জীবনে কখনো কল্পনা করিনি, মেসিকে এত কাছ থেকে দেখব

কাতার বিশ্বকাপে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধু আবজল আহমেদ। গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জে। দুই বছর ধরে প্রথম আলো বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত। ২০২১ সালে কাতার বন্ধুসভা গঠনের পর সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন। ফোনে বিশ্বকাপে কাজের অভিজ্ঞতা শোনালেন তিনি।

আবজল আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

স্টেডিয়ামে থাকলেও সবাই খেলা দেখার সুযোগ পান না। আমার অবস্থাও তেমন। এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছি। সব মিলিয়ে সাতটি ম্যাচে আমার দায়িত্ব। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখতে পারিনি। এখানে আমার কাজ মূলত দর্শক ব্যবস্থাপনা দলে।

কাজের বাইরে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি করে ম্যাচ দেখার সুযোগ দিচ্ছে ফিফা। মেক্সিকো বনাম পোল্যান্ডের ম্যাচটি দেখেছি। জীবনে প্রথমবার স্টেডিয়ামে বসে সরাসরি বিশ্বকাপের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা হলো। আমি মেক্সিকোর সমর্থন করেছি। দলটির গোলরক্ষক গিয়ের্মো ওচোয়া যখন রবার্ট লেভানডফস্কির পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিলেন, পুরো স্টেডিয়ামে সে কী উল্লাস!

ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রেমিক আমি। জীবনের তাগিদে একটা সময় কাতারে চলে আসি। তবে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা কখনোই কমেনি। প্রবাসে আসার পর কাজের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই ফুটবল খেলি। এখানে বিভিন্ন লিগ বা টুর্নামেন্ট হলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্মী দরকার হয়। একবার বিজ্ঞপ্তি দেখে অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ফেলি। তারপর সাক্ষাৎকার ও প্রশিক্ষণ শেষে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই।

প্রথমে আমি কাতারের সুপ্রিম কমিটির সঙ্গে যুক্ত হই। ওদের কয়েকটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। পরে ফিফাতেও সুযোগ হয়। গত বছর ফিফা আরব কাপে কাজ করি।

বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের ২০ হাজার মানুষ বিশ্বকাপে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে আমিও একজন। নিজেকে যখন একজন বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিই, তখন অনেক গর্ব হয়। বাংলাদেশি হিসেবে এত বড় প্ল্যাটফর্মে এসে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করাটা অনেক বড় অর্জন। পাশাপাশি এখানে যে অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সেগুলো ভিডিও আকারে শখের বশে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছি। এরই মধ্যে ভিডিওগুলো লাখো মানুষ দেখেছেন।

আমার প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ভক্ত। জীবনে কখনো কল্পনা করিনি, মেসিকে এত কাছ থেকে দেখব। যাঁকে আমি সব সময় টেলিভিশনে দেখেছি, তাঁকে এখন সরাসরি সামনে দেখতে পারছি, এটা এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।

কাতার বিশ্বকাপে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য এবার চার লাখের বেশি আবেদন জমা পড়ে। সেখান থেকে যাচাই–বাছাই শেষে ২০ হাজার জনকে নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে ১৬ হাজার বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন এবং ৪ হাজার স্থানীয়। আমি কাতারে আগে থেকেই থাকায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক হই। এখানে ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। কর্তৃপক্ষ যেভাবে আমাদের যত্ন নিচ্ছে, সম্মান দিচ্ছে, এটা সবচেয়ে বড় বিষয়। ফিফা এবং কাতার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সুপ্রিম কমিটি এবং যাঁরা খেলাধুলা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁরা সব সময় এসে আমাদের সার্বিক খোঁজখবর নেন। আমরা যাঁরা এখানে প্রবাসী, সবাই কোনো না কোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য ওই কোম্পানি থেকে রিলিজ লেটারও দিচ্ছে কাতার সরকার।

স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য ফিফার বিশেষ ইউনিফর্ম, যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে। আমরা যখন মাঠে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করি, তখন পাঁচ তারকা মানের খাবার দেওয়া হয়। আমাদের যেকোনো সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার জন্য জন্য আলাদা টিম আছে। যারা অন্য দেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের থাকার জন্য অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়া হয়েছে। তবে আমার যেহেতু থাকার ব্যবস্থা আছে, তাই এই সুযোগ আমি পাইনি। অবশ্য বিনা মূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে।

লেখাপড়ার মাধ্যমে আমরা সবকিছু শিখতে পারি না। বিশেষ করে বাস্তব জীবনের জ্ঞান। সেটা আমরা স্বেচ্ছাসেবামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখতে পারি। আমার ক্ষেত্রে যেমন বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও তাঁদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারছি। এটা ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক কাজে লাগবে।