প্রস্রাবে সংক্রমণ বলতে মূত্রনালি, মূত্রথলি, কিডনি—মানে গোটা মূত্রতন্ত্র বা ইউরিনারি ট্রাক্টের যেকোনো সংক্রমণকে বোঝায়। এটা ঠিক যে এ সংক্রমণ নারীদেরই বেশি হতে দেখা যায়। তবে পুরুষেরাও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নন। বরং পুরুষের প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে এর পেছনে কোনো কারণ লুকিয়ে থাকে, যা খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে পড়ে। নইলে পরবর্তী সময়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তরুণদের চেয়ে বয়স্ক পুরুষেরা এতে আক্রান্ত হন বেশি। তার কারণও আছে।
পুরুষের কেন সংক্রমণ হয়?
মূত্রথলি বা ব্লাডারে প্রস্রাব জমে থাকলে তাতে জীবাণু বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। বয়স্ক পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়ার কারণে কিংবা মূত্রনালির নিচের দিকে পাথর বা টিউমার জাতীয় কোনো বাধা থাকার কারণে অনেক সময় প্রস্রাব করার পরেও বেশ খানিকটা প্রস্রাব থেকে যায় মূত্রথলিতে। সে ক্ষেত্রে জীবাণু সংক্রমণ ঘটে। কোনো কারণে প্রস্রাবের জন্য নল বা ক্যাথেটার করা থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। অস্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাসের কারণেও প্রস্রাবের নালিতে সংক্রমণ হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস প্রস্রাবে সংক্রমণের একটা বড় কারণ। আবার স্নায়ুগত সমস্যার জন্য মূত্রথলির স্থিতিস্থাপকতা বা টোন নষ্ট হয়, ফলে প্রস্রাব পরিষ্কার হয় না ও জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। স্ট্রোকের পর বা দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসে এমন হাইপোটনিক ব্লাডার হতে পারে।
মূত্রনালি বা মূত্রথলিতে জীবাণু সংক্রমণের পর যথাযথ চিকিৎসা করা না হলে সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। কখনো কখনো রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন?
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাব করতে অসুবিধা অনুভব করা, প্রস্রাবের সময় তলপেটে ব্যথা বা অস্বস্তি, বারবার অল্প পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে অস্বাভাবিকভাবে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করা, দুর্গন্ধময় ঘোলাটে প্রস্রাব হওয়া—এসবই হতে পারে সংক্রমণের লক্ষণ। সঙ্গে থাকতে পারে জ্বর, বমি, বমিভাব, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসা কিংবা প্রস্রাবের পথে সাদাটে তরল বেরিয়ে আসার মতো লক্ষণ। অনেক সময় বয়স্ক ব্যক্তির সংক্রমণ হলে তেমন কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। কিন্তু তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন বা অসংলগ্ন কথা বলেন।
ওপরের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রিত রাখুন। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রস্রাব আটকে রাখবেন না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। অস্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাস এড়িয়ে চলুন।
আগামীকাল পড়ুন: নারীর নীরব কষ্টের নাম এন্ডোমেট্রিওসিস
প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন: গত কয়েক দিন ধরে সবুজ পায়খানা হচ্ছে। এর কারণ কী?
উত্তর: পিত্তথলি বা যকৃতের সমস্যায় এমন হতে পারে। আবার কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও হতে পারে। বাচ্চাদের ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সবুজ পায়খানা হয়। ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ