সময়ের সঙ্গে প্রসাধনীর বাজার কেবলই বড় হচ্ছে। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাই প্রসাধনী ব্যবহার করে। বিউটি ব্লগিং, ভ্লগিং প্রসাধনীকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। তবে এ প্রসাধনী ব্যবহার কতটা জরুরি? কিংবা ত্বকের সমস্যা সমাধানে কি আসলে প্রসাধনের ভূমিকা আছে?
এসব নিয়েই আলোচনা হয়েছে এসকেএফ আয়োজিত ত্বক আলাপনের পঞ্চম পর্বে। এ পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল ‘কসমেটিকস: বন্ধু, না নীরব ঘাতক?’ ডা. ঈশিতা বড়ুয়ার সঞ্চালনা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. আসিফ ইমরান সিদ্দিকী।
তবে সবাইকে যে প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে, বিষয়টা এমন না। চামড়ার যত সমস্যা, তার বেশির ভাগ স্বাভাবিকভাবেই ঠিক হয়ে যায়। আমাদের মুখে কত ব্রণ হয়, কত দাগ হয়, এগুলোর প্রায় কিছুই থাকে না। ব্লাড সার্কুলেশনে সেরে যায়। তবে যাঁদের চামড়া অনেক শুষ্ক বা অনেক তৈলাক্ত অথবা যাঁরা অনেক রোদে কাজ করেন, তাঁদের বিশেষ বিশেষ প্রসাধনীর দরকার পড়ে। তবে সবার প্রসাধনী ব্যবহারের দরকার নেই।
বাজারে যত প্রসাধনী আছে, সেগুলো খুব স্বাভাবিকভাবে অরগানিক আর নন-অরগানিক—এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। অনেকে মনে করেন, অরগানিক প্রসাধনী ত্বকের কোনো ক্ষতি করে না। এটা ঠিক নয়। হারবাল একটা মনের সান্ত্বনা। কেমিক্যাল ছাড়া বা প্রিজারভেটিভ ছাড়া এগুলো কোনোভাবেই সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। দিনের পর দিন কীভাবে অ্যালোভেরা ভালো থাকে? ওখানে কেমিক্যাল মেশানো থাকে।
হারবাল আর কেমিক্যাল বলে কিছু নেই। সবই কেমিক্যাল। তা ছাড়া আমাদের ত্বকের গঠনটাই এমন যে বাইরে থেকে যা কিছুই মাখি না কেন, সেগুলোর কিছুই আমাদের শরীরে ঢোকে না। এক ঘণ্টা পুলে বসে থাকলে এক মিলিলিটার পানিও ত্বক দিয়ে শরীরে ঢোকে না। তাই এগুলো মাখামাখি না করে আমরা যদি স্বাস্থ্যকর খাওয়ার দিকে গুরুত্ব দিই, তাহলে সেটা বেশি উপকার করবে।
বাজারে যত ধরনের প্রসাধনী আছে, তার ভেতর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ত্বকের রং ফরসাকারী ক্রিম। রং ফরসাকারী সব ক্রিমেই আছে স্টেরয়েড। আর স্টেরয়েড হলো স্লো কিলার। এর কারণে ত্বক পাতলা হয়ে যায়। এ জন্য কয়েক দিন দেখতে ফরসা লাগবে। এমনকি এতই পাতলা হয়ে যায় যে মুখের রগগুলো পর্যন্ত দেখা যায়। এতে বাইরের যেকোনো কিছু দিয়ে সহজেই আক্রান্ত হবে, রোদে গেলে মুখ লাল হয়ে যাবে। বন্ধ করে দিলে আবার কালো হয়ে যাবে। তাই একবার মাখা শুরু করলে বাদ দেওয়া কঠিন। অনেকে বেটনোভেটও মাখেন। এসবে বিভিন্ন জটিলতা হয়। আমাদের কাছে অনেক রোগী আসেন। দু-একটা প্রশ্ন করলেই জানা যায় যে তাঁরা রং ফরসাকারী ক্রিম ব্যবহার করেছেন। এর কারণে আনওয়ান্টেড হেয়ারও ওঠে।
এ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত পণ্যের একটি হলো লিপস্টিক। এটা ভয়ংকর ক্ষতিকর। আপনি মাসে এক দিন পার্টি লুক দিতেই পারেন। কিন্তু প্রতিদিন যদি এমন হয়, তাহলে ত্বক বেশি দিন ভালো থাকবে না। একজন মার্কিন নারী তাঁর জীবনকালে দুই থেকে তিন কেজি লিপস্টিক খেয়ে ফেলেন। গবেষণায় দেখা গেছে, তাঁরা ঘরে থাকলেও লিপিস্টিক ব্যবহার করেন। লিপস্টিকের উপাদান তো খাওয়ার জন্য নয়। সেটা বিষাক্ত। অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ লিপিস্টিক ব্যবহারে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
ত্বকের সমস্যার জন্য ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। একেকজনের জন্য একেক ধরনের চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়। আপনি যখন কিছুই মাখতেন না, তখনই আপনার ত্বক সবচেয়ে ভালো ছিল। আমাদের ত্বক তেল তৈরি করে। আলাদা করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের দরকার নেই। যাদের তৈলাক্ত ত্বক, সেটাই সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। তৈলাক্ত ত্বক আসলে ভালো। সমস্যা হলে তো অ্যান্টিহিস্টামিন নিতেই হবে। তা ছাড়া এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে, যেটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবচেয়ে কম।
যাঁদের ত্বক এমনিতেই স্পর্শকাতর, তাঁদের বাইরে থেকে এসে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। ব্রণের জন্য ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। আমরা দরকারে প্রতিদিন শ্যাম্পু করব। তবে বেশি তেল ব্যবহার করা যাবে না। যিনি যত বেশি চুল নিয়ে নিরীক্ষা করবেন, তাঁর চুল তত নষ্ট হবে। প্রসাধনীনির্ভর হওয়ার কোনো মানে নেই। একেকজনের ত্বক একেক রকম। তাই আরেকজনকে দেখে কিছুতেই কিছু ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের ত্বক নিজেই জানে যে কীভাবে সেটা ঠিক রাখতে হবে। পুষ্টিকর, অ্যান্টি-এজিং খাবার, ঘুম, পানি—এগুলোর কোনো বিকল্প নেই।