বিয়ে উৎসব, অতিথি আপ্যায়নেও পান–সুপারির আয়োজনকে সৌজন্য হিসেবে গণ্য করা হয়
বিয়ে উৎসব, অতিথি আপ্যায়নেও পান–সুপারির আয়োজনকে সৌজন্য হিসেবে গণ্য করা হয়

শুধু পান–সুপারিও কি জর্দা ও তামাক পাতার মতো ক্ষতিকর?

বাংলাদেশে পান, সুপারি, জর্দা, গুল, সাদাপাতা, খইনি ইত্যাদি তামাকজাত দ্রব্য মুখে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস শহর ও গ্রামীণ উভয় সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিয়ে উৎসব, অতিথি আপ্যায়নেও পান–সুপারির আয়োজনকে সৌজন্য হিসেবে গণ্য করা হয়।

গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ২০ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন। তামাকের ব্যবহার মুখের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পিরিওডোন্টাইটিস (দাঁতের সহায়ক হাড় ও নরম টিস্যুর রোগ) এবং দাঁতের ক্ষয় বা দাঁত পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মুখের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক বিশেষ করে এন-নাইট্রোসামিন (টিএসএনএএস) থাকে, যা মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

শুধু পান–সুপারি কী ক্ষতি করে

  • জর্দা, গুল, সাদাপাতা ক্ষতিকর, সেটা পরীক্ষিত সত্য। অনেকে বলেন, ‘আমি তো শুধু পান খাই, জর্দা–সাদা পাতা খাই না।’ কিন্তু জর্দা ছাড়া শুধু পান-সুপারি খেলেও মুখগহ্বরের ক্ষতি হতে পারে। এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব নিচে তুলে ধরা হলো:

  • পানের পাতা প্রাকৃতিক উপাদান হলেও তা সুপারি, চুন, খয়ের ইত্যাদি দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া হয়। এতে মুখের স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হয়। এ ছাড়া পান খেলে দাঁতে কালচে দাগ পড়ে বা স্টেইন হয়। পানের রং ও চুনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে দাঁতে স্থায়ী দাগ পড়ে, যা শুধু সৌন্দর্য নষ্ট করে না বরং দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে।

  • সুপারি বা সুপারির বীজ মুখে চিবানোর সময় দাঁতে ঘর্ষণ তৈরি করে। এ ঘর্ষণের ফলে দাঁতের গঠন ক্ষয় হতে পারে, যা পরে দাঁতের সংবেদনশীলতা ও ব্যথার কারণ হয়। এ ছাড়া সুপারিতে রয়েছে অ্যারেকলিন নামক রাসায়নিক, যা একটি সাইকোঅ্যাকটিভ উপাদান। নিয়মিত গ্রহণের ফলে এটি আসক্তি তৈরি করে।

  • যাঁরা নিয়মিত সুপারি চিবিয়ে থাকেন, তাঁদের অনেকের ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রসিস নামের একটি সমস্যা হতে পারে। এতে মুখের ভেতরের টিস্যু শক্ত হয়ে যায়, ফলে মুখ পুরোপুরি খোলা যায় না। এটি একটি ক্যানসারপূর্ব অবস্থা, যা সময়মতো ধরা না পড়লে মুখগহ্বরের ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। শুধু সুপারিও মুখের কোষে জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে ক্যানসারের কারণ হতে পারে।

  • পানের অতিরিক্ত ব্যবহারে মুখে লালা নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা পরে মুখের স্বাভাবিক স্বাদ গ্রহণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন পান খেলে মুখে টক বা তিক্ত স্বাদ অনুভূত হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত চুন ও সুপারির সংমিশ্রণে গলা ও পাকস্থলীতেও সমস্যা দেখা দেয়।

ড. অরূপ রতন চৌধুরী, ভিজিটিং প্রফেসর, ডেন্টাল সার্জারি বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা