাছ না খেলে আপনাকে এসব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে হবে বিকল্প কোনো উৎস থেকে। নইলে আপনি এক বা একাধিক পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিতে ভুগতে পারেন। পর্যাপ্ত ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ না করলে আপনি দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগের ঝুঁকিতে পড়বেন।
তবে ব্যাপারটা এমনও নয় যে কেবল মাছ না খাওয়ার কারণেই আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। মূল বিষয়টা হলো, দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে হবে। তাই আপনি যদি মাছ না খান, তাহলে অন্যান্য খাবারের মাধ্যমে মাছের পুষ্টি পূরণ করতে হবে আপনাকে।
মাছের পরিবর্তে যদি কেউ মাংস খান, তাহলে মাছের অধিকাংশ পুষ্টি উপাদানই পেয়ে যাবেন তিনি। তবে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ হবে না। আর লাল মাংস খেলে উল্টো বাড়বে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
ডিম ও দুধ থেকেও আপনি মাছের পুষ্টির অনেকটাই পেতে পারেন।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা মেটাতে উদ্ভিজ্জ উপকরণ কাজে আসে। আপনি রোজ বাদাম খেতে পারেন। নানা ধরনের বাদামেই আছে এই অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান। আখরোটেও তা পাবেন প্রচুর পরিমাণে।
তিসির তেল আর ক্যানোলা তেলেও পাবেন ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। জলপাই তেলেও এ উপাদানটি আছে, তবে তুলনামূলক কম। সয়াবিন তেলেও পাবেন কিছুটা।
কৃত্রিমভাবে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যোগ করা হয়েছে এমন খাবার; অর্থাৎ ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ফর্টিফায়েড খাবারও গ্রহণ করতে পারেন।
যাঁরা মাছ খেতে পছন্দ করেন না বা যাঁদের মাছের গন্ধ পছন্দ নয়, তাঁরা একটু ভিন্নভাবে রান্না করে দেখতে পারেন। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এমন পদ বানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
ফিশ ফিঙ্গার, ফিশ ফিলে মুখরোচক পদ। মাছ গ্রিল করতে পারেন। মাছ দিয়ে কাটলেট, চপ, স্যান্ডউইচ প্রভৃতি তৈরি করতে পারেন। লেবুর রস, সিরকা বা সুগন্ধি মসলা ব্যবহার করতে পারেন মাছের পদে।