মাড়ি মুখের ভেতরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। মাড়ি ফুলে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। অনেকে অবশ্য এই সমস্যা হলে তা উপেক্ষা করে থাকেন। তবে মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণে হতে পারে নানা জটিলতা।
দাঁতের গোড়ায় প্লাক ও টার্টার বা পাথর জমে মাড়িতে প্রদাহ হয়। নিয়ম মেনে নিয়মিত মুখ পরিষ্কার না করলে সাধারণত এটি হয়। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলার কারণে মাড়ির প্রদাহ গভীরে গিয়ে হাড় ক্ষয় করে, দাঁত নড়ে যায় ও কিছুতে কামড় দেওয়ার সময় ব্যথা করে। দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে মাড়ি ফুলে ব্যথা ও পুঁজ হতে পারে। এটি সাধারণত দাঁতের মধ্যে হওয়া সংক্রমণ দাঁতের গোড়ায় পৌঁছে গেলে হয়। আবার দীর্ঘমেয়াদি মাড়িরোগ থেকেও হতে পারে। ভিটামিনের অভাব, বিশেষ করে ভিটামিন সি–এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। এটা হলে মাড়ি ফুলে যায় ও রক্তপাত হয়।
গর্ভাবস্থা, ঋতুচক্র বা কিশোর বয়সে হরমোন পরিবর্তনের কারণে মাড়ি ফুলে যেতে পারে। কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিডিপ্রেশন ড্রাগ, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার ইত্যাদির কারণে মাড়ি ফুলে যেতে পারে। কৃত্রিম দাঁত বা ব্রেস সঠিকভাবে না বসালে মাড়িতে প্রদাহ হতে পারে। এ ছাড়া ডেঙ্গু, হিমোফিলিয়া, লিভারের রোগ—এমনকি লিউকেমিয়ার মতো ভয়াবহ রোগেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
মাড়ি লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া, দাঁতের পৃষ্ঠে ময়লা বা পাথর জমে থাকা, ব্রাশ করার সময় অথবা হঠাৎ মাড়ি থেকে রক্তপাত, দাঁত ও মাড়ির মাঝখানে ব্যথা, মুখে দুর্গন্ধ, দাঁতের ফাঁকে পুঁজ বা সাদা স্তর জমা হওয়া, দাঁত শিরশির করা ইত্যাদি উপসর্গ হলে বুঝবেন মাড়ির সমস্যা হয়েছে।
মাড়ি ফুলে গেলে মুখে দুর্গন্ধ, দাঁত নড়ে যাওয়া, খাওয়ায় অসুবিধা ও গালের দিকে পুঁজ হতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসে জটিলতা, ডায়াবেটিস—এমনকি গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে শিশুর অস্বাভাবিক জন্মঝুঁকিও বাড়তে পারে।
মাড়ি ফুলে গেলে মুখে দুর্গন্ধ, দাঁত নড়ে যাওয়া, খাওয়ায় অসুবিধা ও গালের দিকে পুঁজ হতে পারে।
দিনে অন্তত দুবার সকাল ও রাতে খাবার পর ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করুন। দৈনিক টুথপিকের পরিবর্তে ফ্লস বা ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার করুন। গরম পানিতে লবণ দিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার কুলি করলে প্রদাহ
ও ব্যথা কমে। বছরে অন্তত দুবার ডেন্টাল চিকিৎসক দেখান। শাকসবজি, ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার বেশি খান, চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার কমিয়ে দিন। ধূমপান, পান, জর্দা এসব পরিহার করুন। মাড়ির রোগ, ফোঁড়া বা ইনফেকশন হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন। হরমোন, অন্যান্য রোগ বা ওষুধজনিত সমস্যায় চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ পরিবর্তন বা ডোজ সমন্বয় করুন।
ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ: রাজ ডেন্টাল ওয়ার্ল্ড ও কলাবাগান রাজ ডেন্টাল সেন্টার, ঢাকা