বয়স্কদের প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র্য আনুন
বয়স্কদের প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র্য আনুন

বাড়ির বয়স্ক সদস্য খেতে না চাইলে কী করবেন

অনেক বাড়িতেই দেখা যায়, বাসার প্রবীণ মানুষটি ঠিকমতো খাবার খাচ্ছেন না। কোনো খাবারই তাঁদের খেতে ইচ্ছা করে না। আপনজনেরা তখন চিন্তায় পড়ে যান, কী হলো? কী করা যায়? আসুন, একটু জানার চেষ্টা করি কেন বয়স্কদের খাবারে অরুচি হয়।

শারীরিক অসুস্থতা

  • বয়স বাড়লে পাকস্থলী ও অন্ত্রের বিভিন্ন রকম জটিলতা শুরু হয়। অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যাগুলো অহরহই হয়। আর পেটের সমস্যা হলে তো একদম খেতেই ইচ্ছা করে না।

  • ডায়াবেটিস, ক্রনিক কিডনির রোগ, লিভারের অসুখ, ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস বা যেকোনো ব্যথা ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে খাওয়ার রুচি কমে যায়।

  • বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন কমতে থাকে। আবার বয়স বেড়ে গেলে শরীরে মেটাবলিজম কমে যায়, ফলে খাবারের আগ্রহ কমে।

  • বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে আর অনেক রকমের ওষুধ খেতে হয়। এর মধ্যে অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে।

  • বেশির ভাগ মানুষের বয়স হয়ে গেলে দাঁতে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। দাঁত পড়ে যাওয়া, মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁতব্যথা অন্যতম। এমন সমস্যায় খাবার চিবানো ও খেতে অসুবিধা হয়।

  • বয়স হয়ে গেলে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে খাবারের আগ্রহ কমে।

  • নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, যেমন স্ট্রোক, পারকিনসনস ডিজিজ ও ডিমেনশিয়ায় খাওয়ার রুচি কমে যায়।

মানসিক কারণ

  • একাকিত্ব, ডিপ্রেশন ও অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। আবার মানসিক রোগের ওষুধের কারণেও খাবারে অরুচি হয়।

  • ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমারস ডিজিজের কারণে বয়স্ক মানুষেরা অনেক সময় না খেয়েও মনে করেন খেয়েছেন বা খাওয়ার কথা ভুলে যান।

সামাজিক কারণ

  • বয়স্কদের খাবারে আগ্রহ কমে যাওয়ার একটা বড় কারণ জীবনসঙ্গী হারানো বা একাকিত্ব। আবার এখন একক পরিবার হওয়ার কারণে পরিবারের সবার সঙ্গে না খেতে পারার কারণেও অনেক বয়স্ক মানুষের খেতে ইচ্ছা করে না। খাবারে বৈচিত্র্য আনতে না পারলেও এই সমস্যা দেখা দেয়। একই খাবার খেতে খেতে বয়স্ক মানুষেরা বিরক্ত হয়ে যান।

  • অর্থনৈতিক কারণে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার কিনতে না পারাটাও একটা কারণ।

সমাধান কী

  • প্রথমেই দেখতে হবে খাবারে অরুচি কোনো রোগের কারণে হচ্ছে কি না। অরুচির সঙ্গে যদি ওজন কমে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।

  • একবারে অনেক খাবার না দিয়ে বারবার অল্প অল্প করে খাবার দিতে হবে।

  • পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে পারলে বয়স্করা সবার সঙ্গে গল্প করতে করতেই খাবেন। মাঝেমধ্যে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনেরা মিলে খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে।

  • একই খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র্য আনুন। চেষ্টা করুন বয়স্কদের নতুন কোনো পদ বানিয়ে খাওয়াতে।

  • চিকিত্সকের পরামর্শে মাল্টিভিটামিন বা পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।

  • সম্ভব হলে প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করাতে হবে।

ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা