এখন কম বয়সেও কেন কোলন ক্যানসার হচ্ছে

কম বয়সী তরুণ–তরুণীদের মধ্যে বাইরে খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে কোলন ক্যানসার বৃদ্ধি পাচ্ছে
ছবি: সুমন ইউসুফ

কোলন ক্যানসার হলো পেটের ভেতরে বৃহদন্ত্র, কোলন ও মলদ্বারের ক্যানসার। একটা সময় ছিল যখন কোলন ক্যানসার মূলত মধ্যবয়সী বা বয়স্কদের হতো। কিন্তু সম্প্রতি তরুণদের মধ্যে এ রোগের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।

এখন ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী তরুণ–তরুণীদের মধ্যেও কোলন ক্যানসারের মতো মারাত্মক মরণব্যাধির রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে ফাস্ট ফুড খেলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে

কম বয়সে কোলন ক্যানসার হওয়ার কারণ

কয়েক বছর আগেও অল্পবয়সীদের মধ্যে কোলন ক্যানসার দেখা যেত না। এখন গবেষকেরা জেনেটিক ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনকে ক্যানসারের ঝুঁকি হিসেবে মনে করছেন।

জিনগত বা বংশগত প্রভাব: যাদের পরিবারে আগে কোলন ক্যানসার বা পলিপের ইতিহাস আছে, তাদের মধ্যে অনেক সময় কম বয়সে ক্যানসার দেখা দেয়। নিকট আত্মীয় যেমন বাবা-মা, ভাইবোনদের কেউ কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। ফ্যামিলিয়াল এডেনোমেটাস পলিপোসিসের মতো জেনেটিক সমস্যা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: কোলন ক্যানসারের সবচেয়ে বড় কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ। দীর্ঘদিন ধরে ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত বা লাল মাংস, কম আঁশযুক্ত খাবার এবং অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে কায়িক শ্রমহীন অলস জীবনযাপন ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাবও ক্যানসারের জন্য দায়ী।

ধূমপান ও অ্যালকোহল: তরুণ বয়সেই ধূমপান বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ শুরু করলে অন্ত্রে প্রদাহ ও কোষের পরিবর্তনের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

পেটের দীর্ঘস্থায়ী রোগ: যেমন ইনফ্লেমেটরি বা ওয়েল ডিজিজ, ক্রোনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস ইত্যাদি রোগ অনেক সময় কোলনের কোষে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ক্যানসারের দিকে যেতে পারে।

স্থূলতা ও হরমোনের পরিবর্তন: অল্প বয়সেই স্থূলতা বা হরমোন ভারসাম্যহীনতা কোলন ক্যানসারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

অল্পতেই ক্লান্ত লাগলে অবহেলা করা যাবে না

যে লক্ষণগুলো অবহেলা করা যাবে না

১. দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা

২. পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া

৩. শরীরের ওজন কমে যাওয়া

৪. পেটের নিচে চাপ বা ব্যথা

৫. অল্পতেই ক্লান্ত লাগা

নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার, ফলমূল ও সবজি খেতে হবে

করণীয়

১. পরিবারে কোলন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে নিয়মিত চেকআপ বা স্ক্রিনিং করতে হবে।

২. খাদ্যাভ্যাসে আঁশযুক্ত খাবার, ফলমূল ও সবজি যোগ করতে হবে। পাশাপাশি লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

৩. ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪. নিয়মিত ব্যায়াম ও সক্রিয় জীবনযাপন করতে হবে।

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোলন ক্যানসার এখন আর নির্দিষ্ট বয়স মানে না। তাই কম বয়সেও যদি ঝুঁকি থাকে বা উপসর্গ দেখা দেয়, তবে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। এই ক্যানসারে সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসাই জীবন রক্ষা করতে পারে।