ভালো থাকুন

ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে স্ক্যাবিস, প্রয়োজন জনসচেতনতা

মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া। এখন প্রায় প্রতিটি পরিবার সংক্রমিত। এটি একটি জাতীয় রোগে পরিণত হয়েছে। সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ ছাড়া এ রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ অত্যন্ত কঠিন।

স্ক্যাবিস কী

স্ক্যাবিস ‘সারকোপটিস স্ক্যাবি’ নামক একপ্রকার অণুজীব দ্বারা সংঘটিত হয়। এর প্রধান লক্ষণ হলো শরীরে চুলকানি ও দানা বা বিচির মতো র‍্যাশ ওঠা। এটি স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। তা ছাড়া রোগীর ব্যবহৃত কাপড়চোপড়, বিছানার চাদর, বালিশ ব্যবহার করলে এ রোগ হতে পারে।

স্ক্যাবিসের জীবাণু সারা বছরই প্রজনন করতে পারে, তবে গরম ও আর্দ্র পরিবেশে তাদের প্রজনন দ্রুততর হয়। কারণ, এ ধরনের আবহাওয়া তাদের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য অনুকূল। এ ছাড়া সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে সহজে ছড়ায় বলে জনবহুল ও গরম স্থানে প্রজননের হার বেশি।

স্ক্যাবিসের লক্ষণ কী 

● প্রথমেই ত্বকের নানা জায়গায় পানিযুক্ত দানা বা বিচি দেখা দেয় এবং যখন চুলকানি হয়, তখনই এটি দ্রুত শরীরে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে যায়।

● রাতে বেশি চুলকানি অনুভূত হয়।

● পরিবারের একজন সদস্য আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হয়ে থাকে।

● সাধারণত আঙুলের ফাঁকে, ত্বকের ভাঁজে, বুকে-পিঠে, বগলে, যৌনাঙ্গে বা এর আশপাশে, নাভি ও নাভির চারদিকে ছোট ছোট দানা বা বিচি দেখা দেয়। এ ছাড়া পুরো শরীরে দেখা দিতে পারে।

● শিশুদের ক্ষেত্রে ঘাড়, মাথার তালু, মুখ, হাতের তালু ও পায়ের পাতার নিচেও হয়ে থাকে।

● অনেক সময় আক্রান্ত স্থানে ইনফেকশন, যেমন পুঁজ বা ব্যথাও অনুভূত হতে পারে।

● স্কুল, মাদ্রাসা, মেস, হোস্টেল বা অন্যান্য আবাসিক স্থান, যেখানে একত্রে একাধিক লোকজন থাকে, সেখানে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।

স্ক্যাবিস হলে কী করবেন 

● পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।

● পরিবারের যেকোনো সদস্য আক্রান্ত হলে সব সদস্য একত্রে চিকিৎসা নেওয়া।

● আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জামাকাপড়, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, আন্ডার গার্মেন্টসসহ সব একত্রে গরম পানিতে ভিজিয়ে, রোদে শুকানো।

● আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার না করা।

● চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও পরামর্শে কোনো ধরনের ওষুধ বা চিকিৎসা গ্রহণ না করা।

● আবাসিক হল বা মেসে কেউ আক্রান্ত হলে অন্যত্র গিয়ে আলাদাভাবে চিকিৎসা নেওয়া।

● চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বা ব্যবহার পরিহার করা।

একটি ভুল ধারণা আছে যে কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার ফলে এ রোগের সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত এটার পক্ষে কোনো গবেষণা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

চিকিৎসা কী

স্ক্যাবিস হলে পরিবারের সবার চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সবার বয়স ও ওজন অনুযায়ী আলাদা আলাদা ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করবেন না।

● পারমিথিন ৫ শতাংশ ক্রিম ও লোশন।

● মনোসালফিরাম সলিউশন।

● ইনফেকশন হলে অ্যান্টিবায়োটিক। 

● অনেক ক্ষেত্রে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার দেওয়া হয়।

ডা. তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, চর্ম, যৌন, এলার্জি রোগবিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা