>

পোশাকের ধরন, রং, মেকআপ; বর–কনের সাজে পরিবর্তন এসেছে অনেকটা। এই সময়ের বিয়ে সাজের খুঁটিনাটি নিয়ে নকশার আয়োজন।
কপাল ও গালে চন্দনের ফোঁটা, সোনালি কারুকাজের কাটায় চুলের বাঁধন, লাল টুকটুকে বেনারসির সঙ্গে টিকলি, কানে ভারী ঝুমকা, নাকে নথ, হাতে সোনার বালা আর আলতারাঙা পা—চিরায়ত এই সাজেই সেজে উঠত বাঙালি কনে। ঘরে ঘরে এই ছিল কনেসাজের রীতি। লাল জমিনের শাড়িতে পেটানো জরির কাজ, সোনার গয়নায় ভরাট কারুকার্য আর বড় খোঁপায় কনের চিরচেনা সাজে এখন যোগ হয়েছে অনেক বৈচিত্র্য। কনের পোশাকে নানা রঙের ছোঁয়া, গয়নার নকশায় আধুনিকতা আর সাধারণ সাজেই এই সময়ে কনে হয়ে উঠছে অনন্য।
বৈচিত্র্যময় কনের পোশাক
লাল টুকটুকে বউয়ের প্রবাদটা নাকি এখন ভাঙছেন কনেরা। বিয়ের পোশাকের নকশা করেন—এমন কয়েকজন ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলে তেমনটাই জানা গেল। কনের পোশাকে রঙের এই বৈচিত্র্য অবশ্য দু-তিন বছর থেকেই দেখা যাচ্ছে। ডিজাইনাররা জানালেন, ম্যাজেন্টা, নীল, সবুজ, সাদা, বেগুনির মতো রংগুলোর প্রাধান্য থাকবে এবারের কনের পোশাকে। ড্রেসিডেলের ডিজাইনার মায়া রহমান জানালেন, এখনকার কনেরা অনেক বেশি ফ্যাশনসচেতন। বিয়ের দিনটিতে সবাই চায় একটা নিজস্বতা। লাল, বাদামি বা সোনালির মতো বিয়ের পোশাকের গৎবাঁধা রঙে সেই বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়াটা একটু কঠিন। তাই বিয়ের পোশাকের রঙে এই বৈচিত্র্য কনেরা গ্রহণ করছেন বেশ সহজভাবে। তাই বলে চিরায়ত শাড়ির আবেদন কিন্তু ফুরিয়ে যাবে না। তবে সেখানেও যুক্ত হবে নতুনত্ব—এমনটাই জানালেন টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের স্বত্বাধিকারী মুনিরা ইমদাদ। ঐতিহ্যবাহী কাতান, বেনারসি, জামদানি, মসলিনের শাড়ির পাড়ে থাকবে বৈপরীত্যের ছোঁয়া। শাড়ির জমিনটা গাঢ় সবুজ হলে আঁচল আর পাড়ে থাকবে সোনালি রঙের ছোঁয়া।
মায়াসীরের ডিজাইনার মাহিন খান জানালেন, ঐতিহ্যবাহী মসলিনের পাশাপাশি শিফন শাড়িও চলবে বিয়ের বাজারে। তবে সে ক্ষেত্রে বিশেষত্ব থাকবে নকশায়। মেশিনের কাজ নয়, শিফন শাড়ির জমিনে ভরাট হাতের কাজে ফুটে উঠবে জমকালো ভাব—এমনটাই জানালেন তিনি। বিয়ের বাজারে শাড়ির পাশাপাশি লেহেঙ্গা, গাউন, শারারা বাজিমাত করবে বছরজুড়েই। তবে এই পোশাকগুলোর নকশায় থাকবে দেশি ছোঁয়া—জানালেন স্টাইলসেলের হেড অব ডিজাইনার সায়েদুন নাহার মুক্তা। মোগল স্থাপত্যরীতি প্রাধান্য পাবে পোশাকের নকশায়। থাকবে জারদৌসি আর পাথরের ভরাট কাজ।
হালকা সাজেই স্নিগ্ধা
কনের সাজ কেমন হবে—তার পুরোটাই নির্ভর করবে পোশাকের ওপর। পারসোনার রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান জানালেন, এখন কনের পোশাকে অনেক রঙের ছড়াছড়ি। এর প্রভাবটাও থাকবে কনের সাজে। যেমন কনের পোশাক থেকে যেকোনো একটি রং বেছে নেওয়া হয় চোখের মেকআপে। কানিজ আলমাস খান আরও জানালেন, এ বছর কনেসাজে বেইস মেকআপ ন্যাচারাল থাকবে। ‘আগে যেমন বেইস মেকআপে সাদার ব্যবহারটা বেশি দেখা যেত। এই বছর আর তেমনটা দেখা যাবে না। এর পরিবর্তে চোখ আর ঠোঁটের সাজে থাকবে উজ্জ্বল রঙের আধিক্য।’ এ ছাড়া চোখের কোনায় মোটা করে টানা আইলাইনারের ব্যবহার আর চোখের নিচে নীল, সবুজ বা বেগুনির রঙের একটা ছোঁয়া থাকবে, যা কনেকে করে তুলবে আরও প্রাণবন্ত। গত বছর কনের ঠোঁটের সাজে হালকা রঙের বেশি ব্যবহার হয়েছিল। এই বছর লাল, কমলা, বাদামি রঙে রাঙানো থাকবে কনের ঠোঁট। এ জন্য চোখের সাজে দুটির বেশি রং ব্যবহার না করার পরামর্শ দিলেন তিনি।
অনুষঙ্গে নতুনত্ব
কনের ব্লাউজের নকশায় এবার যোগ হবে নতুন বিশেষত্ব। কোমর পর্যন্ত নামবে ব্লাউজের ঝুল, জানালেন ড্রেসিডেলের ডিজাইনার মায়া রহমান। গোল গলা, বোট নেক, জেট নেক থাকবে। তবে এই বছরের ব্লাউজের নকশায় থাকছে নেকলেস নেকের ব্যবহার। মায়া রহমান বললেন, ‘গলার হারের নকশার আদলে পাথরের জমকালো নকশার ডিজাইন বসানো হবে কনের ব্লাউজে। হাতায় থাকবে জরি আর মিনার কাজ। বছরের মাঝামাঝি সময়ে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা নকশার কটিও পরতে দেখা যাবে বিয়ের কনেকে।’
প্রিন্সেস কাটের গাউনের ওপরের অংশের আদলে তৈরি ব্লাউজও বছরজুড়ে চলবে বলে জানালেন ডিজাইনার রামীম রাজ। ব্লাউজের জন্য শাড়ির কনট্রাস্ট রংই বেশি মানাবে। সে ক্ষেত্রে শাড়ির নকশা থেকে যেকোনো একটি রং বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। গত বছর কাচ আর চুমকির কাজের প্রভাব ছিল ব্লাউজে। এ বছর হ্যান্ডলুম সিল্কের ওপর কুন্দনের নকশার ব্লাউজ চলবে। এ ছাড়া বাহারি রঙের কাতানের ওপর চুমকির কাজ মানাবে সব ধরনের সাজেই।
গয়নায় বাহার
কনেসাজে ভারী নকশার গয়না পরার চলটা ফুরোলেও গয়নার আবেদন কিন্তু এতটুকু ফুরোয়নি নতুন বউয়ের কাছে। আলাদা কয়েকটি হার নয়, বরং গলাজুড়ে ভরাট নকশার চোকার হার পরতে দেখা যাবে কনেকে। পুঁতি বা মুক্তার চার-পাঁচ লহরের মালাও ঝুলতে দেখা যাবে কনের গলায়। এদিকে গয়নার নকশায় এ বছর নানা রঙের কুন্দন আর পাথরের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে জানালেন নিউ জড়োয়া হাউসের স্বত্বাধিকারী বাদল চন্দ্র রায়। এ বছর সোনা ছাড়াও অন্যান্য ধাতব গয়না পরতে দেখা যাবে বিয়ের কনেকে। এ প্রসঙ্গে কনকের স্বত্বাধিকারী লায়লা খায়ের কনক জানালেন, পোশাকের মতো গয়নার নকশায় স্বাতন্ত্র্য চান কনেরা। আর মেটালের গয়নায় সহজেই এ বৈচিত্র্য তুলে ধরা সম্ভব। আর দামটাও থাকে হাতের নাগালে।
বরের ভূষণে
রং মিলিয়ে বর-কনের পোশাক পরার রীতিটা বহাল থাকবে এবারও। তবে একই রঙের পোশাকে নয়, বরং বর-কনের পোশাকে থাকবে রঙের সমন্বয়—এমনটাই জানালেন ওটুর ফ্যাশন পরামর্শক আসিফ ইকবাল। যেমন কনের শাড়ির জমিনটা লাল হলে বর বেছে নিতে পারেন সাদা শেরওয়ানি। সে ক্ষেত্রে শেরওয়ানির নকশায় প্রাধান্য পাবে লালের ব্যবহার। এমন ধারাই এ বছর চলবে বলে জানালেন তিনি। বরের শেরওয়ানির কাটিংয়ে থাকবে লম্বা প্রিন্স কোটের আদল। হাঁটু বরাবর বা তার একটু নিচ পর্যন্ত নামবে শেরওয়ানির দৈর্ঘ্য। তবে শেরওয়ানিজুড়ে জমকালো নকশার কাজ থাকবে না এবার। শেরওয়ানির জমিনটা হবে একরঙা আর গলা ও হাতে থাকবে চুমকি বা জরির কাজ। শেরওয়ানির সঙ্গে ন্যারো শেপের প্যান্ট পরার চল এবার। পাশাপাশি হাতে বাঁধা পাগড়িটাই বেশি জনপ্রিয় থাকবে বরের কাছে।
ভারী কাজের বেনারসির কদর আছেই, লাল-মেরুনের বাইরেও নানা রং দেখা যাবে।
মডেল: শ্রাবণ্য ও ফাহিম
শাড়ি: বেনারসী কুঠী
ব্লাউজ: এমদাদ হক
পাঞ্জাবি: ওটু
পানচিনি কিংবা বউভাত নয়, বিয়ের দিনেও অনেকে পরছেন আনারকলি
মডেল: প্রিয়াংকা, পোশাক: ড্রেসিডেল
মডেল: ফাহিম ও ইতিশা
পোশাক: স্টাইলসেল
পাঞ্জাবি: ওটু
লম্বা কোটের চল থাকবে
মডেল: বেনজির
শাড়ি: বেনারসী কুঠী
ব্লাউজ: স্টাইলসেল
কুন্দন ও পাথরের গয়না
জনপ্রিয় হবে৷
মডেল: দোয়েল ও সানি
পোশাক: স্টাইলসেল
পাঞ্জাবি: ওটু
আরও পড়ুন: