মানবজাতির উন্নয়নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নগরায়ণ, শিল্পকারখানা তৈরি, বিভিন্ন ধরনের তেল ও গ্যাসচালিত যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি। এর সঙ্গে প্রায় সব বড় শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণ। প্রতিদিনই যেন দূষণ মাত্রা আগের দিনের মাত্রাকে অতিক্রম করছে। বাংলাদেশেও বিগত বছরগুলোর মধ্যে বর্তমানে পরিবেশদূষণের দিক থেকে বেশ কঠিন সময় পার করছে। এমনকি কোনো কোনো দিন বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত বাতাসের মাত্রার খাতায় নাম লেখাচ্ছে। এই দূষিত ভারী বাতাস জীবজগতের সবার জন্য ক্ষতির কারণ হলেও শিশুরা রয়েছে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে।

ঢাকার আকাশ যেন কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা পড়েছে। এখানে বাতাস ভারী, শ্বাস নিতে গেলেও কষ্ট হয়। শিশুর নাজুক ফুসফুসের জন্য এই বাতাস যে কতটা ক্ষতিকর, তা বলা বাহুল্য। দূষিত বাতাসের নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড, সালফার ডাই–অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, আরএমপি (রেসপিরেবল পার্টিকুলেট ম্যাটার), এসপিএম (সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার) এসব ভাসমান কণা যেমন শিশুর জন্য ক্ষতিকর, তেমনই এদের কারণে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয় তাতে সহজেই ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন জীবাণু তাদের আক্রান্ত করে ফেলে।
দূষিত বাতাসে একদিকে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ যেমন নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়িয়ে দেয়, অন্যদিকে বায়ুদূষণের কারণে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগসমূহের ভোগান্তিও বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে গিয়েও মাথা ঝিমঝিম করতে পারে, মাথাব্যথা, বিরক্ত ভাব বাড়িয়ে দিতে পারে। মস্তিষ্কেও রেখে যেতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ও চিরস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব।
গুরুতর সত্য হলো যে অভিভাবকদের রীতিমতো ভাবতে হচ্ছে কীভাবে তাঁদের শিশুকে দূষিত বাতাস থেকে রক্ষা করবেন।
বায়ুদূষণ কমানোর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ শিশুদের রক্ষা করতে পারে—
শিশুদের বাইরে যেতে হলে মাস্ক পরিয়ে নিতে হবে।
চেষ্টা করতে হবে আগে থেকেই দূষণের পূর্বাভাস দেখে যে সময়টা দূষণের মাত্রা কম থাকে এবং যে এলাকায় কম থাকে; তখন বের হবেন। যেসব এলাকায় অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করে; যার আশপাশে কলকারখানা বেশি, সেসব রাস্তা পরিহার করা ভালো।
বাইরের বাতাসের পাশাপাশি ঘরের বাতাসও যে দূষণমুক্ত, এমন নয়। বরং রান্নাঘরের ধোঁয়া, ধূমপান ঘরের বাতাস ও শিশুর জন্য অনিরাপদ হতে পারে। এর থেকে শিশুকে বাঁচাতে আলো–বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় চুলা ব্যবহার করতে হবে, যেন ধোঁয়া সহজেই বের হয়ে যেতে পারে।
পরিবারের সদস্যদের ঘরে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
মোমবাতি, মশার কয়েল জ্বালানো, এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহারও কমিয়ে ফেলতে হবে।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাতাস বিশুদ্ধীকরণ যন্ত্র (এয়ার পিউরিফায়ার) পাওয়া যায়, প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঘরে বা বারান্দায় গাছ লাগানো ভালো।
সাধারণত সুস্থ শিশুর দূষিত বাতাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার শক্তি বেশি থাকে, তাই বাচ্চার সামগ্রিক সুস্থতা এবং সুস্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যদি দূষিত বাতাসের জন্য শিশুর শারীরিক কোনো লক্ষণ যেমন—
শিশুর চোখ শুষ্ক হয়ে যায়
মাথা ব্যথা করতে থাকে
দীর্ঘ সময় ক্লান্ত লাগে
শ্বাসকষ্ট হয়
বুকে ব্যথা হয়
যাদের হাঁপানি রোগ আছে, তাদের শ্বাসকষ্ট, কাশি আগের তুলনায় অনেক বেশি তীব্র হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর