সেপ্টেম্বর মাস প্রোস্টেট ক্যানসার সচেতনতার মাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় আড়াই হাজার মানুষ নতুন করে প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রোস্টেট ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন। বিশেষ করে ৫০ বছরের পর থেকে এর ঝুঁকি দ্রুত বাড়ে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
কারা ঝুঁকিতে আছেন
৫০ বছরের বেশি বয়সের পুরুষ।
যাঁদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস আছে।
স্থূলতা, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ ও কম শারীরিক পরিশ্রম।
স্ক্রিনিং কেন গুরুত্বপূর্ণ
প্রোস্টেট ক্যানসার প্রায়ই দীর্ঘ সময় কোনো উপসর্গ ছাড়াই থেকে যায়। তাই পুরুষদের নিয়মিত পিএসএস নামের রক্ত পরীক্ষা ও ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন নিয়মিত করানো জরুরি।
লক্ষণ ও উপসর্গ
অনেক সময় প্রোস্টেট ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ দেয় না। তবে কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন প্রস্রাব শুরু করতে কষ্ট হওয়া, প্রস্রাবের প্রবাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, বারবার প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা, বিশেষ করে রাতে, প্রস্রাব করতে গিয়ে মাঝপথে থেমে যাওয়া, প্রস্রাব শেষে ড্রিবলিং (ফোঁটা ফোঁটা পড়া)।
পরবর্তী অবস্থায় যখন রোগটি একটু বাড়ে, তখন যেসব উপসর্গ হয়, এর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবে রক্ত আসা, বীর্যে রক্ত আসা, প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালা, পেলভিক এরিয়ায় বা কোমরে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা (যদি হাড়ে ছড়িয়ে যায়), শ্বাসকষ্ট (যখন ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে), ওজন হ্রাস ও ক্ষুধামান্দ্য, অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা অবসাদ।
আধুনিক চিকিৎসার দিগন্ত
আজকের দিনে প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা শুধু অপারেশন বা দীর্ঘমেয়াদি রেডিওথেরাপির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যমান। যেমন রোবোটিক সার্জারি। এটা অত্যন্ত নিখুঁত, কম কাটাছেঁড়া করা লাগে। রোগী দ্রুত সুস্থ হতে পারেন।
আরেকটি হলো এসবিআরটি। কয়েকটি (সাধারণত পাঁচটি) সেশনে সম্পন্ন করা হয়। অত্যন্ত নির্ভুলভাবে শুধু ক্যানসার কোষে রেডিয়েশন প্রয়োগ করা হয়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম, ফলাফলও চমৎকার।
এরপর রয়েছে হরমোন থেরাপি ও আধুনিক কেমোথেরাপি।
অনেকেই মনে করেন, ক্যানসারের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হবে। আসলে বাংলাদেশের প্রধান ক্যানসার সেন্টারগুলোতে এখন মডার্ন এসবিআরটি রেডিওথেরাপি, উন্নত কেমোথেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি—সবই করা হয়।
ডা. অরুনাংশু দাস, কনসালট্যান্ট, স্কয়ার ক্যানসার সেন্টার