জাপানি পদ্ধতিতে রোজ মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটার চর্চাও জনপ্রিয়তা পেয়েছে
জাপানি পদ্ধতিতে রোজ মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটার চর্চাও জনপ্রিয়তা পেয়েছে

সারা দিনে ১০ হাজার কদম হাঁটবেন নাকি জাপানি পদ্ধতিতে মাত্র ৩০ মিনিট? কোনটা সেরা

সারা দিনে ১০ হাজার কদম হাঁটার মাধ্যমে সুস্থতার প্রয়াস নিঃসন্দেহে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে জীবনধারা বদলানোর চেষ্টা করেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ওদিকে আবার জাপানি পদ্ধতিতে রোজ মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটার চর্চাও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই দুই পদ্ধতির হাঁটার মধ্যে কোনটা সেরা, জানেন কি?

সুস্থতার জন্য ব্যয় করা একটা মিনিটও গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটার মতো সহজ ব্যায়াম আর নেই। ছাদে, গ্যারেজে, এমনকি বারান্দা বা ঘরেও রোজ খানিকটা হাঁটাহাঁটি করা সম্ভব। কীভাবে হাঁটলে সবচেয়ে বেশি উপকার মিলবে, জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন

কদম গুণে হাঁটার উপকারিতা

আপনি যতবারই পা ফেলছেন, ততবারই ক্যালরি পুড়ছে। কতটা পুড়ছে, তা নির্ভর করছে আপনার ওজন এবং হাঁটার গতির ওপর। বুঝতেই পারছেন, ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে দ্রুত হাঁটতে হবে এবং যতটা বেশিবার সম্ভব, পা ফেলতে হবে। তবে আপনি যদি হালকা গতিতেও ১০ হাজার কদম হাঁটেন, তা-ও আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ খানিকটা উপকারে আসবে। কারণ, প্রতি পদক্ষেপেই কিছু না কিছু ক্যালরি পোড়ে।

১০ হাজার কদমের মধ‍্যে কয়েক হাজার কদম যদি একটু দ্রুত হাঁটেন, তাহলে আরও একটু বেশি ক্যালরি পুড়বে। যেকোনো গতিতেই আপনি ১০ হাজার কদম হাঁটুন না কেন, সারা দিনে এতটা হাঁটার অর্থই হলো আপনি আপনার বসে থাকার সময়টা কমিয়ে দিচ্ছেন। আর হাঁটার জন্য অনেকটা সময় ব্যয় করছেন। হয়তো কাজের ফাঁকে সময় পেলেই একটু হেঁটে নিচ্ছেন অফিস কিংবা বাসার করিডরে, হয়তো দুটি তলা সিঁড়ি ভাঙছেন, কিংবা হয়তো গাড়িতে বসে না থেকে খানিকটা পথ হাঁটছেন।

এভাবে আপনার বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমছে। তবে সংখ্যাটা যে ১০ হাজারই হতে হবে, তা নয়। সুস্থ থাকতে রোজ সাড়ে সাত হাজার কদম হাঁটাই যথেষ্ট। গবেষণার ফলাফল এমনটাই জানাচ্ছে। রোজ পাঁচ হাজার কদম হাঁটলে বিষণ্নতাও কমে।

জাপানি পদ্ধতিতে হাঁটার গুণ

জাপানি পদ্ধতিতে হাঁটা বা ইন্টারভাল ওয়াকিং ট্রেনিংয়ের জন্য তুলনামূলক কম সময় প্রয়োজন, মাত্র ৩০ মিনিট। প্রথমে আপনাকে ধীরে অর্থাৎ আপনার স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতে হবে তিন মিনিট। এরপর দ্রুতগতিতে তিন মিনিট। এ সময়টা আপনাকে এমন দ্রুতগতিতে হাঁটতে হবে, যাতে আপনার হৃৎপিণ্ডের গতি দ্রুত হয়ে ওঠে এবং শ্বাস ভারী হয়ে আসে। এভাবে আপনাকে পর্যায়ক্রমে ধীরে ও দ্রুতগতিতে হাঁটতে হবে, মোট ৩০ মিনিট। সবশেষে কয়েক মিনিট কুলডাউন করতে হয়।

এই পদ্ধতির অনেক উপকার; উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। বয়সজনিত পেশিক্ষয় কম হয়। আর এতে সব মিলিয়ে যে ক্যালরি পোড়ে, তা আপনার ওজনকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ধরে রাখতেও সহায়তা করে। সময় কম লাগে বলে এই পদ্ধতির চর্চা চালিয়ে যাওয়া সহজ। যেকোনো ব্যায়ামের উপকার পেতে নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া আবশ্যক। তিন মিনিটের ১০টি অডিও ক্লিপ দিয়ে প্লে–লিস্ট সাজিয়ে নিলে এই তিন মিনিটের হিসাবও করা যায় অনায়াসে। তা ছাড়া এই চর্চায় জয়েন্টের ওপরেও বাড়তি চাপ পড়ে না।

সিদ্ধান্ত আপনার

দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি সরাসরি কমিয়ে আনতে পারে বলে সুস্থ থাকার জন্য জাপানি পদ্ধতিটিই বেশি ভালো। আপনি চাইলে কেবল এটির চর্চাই করতে পারেন। তবে সারা দিনে বহু কদম হাঁটার উপকারিতাও অস্বীকার করার উপায় নেই। আপনি চাইলে এমনভাবে জীবনধারা সাজিয়ে নিতে পারেন, যাতে ৩০ মিনিট জাপানি পদ্ধতিতে হাঁটা হয়, আবার সারা দিনের অন্য সময়েও বেশ খানিকটা হাঁটা হয়। ৩০ মিনিট জাপানি পদ্ধতিতে হাঁটার সময়ই তো আপনি কদম গণনায় বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবেন। সারা দিনের বাকি সাড়ে ২৩ ঘণ্টায় দৈনন্দিন কাজের মধ্যেও বেশ খানিকটা হাঁটার চর্চা রাখতে পারেন। আর অবশ্যই যেকোনো ব্যায়ামের ক্ষেত্রেই খেয়াল রাখুন সঠিক দেহভঙ্গির দিকে। সব মিলিয়ে সুস্থ থাকবেন আপনি।