চেহারার সৌন্দর্য আর পরিচ্ছন্নতা নষ্ট করতে ব্ল্যাকহেডের ‘জুড়ি মেলা ভার’! এই ছোট ছোট ব্ল্যাকহেড দেখা যায় মূলত আমাদের নাক, নাকের আশপাশ, থুতনি ও কপালে। বিশেষ করে নাকের ব্ল্যাকহেডের সমস্যায় পড়েন বেশির ভাগ মানুষ। একবার যদি ব্ল্যাকহেড জন্মায়, তাহলে সহজে দূর হতে চায় না। নিয়মিত পারলার বা সেলুনে গিয়ে ব্ল্যাকহেড তুলে আসা বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। আজ থাকছে ব্ল্যাকহেড দূর করার কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি। এসব পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি ব্যয়বহুল পারলার ট্রিটমেন্ট, কড়া ফেশিয়াল স্ক্র্যাবের ব্যবহার কিংবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খোঁটাখুঁটি ছাড়াই ব্ল্যাকহেড নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
যত্নের শুরু হোক মুখ নিয়মিত পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে। আপনার ত্বকের সঙ্গে মানানসই এবং মুখের ত্বকের প্রতি কোমল একটি ফেসওয়াশ বেছে নিন। আপনার ত্বক তৈলাক্ত হলে কিংবা আপনি ব্রণের সমস্যায় ভুগলে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। এসব ফেসওয়াশ আপনার ত্বকের লোপকূপে জমাট বেঁধে থাকা ময়লাগুলো ভেঙে ফেলে এবং ত্বক পরিষ্কার করে। প্রতিদিন দুবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। এর বেশি না, কমও না। মুখ অতিরিক্ত ধোয়া ও পরিষ্কার করার কারণে মুখের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে মুখ থেকে আরও বেশি তেল বের হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এতে কোনো উপকার নেই, অপকারই হবে শুধু।
মুখের লোককূপগুলো উন্মুক্ত করে জমে থাকা ময়লাগুলো শিথিল করতে চান? তাহলে নিয়মিত আপনার মুখে গরম পানি ভাপ বা স্টিম দিন। অর্থাৎ মুখকে জলীয়বাষ্পের সরাসরি সংস্পর্শে আসতে দিন।
পানি ফুটিয়ে গরম অবস্থাতেই একটি বাটিতে ঢালুন।
মাথায় একটি তোয়ালে জড়িয়ে নিন।
গরম পানিপূর্ণ বাটির সামনে ঝুঁকে বসুন। মুখটা বাটির খুব বেশি কাছে নেবেন না। ৫-১০ মিনিট এভাবে আপনার মুখকে জলীয়বাষ্পের সংস্পর্শে রাখুন।
পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ফেলুন।
ক্লে মাস্ক তেল, ময়লা এবং ব্ল্যাকহেড সৃষ্টিকারী অন্য উপাদানগুলোকে চুম্বকের মতো টেনে নেয়। সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ক্লে মাস্ক ব্যবহার করুন। মুখে মাস্ক মেখে শুকাতে দিন। তারপর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনার মুখের লোমকূপগুলোকে ছোট দেখাবে এবং ত্বক আরও সতেজ হবে।
এক্সফলিয়েশন বা স্ক্রাবিং আপনার ত্বককে রাখে মসৃণ এবং ব্ল্যাকহেডমুক্ত। তবে অতিরিক্ত স্ক্রাব করবেন না। কড়া উপদানে তৈরি স্ক্রাব এড়িয়ে চলুন। এএইচএ (যেমন গ্লাইকলিক অ্যাসিড) কিংবা বিএইচএ (যেমন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড) যুক্ত রাসায়নিক এক্সফলিয়েন্ট বেছে নিন। এসব আপনার ত্বকের লোমকূপের গভীরে প্রবেশ করবে এবং ত্বকের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পরিষ্কার করবে। সপ্তাহে এক বা দুই দিন ব্যবহার করে দেখুন আপনার ত্বক কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়।
একটি ডিমের সাদা অংশ ফেটে নিন। তারপর পাতলা একটি আস্তরণ আপনার নাকে লাগান। এবার নাকের ওপর একটি টিস্যু পেপার দিয়ে ডিমের আস্তরণটি ঢেকে দিন। টিস্যুর ওপর আরেক স্তর ডিম লাগান। ২০ মিনিট এভাবে রাখুন। ডিম ও টিস্যু পুরোপুরি শুকানোর পর উঠিয়ে ফেলুন। মুখ ধুয়ে ফেলুন।
বেকিং সোডা ব্ল্যাকহেডের একটি ঘরোয়া উপশম। এটি একটি মৃদু প্রকৃতির এক্সফলিয়েন্ট, যা লোমকূপে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। তবে বেকিং সোডা খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হয়।
এক টেবিল চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। নাক কিংবা ব্ল্যাকহেড আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে এক মিনিট রেখে দিন। গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এই স্ক্রাব সপ্তাহে এক দিনের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
রেটিনল ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে, ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার রাখে। রাতে রেটিনল ব্যবহার করুন। পরদিন অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। রেটিনলে অভ্যস্ত হতে আপনার ত্বকের কিছুদিন সময় লাগবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটি ভালো ফল বয়ে আনবে।
ব্ল্যাকহেড হাত দিয়ে খুঁটতে থাকা অনেকের নেশায় পরিণত হতে পারে। কিন্তু এই কাজ করা একেবারেই অনুচিত। এই বদভ্যাস থেকে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে, ব্ল্যাকহেডের পরিমাণও বাড়তে পারে। যদি ব্ল্যাকহেড হাত দিয়ে তুলতেই চান, তাহলে সঠিক নিয়মে তুলুন।
প্রথমে লোমকূপগুলো স্টিম করে নিন। তারপর ব্ল্যাকহেড টুল দিয়ে অথবা টিস্যু এবং আঙুল দিয়ে আলতো করে ব্ল্যাকহেড তুলে আনুন। ত্বকের যে স্থান থেকে ব্ল্যাকহেড তোলা হয়েছে, সেই স্থানটি জীবাণুমুক্ত করে দিন। তারপর ময়েশ্চারাইজার লাগান।
কোনো পণ্যই রাতারাতি ব্ল্যাকহেড দূর করতে পারে না। কিন্তু রুটিনমাফিক ব্যবহার করলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সকালে ও রাতে ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এক্সফলিয়েশন করবেন। সপ্তাহে একবার ক্লে মাস্ক এবং নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। কখনো সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বাদ দেবেন না। আপনার ত্বক রুটিনমাফিক যত্নে প্রাণ পায়। নিয়মিত যত্ন নিন, ত্বকের উন্নতি দেখতে পাবেন।
সব চেষ্টার পরও যখন ব্ল্যাকহেড যেতেই চায় না, তখন চর্মরোগবিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
সূত্র: এমএসএন