‘এরপর যেই শিশুর মৃত্যু হবে, সে হতে পারে আপনার সন্তান’

ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন বক্তা হিসেবে হাজির হয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটির এই স্প্যানিশ কোচ তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরেছেন ফিলিস্তিনের দুঃখগাথার কথা। পড়ুন নির্বাচিত অংশ।

পেপ গার্দিওলা
ছবি: এএফপি

সুদান, ইউক্রেন থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনের গাজার যে চিত্র বিশ্ববাসী নীরবে দেখছে, তা আমাকে খুব পীড়া দিচ্ছে। হাজারো নিরপরাধ শিশু, মা-বাবা, পরিবার না খেয়ে আছে, তাঁদের হত্যা করা হচ্ছে।

বিশেষ করে গাজার চিত্র ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। দেখে আমার সাড়া শরীর ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা আদর্শের বিষয় নয়। ঠিক-বেঠিকের বিষয় নয়। এখানে একমাত্র বিষয় হলো—জীবনের প্রতি ভালোবাসা, প্রতিবেশীর ভালোমন্দ দেখা।

হয়তো আপনি ভাবতে পারেন, চার বছরের শিশুরাও বোমার আঘাতে মরছে, নয়তো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করছে, এসব তো আমার মাথাব্যথা নয়। বটে, এভাবে ভাবতেই পারেন। কিন্তু সাবধান। এরপর যেই শিশুর মৃত্যু হবে, সে হতে পারে আপনার সন্তান।

আমি দুঃখিত। গাজার দুঃস্বপ্ন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন সেখানকার শিশুদের দিকে তাকালেই আমার নিজের সন্তান—মারিয়া, ম্যারিয়াস আর ভ্যালেন্টিনাকে দেখতে পাই। আমার ভীষণ ভয় হয়। ছবিগুলো হয়তো আমরা যেখানে থাকি, সেখান থেকে অনেক অনেক দূরের। আপনারা বলতেই পারেন, আমাদের কীই–বা করার আছে।

আমি আপনাদের একটা গল্প মনে করিয়ে দিতে চাই।

একবার একটা বনে আগুন লাগল। বনের পশুপাখিরা ভীষণ আতঙ্কিত, অসহায়। কিন্তু দেখা গেল একটা ছোট্ট পাখি বারবার সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে, আর তার ঠোঁটে করে অল্প অল্প পানি নিয়ে আসছে। দেখে একটা সাপ হেসে বলল, ‘আরে বোকা, এসব করে কী লাভ! তুমি তো আগুন নেভাতে পারবে না।’

পাখিটা বলল, ‘আমি জানি।’

‘তাহলে? এত কষ্ট কেন করছ?’ সাপটা বলে।

‘আমি শুধু আমার কাজটুকু করছি,’ এই ছিল পাখিটার উত্তর।

পাখিটা জানত, সে আগুন নেভাতে পারবে না। তবু সে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চায়নি। এই বিশাল পৃথিবীতে অনেক সময়ই মনে হতে পারে, আমার অংশটা তো খুব ক্ষুদ্র। কিন্তু প্রশ্নটা কতটুকু করলাম, তা নয়। বরং প্রশ্ন হলো—যখন সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল, তখন কি আমার অংশটুকু আমি করেছিলাম, নাকি চুপ ছিলাম।