শিঙাড়া বিক্রি করে মাসে আয় ৭–৮ লাখ টাকা, কর্মসংস্থান হয়েছে ১৭ জনের

আনিস ভাইয়ের নাগা শিঙাড়ার দোকানটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৭ জনের
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

মিরপুর ডিওএইচএসে হোস্টেলে থাকার সুবাদে সন্ধ্যায় চায়ের আড্ডায় প্রায়ই যাওয়া হয় ডিওএইচএসের পাশের সাগুফতায়। ছোট ছোট ফুডকার্ট আর দোকান মিলিয়ে সাগুফতায় এখন প্রায় সব ধরনের স্ট্রিট ফুডই পাওয়া যায়। সাগুফতায় গেলে প্রায় প্রতিদিনই খাওয়া হয় ‘আনিস ভাইয়ের নাগা শিঙাড়া’ নামের ছোট্ট এক দোকানের শিঙাড়া।

এই দোকানের বিশেষত্ব হলো শিঙাড়া ছাড়াও সসে দেওয়া হয় নাগা মরিচ। দোকানের সামনেই বড় কড়াইয়ে ভাজা হয় শিঙাড়া। সেই দোকানে একদিন খেতে গিয়ে বান্ধবী নিশা বলল, দোকানটা ছোট হলে কী হবে, সে গুনে দেখেছে এই দোকানে কম করে হলেও ১৬ থেকে ১৭ জন কাজ করছেন। সেখান থেকেই কৌতূহল জাগল।

প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার শিঙাড়া তৈরি হয়

খোঁজ করতেই দেখা মিলল দোকানের কর্তার। দোকানের এক পাশে দাঁড়িয়ে শিঙাড়া ভাজছিলেন। কথা বলে জানলাম তাঁর নাম মো. আনিস। আগে একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করতেন। ২০২৩ সালে সেই কাজ ছেড়ে মিরাজ নামের এক বন্ধুকে নিয়ে ছোট্ট একটি ভ্যানে শিঙাড়া বিক্রি শুরু করেন। ছয় থেকে সাত মাস পর শিঙাড়া বিক্রির টাকা দিয়ে ভাড়া নেন এই দোকান। দোকানে প্রথমে সকালের নাশতা বিক্রি করতেন। এরপর বিক্রি করতে শুরু করেন দুপুরের খাবার। পাশাপাশি শিঙাড়া বিক্রিও চলত। সে সময় দিনে দুই থেকে তিন হাজার টাকার মতো আয় হতো।

ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন ক্রেতারা অন্যান্য খাবারের চেয়ে শিঙাড়াটাই বেশি পছন্দ করছেন। প্রথম দিকে শিঙাড়ার পুর তৈরি করা থেকে শুরু করে ভাজা, সবকিছুই নিজ হাতে করতেন আনিস। এরপর কাজের চাপ বাড়তে থাকলে একজন, দুজন করে কর্মচারী নিতে থাকেন। তাতেও যখন কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন যোগ করতে থাকেন আরও কর্মচারী।

এভাবে এই পর্যন্ত তিনি কাজে নিয়েছেন তাঁর এলাকার মোট ১৭ জনকে। তাঁরা কেউ কেউ দোকানের পেছনের রান্নাঘরে শিঙাড়ার পুর তৈরি করেন, কেউ আটার খামি বানান, কেউ শিঙাড়ার আকৃতি তৈরি করেন, কেউ ভাজেন, কেউ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতাকে কাগজের ঠোঙায় ভরে দেন শিঙাড়া আবার কেউ খাবার পরিবেশন করেন দোকানের ভেতরে খেতে বসা ক্রেতাদের কাছে।

এই দোকান থেকে মাসে সাত থেকে আট লাখ টাকার মতো আয় হয়

এই দোকানে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার শিঙাড়া তৈরি হয়, যা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় প্রায় ৭০ কেজি আলু ও প্রায় ৮০ কেজি আটা। শিঙাড়ার দাম ৩ টাকা করে। দোকান থেকে আয় কেমন হয় সে প্রসঙ্গে দোকানি আনিস বলেন, ‘এই দোকান থেকে মাসে সাত থেকে আট লাখ টাকার মতো আয় হয়, যার একটা অংশ চলে যায় কর্মচারীদের বেতনে। সব মিলিয়ে মাস শেষে দুই থেকে তিন লাখ টাকার মতো লাভ থাকে।’

মো. আনিস বলেন, এখন আর অন্যের অধীনে কাজ করতে হয় না; বরং তাঁর এই দোকান থেকে ১৭টি পরিবার চলে, এতেই তিনি সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতে দোকানের আরও শাখা খোলার ইচ্ছা আছে। আশপাশের এলাকা ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসেন এই শিঙাড়া খেতে। ধানমন্ডি থেকে আসা কলেজপড়ুয়া শামস জানান, একদিন বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসে এই নাগা শিঙাড়া খেয়ে খুব ভালো লেগেছিল। তাই আজ পরিবারকে নিয়ে এসেছেন।

ছোট্ট দোকানটির ভেতরে একসঙ্গে বড়জোর ১২ জন বসে খেতে পারবেন। এ ছাড়া দোকানের বাইরেও আছে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে শিঙাড়ার এই দোকান।