আর্থ্রাইটিসে কিছুটা আরাম দেবে যে ৮ খাবার

সামান্য হাঁটাচলা করাটাই যে কতটা কষ্টের, তা আর্থ্রাইটিসে ভোগা মানুষমাত্রই বলতে পারবেন। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজও কঠিন হয়ে ওঠে এ সমস্যায়। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই হাড়ের সংযোগস্থল ক্ষয় হতে থাকে। তাই বয়স্করাই প্রধানত আর্থ্রাইটিসে ভুগে থাকেন। আর্থ্রাইটিসের কারণে হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া, জয়েন্ট লাল হয়ে যাওয়া, স্টিফনেসের (শক্ত বা জড় হয়ে যাওয়া) মতো সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসার মাধ্যমে আর্থ্রাইটিসের পুরোপুরি সমাধান হয় না। তবে এমন কিছু খাবার রয়েছে, যা আর্থ্রাইটিসের রোগীসহ সব বয়সী মানুষের হাড়ের কার্যকারিতা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক আর্থ্রাইটিসের জন্য উপকারী আটটি খাবারের কথা।

১. সয়াবিন

সয়াবিনের প্রাকৃতিক ওমেগা-৩ ফ্যাট জয়েন্টের প্রদাহজনিত প্রোটিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে

সয়াবিন ও টোফুতে প্রাকৃতিক ওমেগা-৩ ফ্যাট থাকে। উপকারী ওমেগা-৩ জয়েন্টকে আরাম দেওয়ার পাশাপাশি জয়েন্টের প্রদাহজনিত প্রোটিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা আর্থ্রাইটিসের ব্যথা বেড়ে যাওয়ার সময় বেশি সক্রিয় থাকে।

অনেকের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সপ্তাহে কয়েকবার খাদ্যতালিকায় সয়া যোগ করলে জয়েন্টের শক্ত ভাব ধীরে ধীরে হালকা হয়। সহজ এই খাবারটি একদিকে ভালো মানের প্রোটিন দেয়, অন্যদিকে প্রদাহ কমাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।

২. এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল

খাবারের সঙ্গে একটু অলিভ অয়েলের ব্যবহার শরীরের জয়েন্টের চাপ কমাতে সাহায্য করে

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে ওলিওক্যানথাল নামের একটি যৌগ থাকে। এই ওলিওক্যানথাল হালকা প্রদাহবিরোধী ওষুধের মতোই কাজ করে। তাই সালাদ বা খাবারের সঙ্গে একটু অলিভ অয়েলের ব্যবহার শরীরের জয়েন্টের চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনি চাইলে রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, অলিভ অয়েল হৃৎস্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

৩. চেরি

চেরি—বিশেষ করে টক জাতের চেরিগুলোয় অ্যানথোসায়ানিন থাকে

চেরি—বিশেষ করে টক জাতের চেরিগুলোয় অ্যানথোসায়ানিন থাকে। মজার বিষয় এই অ্যানথোসায়ানিনের কারণেই চেরির রং লাল হয়। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায়, চেরি গেঁটেবাতের (গাউট) আক্রমণ কমাতেও সহায়ক, যা সাধারণত জয়েন্টে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে। আপনি সপ্তাহে ২–৩ বার একটা ছোট বাটিভর্তি চেরি ফল বা এক গ্লাস মিষ্টি ছাড়া চেরির জুস খেতে পারেন। এটি আপনার আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় একটু হলেও আরাম দেবে।

৪. ব্রকলি

হাড়ের জয়েন্টকে শক্তিশালী করতে দুপুর বা রাতের খাবারের সঙ্গে রাখতে পারেন এক বাটি সেদ্ধ করা ব্রকলি

ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে থাকে। এই দুটি ভিটামিন তরুণাস্থি (কার্টিলেজ) এবং হাড়ের দৃঢ়তা বাড়াতে সহায়তা করে। ব্রকলিতে সালফোরাফেন নামের একটি প্রাকৃতিক যৌগ থাকে, যা অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির তরুণাস্থির ক্ষয় হয়ে যাওয়াকে ধীর করে। তাই আপনার হাড়ের জয়েন্টকে শক্তিশালী করতে দুপুর বা রাতের খাবারের সঙ্গে রাখতে পারেন এক বাটি সেদ্ধ করা ব্রকলি।

৫. গ্রিন টি

গ্রিন টি খেলে সতেজতা আসে, স্বাস্থ্যও ভালো থাকে

গ্রিন টিতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ‘ইজিসিজি’ (এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট)। এটি তরুণাস্থির ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। সকালে বা সন্ধ্যায় এক কাপ গ্রিন টি শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ প্রশমিত করতে সহায়তা করতে পারে। অভ্যন্তরীণ প্রদাহ প্রায়ই বাতের ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া চিনিযুক্ত চা, কফি বা সফট ড্রিংকসের পরিবর্তে গ্রিন টি পান করলে সতেজতা আসে, স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

৬. ভিটামিন সি-যুক্ত ফল

ভিটামিন সি–যুক্ত ফল জয়েন্টের জন্য উপকারী

কমলালেবু, লেবু ও আঙুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা শরীরে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। কোলাজেন প্রোটিন জয়েন্টকে নরম ও সুরক্ষিত রাখে। যাঁরা প্রতিদিনের ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ করতে পারেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই জয়েন্টের ফোলা কম হওয়ার কথা জানান।

প্রতিদিন একটি ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়, যা দ্বিগুণ উপকারী। প্রতিদিন ভিটামিন সি–যুক্ত ফল খেলে একদিকে জয়েন্টের জন্য উপকারী, অন্যদিকে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে—দুই দিক থেকেই এটি উপকারী।

৭. হলুদ

হলুদের যৌগ ‘কারকিউমিন’ প্রদাহ কমায়

হলুদের যৌগ ‘কারকিউমিন’ প্রদাহ কমায়। হলুদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিন হাঁটুর আর্থ্রাইটিসের উপশমে ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর ওষুধ আইবুপ্রোফেনের মতোই কার্যকর।

৮. রসুন

রসুনে এমন কিছু প্রাকৃতিক যৌগ রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে

রসুনে এমন কিছু প্রাকৃতিক যৌগ রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অস্টিওআর্থ্রাইটিসে তরুণাস্থির ক্ষতি ধীর করতে সাহায্য করতে পারে। যাঁরা নিয়মিত রসুন খান তাঁদের প্রায়ই সারা দিন হাঁটাচলা করতে সহজ হয়েছে বলে মনে করেন। বেশির ভাগ খাবারের সঙ্গেই রসুন খাওয়া যায়। তাই ভালো উপকার পেতে আপনার খাদ্যতালিকায় রসুন রাখতে পারেন।

সবশেষে

এই খাবারগুলো আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে বা উপশমে সহায়ক হতে পারে। তবে এগুলো চিকিৎসার বিকল্প নয়। তাই খাদ্যতালিকায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সূত্র: এমএসএন