মুক্তাঝরা ফ্যাশন

আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে একসময় শুধু সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদের গয়নার বাক্সেই শোভা পেত মুক্তা। সময় এখন বদলেছে। এখন সবকিছুতেই মানুষ চায় প্রকৃতির ছোঁয়া৷ যে কারণে প্রকৃতিবান্ধব জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণটা বেশি৷ এ ছাড়া যেকোনো বয়সে যেকোনো পোশাকের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে যায় মুক্তার গয়না৷ মুক্তা এখন সহজলভ্যই বলা চলে। তাই শুধু আভিজাত্যে আর সৌন্দর্যের জন্যই নয়, সাধ্যের মধ্যে আছে এমন দামে মুক্তার গয়না এখন সবার মাঝেই বেশ জনপ্রিয়।

গয়না: কনক
গয়না: কনক

আন্তর্জাতিক বাজারে পার্ল বা মুক্তার দামটা একটু বেশি হলেও আমাদের দেশে এখন সাধ্যের মধ্যে মিলবে মুক্তার গয়না। রাজধানীর গুলশান-২-এর ডিসিসি মার্কেটের গয়নার দোকানগুলো ঘুরে এমনটাই দেখা গেল। বিভিন্ন দোকান ঘুরে মুক্তার গয়না কেনাকাটা করছিলেন তসলিমা আক্তার৷ জানালেন, মুক্তার গয়নার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, যেকোনো অনুষ্ঠানে অনায়াসেই পরা যায়। ডিসিসি মার্কেটের নিউ পার্ল ফেয়ারের কারিগর নজরুল ইসলাম জানালেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন মুক্তার চাষ করা হয়৷ যে কারণে মুক্তার দামটা অনেক ক্রেতারই হাতের নাগালে চলে এসেছে। এ কারণে ক্রেতাদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মুক্তার গয়না৷

মুক্তার গয়নার সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা রকমের পাথর, সোনা, রুপা ও পিতল

চতুর্দশ শতকে আরব সাগরে বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ডুবুরিদের কোমরে মুক্তা রাখার কাহিনির কথা বর্ণনা করেন৷ এরপর থেকেই বিশ্ববাসীর কাছে মুক্তা পরিচিতি পায়৷ সালিম আল হোসাইনির ‘১০০০ ইয়ারস অব মিসিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল হিস্ট্রি’ প্রবন্ধের সূত্র দিয়ে বাংলা উইকিপিডিয়ায় এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। ঝিনুক থেকে তৈরি হয় মুক্তা৷ তবে এখন প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া মুক্তার (ন্যাচারাল পার্ল) ব্যবহারটা একেবারেই কম বলে জানালেন কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেসের ডিজাইনার লায়লা খায়ের। এর পরিবর্তে কালচারড পার্ল বা চাষ করা মুক্তার প্রচলনটাই বেশি৷ তবে এই দুই ধরনের মুক্তার গুণগত মানে খুব একটা পার্থক্য থাকে না বলে জানালেন লায়লা খায়ের৷
গয়নার বাজারে এখন তো মুক্তার গয়নার জয়জয়কার। তবে গয়নায় ব্যবহৃত মুক্তাটি আসলেই মুক্তা কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান ক্রেতারা। এ জন্য মুক্তাটি আসল কি না, তা জানতে কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিলেন এই নকশাবিদ৷ ভালো মানের মুক্তা হলে তা অবশ্যই গোলাকার এবং মসৃণ হবে৷ গোল আকৃতির মুক্তার গায়ে যদি দাগ থাকে তবে সেই মুক্তার মান ততটা ভালো নয়৷ আবার দাগ নেই কিন্তু মুক্তার আকৃতি চ্যাপ্টা—এ ধরনের মুক্তার স্থায়িত্ব বেশি দিন থাকবে না৷

মুক্তার বড় এক লহরি, কয়েক লহরির মালা যেমন আছে, তেমনি চলছে সুতায় গাঁথা ছোট ছোট মুক্তার মালাও। মডেল: সাফা কবির

সোনা, রুপার মতো মুক্তার গয়নার নকশা নিয়েও এখন চলে পরীক্ষণ৷ পার্ল প্যালেসের পরামর্শক ইফতেখার মাহফুজ জানালেন, একটা সময় এক লহরের মুক্তার মালার দিকে বেশি ঝোঁক ছিল ক্রেতাদের। তবে এখন মুক্তার সঙ্গে পাথর বসানো গয়নাটা বেশি চলছে। পাশাপাশি আছে, ফুলের তোড়া আকৃতির ঝুল নকশা গলার মালা৷ এ ছাড়া ফ্লাট আকারের মুক্তা, রাইস পার্ল এখন বেশ জনপ্রিয়। ইফতেখার মাহফুজ জানালেন, সাধারণত

কয়েক লহরির মুক্তার মালার সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে সোনা ও রুপার লকেট। এ ছাড়া অক্সিডাইজড গয়নাতেও ভিন্নতা আনেছ মুক্তা (ডানে)

গয়নায় তিন আকৃতির মুক্তার ব্যবহার করা হয়। ৭ মিলিমিটারের মুক্তার আকৃতি একটু ছোট হয়ে থাকে। বড় মুক্তাগুলো সাধারণত ১২ থেকে ১৪ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। আর চালের মতো আকৃতির মুক্তাগুলো পরিচিত রাইস পার্ল হিসেবে৷
 আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ায় এ বছর সোনা, রুপা বা পিতলের চেইনের মাঝে মুক্তার ব্যবহারটা বেশি দেখা যাবে৷ পাশাপাশি গয়নার উপাদানটা যাই হোক না কেন, তার সেন্টার পয়েন্টে থাকবে মুক্তার ব্যবহার৷ আড়ংয়ের গয়না ডিজাইনার শাহীদা আক্তার জানালেন, এ ক্ষেত্রে গলার পেন্ডেন্ট বা লকেটে নানা ঢঙে শোভা পাবে মুক্তা৷ অক্সিডাইজড গয়নাতেও থাকবে মুক্তার প্রচলন৷ আবার সোনার মতো আকারে মুক্তার ব্যবহার দেখা যাবে গয়নায়৷ কানের দুলের ক্ষেত্রে গলা আর লম্বা নকশার পাশাপাশি ঘাড় পর্যন্ত ঝোলানো মুক্তার গয়না থাকবে আড়ংয়ের গয়নার সংগ্রহে৷ দুলেও দেখা যাবে লেয়ারের নকশা৷ ব্রেসলেটের ক্ষেত্রে নতুনত্ব যোগ হবে লক সিস্টেমে৷ যেকোনো হাতে পরার উপযোগী করে তৈরি এসব ব্রেসলেটের লকটাতে থাকবে নান্দনিক নকশা৷