মেহেদির নকশায় প্রকাশ পায় উৎসবের আনন্দ
মেহেদির নকশায় প্রকাশ পায় উৎসবের আনন্দ

সাজ

চাঁদরাতে মেহেদির সাজ

এক লাইন, কবজি কিংবা কনুই পর্যন্ত মেহেদিতে নানা নকশার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে উৎসবমুখর পরিবেশ।

বাড়িতে হাতে বেটে মেহেদি লাগানোর চল এখন আর নেই। হাত রাঙানোর জন্য মেহেদির কোনই এখন ভরসা। উপলক্ষ যা-ই হোক না কেন, মেহেদির লাল নকশা প্রকাশ করে আনন্দ। এখনো ঈদের আগের রাত মেহেদির জন্য বরাদ্দ। করোনা-পরবর্তী সময়ে এবার একটু জমকালোভাবেই পালন করা হবে ঈদ। এক লাইন, কবজি কিংবা কনুই পর্যন্ত মেহেদিতে নানা নকশার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে উৎসবমুখর পরিবেশ।

কোন মেহেদি দিয়েই নকশা দেওয়া হয় মূলত

কিশোরী ও তরুণীদের পাশাপাশি অনেক শিশুও মেহেদি দিয়ে থাকে। ছোটদের হাতে মেহেদির নকশা হতে হবে ছিমছাম, গোছানো। মেহেদি লাগানোর আগে ত্বকের জন্য তা উপযুক্ত কি না, এই বিষয়ে জেনে নেওয়াটাও জরুরি, জানালেন মেহেদিশিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাজারে দুই ধরনের মেহেদি পাওয়া যাচ্ছে—ইনস্ট্যান্ট ও প্রাকৃতিক বা অর্গানিক। ইনস্ট্যান্ট মেহেদি ব্যবহারের আগে ভালোভাবে বুঝে নিন, ত্বকে ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কি না। ইনস্ট্যান্ট মেহেদিতে ৫ থেকে ১০ মিনিটে রং আসে এবং প্রতি ধোয়াতে রং কমতে থাকে। আর পাতার পাউডার থেকে তৈরি হয় সম্পূর্ণ অর্গানিক মেহেদি। অর্গানিক মেহেদিতে রং গাঢ় হয় ধীরে ধীরে, রং আসতে সময় লাগে ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা। এই মেহেদিতে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার থাকে না, তাই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়। ঈদ, বিয়েসহ যেকোনো উৎসবে অর্গানিক মেহেদি ব্যবহার করতে পারলে ভালো।

রং আসতে সময় লাগে ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা

রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বললেন, এই রং স্থায়ী হয় বেশি দিন। মেহেদিপাতার রস ত্বকের কোষগুলোকেও সতেজ রাখে। ফলে চামড়া মরে উঠে যায় না। ৮ থেকে ১০ দিনের আগে অর্গানিক মেহেদির রং ফ্যাকাশে হয় না। রং উঠে যাওয়ার পরও ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে। যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল এবং অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য অর্গানিক মেহেদি ব্যবহার করা ভালো। অন্যদিকে ইনস্ট্যান্ট মেহেদিতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। তাই এটা ব্যবহার না করা ভালো।

এই ঈদে ঘন ও মোটা কারুকাজের সঙ্গে অ্যারাবিক, মন্ডালা প্যাটার্ন বা ফুলের নকশায় দেখা যাবে দারুণ সব কাজ। পাতার নকশার সঙ্গে ক্যালিগ্রাফি, চরকা, কলকা, ময়ূর, জ্যামিতিক মোটিফসহ নানা নামের নকশা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পেশাদার মেহেদি নকশাকাররা। তরুণীদের আগ্রহ কবজির নিচ থেকে বৃত্তাকারে প্যাঁচানো নকশা। অনেকের আবার যেকোনো একটি আঙুল ধরে পছন্দমতো বাড়িয়ে কবজি পর্যন্ত নকশা পছন্দ।

মেহেদি দেওয়ার আগে

মেহেদি হাতে দিয়ে রাখতে হবে অনেকক্ষন

মেহেদি লাগানোর আগে ভারী কোনো খাবার কিংবা পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন। মেহেদি লাগানোর আগে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। মলম, ক্রিম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। নকশাকারকে দিয়ে নকশা করাতে চাইলে নিজের পছন্দ সম্পর্কে তাঁকে স্পষ্ট ধারণা দিন। মেহেদি লাগানোর সময় টিস্যু, হালকা সুতি কাপড়, টুথপিক বা আলপিন সঙ্গে রাখুন। হাতে ওয়াক্স করার কমপক্ষে এক দিন পর মেহেদি লাগানো ভালো। মেহেদি দেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন, যেন অতিরিক্ত নড়াচড়ার কারণে মেহেদির নকশা নষ্ট না হয়ে যায়।

মেহেদি দেওয়ার পরে

মেহেদি দেওয়ার পর শুকনা নকশার ওপর লেবু, চিনির ঘন সিরাপ ব্যবহার করতে পারেন। এতে রং গাঢ় হবে এবং শুষ্কতা থেকে হাত রক্ষা পাবে। এ ক্ষেত্রে লেবু, চিনির ঘন সিরাপটি তুলা দিয়ে আলতো করে চেপে চেপে দিন। খেয়াল রাখবেন, যাতে পুরো নকশায় রসটি ভালোভাবে লাগে এবং নকশাটি উঠে না যায়। ৮ থেকে ১০টি লবঙ্গ ঘিতে পুড়িয়ে হাতে ভাপ নিলেও রং গাঢ় এবং স্থায়ী হয়।

মেহেদি তুলে ফেলার পর

অর্গানিক মেহেদি বাড়িতেও বানাতে পারবেন

হাত থেকে মেহেদি তুলে শুকনা হাতে শর্ষের তেল বা ভিক্স ব্যবহার করলে রং গাঢ় হয়। অর্গানিক মেহেদির ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা হাতে পানি না লাগানোই ভালো। কারণ, পানির কারণে রং হালকা হয়। ইনস্ট্যান্ট মেহেদি দেওয়ার পর অবশ্যই ভালোভাবে ঘষে হাত পরিষ্কার করবেন। খেয়াল রাখুন, যেন রাসায়নিক মেহেদি দেওয়া হাতে লেগে না থাকে। তাড়াতাড়ি রং উঠিয়ে ফেলতে চাইলে হাতের ওই অংশটুকুতে পেস্ট লাগিয়ে শুকানোর পর ঘষে তুলে ফেলুন। সঙ্গে লেবু বা কাঁচা হলুদ দিয়েও ঘষে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মাত্রাতিরিক্ত যেন না হয়ে যায়। এতে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

বাসায় তৈরি করে নিতে পারেন

এই ঈদে চাইলে নিজেই বাসায় মেহেদি বানিয়ে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভালো মানের মেহেদিগুঁড়া, এসেনশিয়াল অয়েল, লেবু ও চিনি মিশিয়ে নিজেই মেহেদির পেস্ট বানিয়ে ফেলতে পারবেন। পছন্দমতো নকশা করে নিন এবং উৎসবকে রাঙিয়ে তুলুন।