সকালের নাশতায় জ্যাম, জেলি নাকি মাখন—কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর? কতটাই–বা খাওয়া যায় রোজ? এ বিষয়ে রাফিয়া আলমকে জানালেন টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান।
ব্যস্ত সকালে বাসায় নাশতা করা হলেও তা পাউরুটি দিয়ে সেরে ফেলাই অনেকের জন্য সহজ। পাউরুটির সঙ্গে মাখন, জ্যাম বা জেলি—পছন্দমতো একটা কিছু খেয়ে নিলে সকালে ঝটপট শক্তি মেলে, এটা ঠিক। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনধারায় এ ধরনের খাবারের কোনটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তা জেনে রাখা ভালো।
মাখন দুধ থেকে তৈরি হলেও তা থেকে আপনি মূলত পাবেন সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। যেসব স্নেহ পদার্থ কক্ষ তাপমাত্রায় জমাট বেঁধে থাকে, সেসব সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। এসবকে ঠিক স্বাস্থ্যকর বলার সুযোগ নেই। এসব নিয়মিত গ্রহণ করা হলে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
তবে মাখন থেকে কিছুটা ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ই পাবেন। যিনি নিয়মিত অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করেন, তিনি চাইলে মাখন খেতে পারেন রোজ। সেটিও অবশ্য পরিমিত পরিমাণে। সারা দিনে সর্বোচ্চ দুই চা–চামচ। অন্যদের এই পরিমাণ মাখন রোজ খাওয়া উচিত নয়। মাসে দু–একবার খেলে অবশ্য ক্ষতি নেই। মাখনে চিনি নেই। এতে চিনি যোগ করে না খাওয়া সবার জন্যই ভালো।
ফলের রসের সঙ্গে চিনি যোগ করে তৈরি করা হয় জেলি। জেলি তৈরির জন্য অনেকটা চিনি প্রয়োজন হয়। ফলের রসের চেয়ে চিনির পরিমাণই বেশি থাকে তাতে। এতটা চিনিসমৃদ্ধ খাবার আদতে স্বাস্থ্যকর নয়।
নিয়মিত এতটা চিনি খাওয়া হলে দীর্ঘমেয়াদি বহু রোগের ঝুঁকি বাড়ে। আর এতে ফলের রস থাকলেও তা প্রক্রিয়াজাত করার সময় ফলের অধিকাংশ পুষ্টিগুণ হারিয়ে যায়। নিয়মিত কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করলে রোজ জেলি খাওয়া যেতে পারে, সারা দিনে সর্বোচ্চ এক-দেড় চা–চামচ। অন্যরা খেতে পারেন কালেভদ্রে।
জ্যামও অনেকটা জেলির মতো। তবে ফলের রস আর অনেকটা চিনির সঙ্গে এতে থাকে খানিকটা ফলের মণ্ড। তাই কিছুটা আঁশ পাওয়া যায় জ্যাম থেকে। তবে ফলের উপকার খুব একটা পাবেন না এই খাবার থেকেও।
জ্যাম খেতে চাইলে এটিও জেলির মতোই সর্বোচ্চ এক-দেড় চা–চামচ খেতে পারবেন রোজ, যদি আপনি নিয়মিত কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করেন। একইভাবে অন্যরা তা খেতে পারবেন কালেভদ্রে।
সাদা পাউরুটিতে আঁশের পরিমাণ থাকে খুব কম। এটিও তাই রোজ খাওয়ার মতো স্বাস্থ্যকর খাবার নয়। পাউরুটি যদি খেতেই হয়, তাহলে হোল গ্রেইন বা গোটা শস্যের তৈরি পাউরুটি বেছে নিন। এ ধরনের পাউরুটিতে পর্যাপ্ত আঁশ থাকায় তা স্বাস্থ্যকর। ঝামেলাবিহীন আরেকটি বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন ‘রেডি রুটি’, যাতে ক্যালরির মাত্রা কম।
যাঁরা কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনেই তাঁদের রোজকার খাদ্যাভ্যাস ঠিক করা উচিত। তাই তাঁরা এসব খাবার খেতে পারবেন কি না, পারলেও কতটা, সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি সে বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।