বর্তমান বিশ্বে ফ্যাটি লিভার একটি বড় সমস্যা। পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করা হলে ১৮ বছরের তরুণ থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত সবারই ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ধরা পড়ছে। বাংলাদেশে প্রতি চারজনে একজন এ রোগে আক্রান্ত। ফ্যাটি লিভার ডিজিজ দুই ধরনের হয়। একটি অ্যালকোহলিক আরেকটি নন-আলকোহলিক স্ট্যায়াটো হেপাটাইটিস।
লিভারের ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি জায়গাজুড়ে চর্বি জমলে তাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ ও কায়িক পরিশ্রমের অভাব, জিনগত প্রবণতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও টাইপ–২ ডায়াবেটিসের কারণে এ রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে।
পশ্চিমা দেশগুলোয়এ রোগের অন্যতম কারণ মদ্যপান। কিন্তু বাংলাদেশে নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বেশি হয়। যাঁরা মেটাবলিক সিনড্রোমে ভুগছেন তাঁদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। পেটের সামনে স্ফীতিজনিত স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রি–ডায়াবেটিস, রক্তে ক্ষতিকর এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি এবং উপকারী এইচডিএল কমে যাওয়া এর বৈশিষ্ট্য।
নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পরবর্তী সময়ে অ্যালকোহলিক স্ট্যায়াটো হেপাটাইটিসে রূপান্তরিত হয়। এটা হলে লিভারের কোষগুলো স্ফীত হয়, প্রদাহের সৃষ্টি হয় ও নষ্ট হতে থাকে। লিভারে শক্ত টিস্যু জমা হয়। পুরো লিভার ফাইব্রোসিস হলে তাকে বলে সিরোসিস।
পেটের ডান দিকে ওপরের অংশে অস্বস্তি, ক্লান্তি ও দুর্বলতা এর প্রধান লক্ষণ। আলট্রাসনোগ্রাম করলে বেশির ভাগ মানুষের এ রোগ নির্ণয় করা যায়। একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, এ ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে।
লিভারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ফ্যাট জমা হলে গ্রেড ১, ১০ থেকে ২৫ শতাংশ জমা হলে গ্রেড ২ ও ৩০ শতাংশের বেশি জমা হলে গ্রেড ৩ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফাইব্রোস্ক্যানের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা হয় আরও নিখুঁতভাবে। বিশেষ প্রয়োজনে লিভার বায়োপসি করার দরকার হয়।
বর্তমান বিশ্বে লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের অন্যতম কারণ নন–অ্যালকোহলিক স্ট্যায়াটো হেপাটাইটিস। তাই ফ্যাটি লিভারকে অবহেলা করা যাবে না। এর কোনো সুনির্দিষ্ট
চিকিৎসা নেই। জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ওজন কমানো (কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ) এর প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা। প্রতিদিন ব্যায়াম করা, অন্তত ৩০ মিনিট একটু জোরে হাঁটা, এলডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইড সহনীয় পর্যায়ে রাখা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার।
শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, পাউরুটি, আলু ইত্যাদি কম খেতে হবে। শাকসবজি, তাজা ফলমূল স্বাভাবিক পরিমাণে খেতে পারবেন। পর্যাপ্ত মাছ (তৈলাক্ত অংশ ছাড়া) খেতে পারবেন। সামুদ্রিক মাছ, ইলিশ মাছ, রুপচাঁদা ও অন্যান্য মাছ পরিমিত পরিমাণে খান। জটিল শর্করা যেমন ওটস মিল, যবের আটা খাবেন। কম খাবেন চিনি, ভাজাপোড়া, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, যেকোনো ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত লবণ, লাল মাংস যেমন গরু ও খাসি।
ডা. এ কে এম মূসা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সাবেক অধ্যাপক, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা