১৫ কেজি ওজন কমাতে বাসার খাবারে প্রাধান্য দিয়েছি: আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ
ছোটবেলা থেকেই ফিট ছিলেন মডেল ও অভিনেত্রী আফিয়া তাবাসসুম, বর্ণ নামেই মানুষ যাঁকে চেনেন বেশি। ‘এই কৃতিত্ব অবশ্য আমার মা–বাবার। সব সময় তাঁরা আমার জন্য বাসায় তৈরি পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতেন,’ বলছিলেন বর্ণ। তা ছাড়া ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, অভিনয় ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই মডেল। সব মিলিয়ে ওজনটাও ছিল ঠিকঠাক।
২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর হোস্টেলে কাটানো পাঁচ বছরের জীবনটা ছিল তাঁর নিয়মহীন। সময়মতো না খাওয়া, বেশির ভাগ সময় বাইরের অস্বাস্থ্যকর ফাস্ট ফুড খাওয়ার ফলে ওজনও আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে শুরু করে। সে সময় বেশ কিছু টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু মডেলিং ক্যারিয়ারে বাদ সাধছিল অতিরিক্ত ওজন। বলছিলেন, ‘চলাফেরায় একধরনের অস্বস্তি বোধ করছিলাম; দম, শক্তি সবই কমে আসছিল।’ তখন বর্ণের ওজন ছিল ৬৩ কেজি। তাঁর উচ্চতা ও ক্যারিয়ার—কোনোটির সঙ্গেই যা ঠিক যাচ্ছিল না।
সে সময় হুট করে ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও করোনাকালে সঠিক ওজনে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন বর্ণ। তিনি বলেন, ‘বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে সুস্বাস্থ্য অর্জনই ছিল মূল লক্ষ্য।’ ৮ মাসের ওজন নিয়ন্ত্রণের এই যাত্রার প্রথম পর্যায়ে বর্ণ কমিয়েছিলেন ১০ কেজি। পরের বছর কমান আরও পাঁচ কেজি। তখন বর্ণের ওজন ৪৮ কেজিতে ফিরে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে বর্ণ ফিরে পেলেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত ওজন।
‘বাসার খাবার’ খেতে হবে, খেতে হবে ‘সময়মতো’
শুধু বাসার খাবার খেয়েই এক মাসে কমেছিল পাঁচ কেজি, জানালেন বর্ণ। তিনি বলেন, ‘তখনো খাবারের পরিমাণের ওপর নজর দিইনি। তবে সময় মেনে খেতাম।’ সকালের খাবার সকাল ১০টার আগে, দুপুরের খাবার বেলা ২টার মধ্যে এবং রাতের খাবার ৮টার আগে খেতে শুরু করেন তিনি। আর প্রতিটি রান্নাই হতো বাসায়। এতে এক মাসেই লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখেছিলেন।
Also Read: ১৬০ কেজি থেকে ওজন এখন ৭৩ কেজি
অনুপ্রেরণা জোগাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
ওজন কমানোর নানান বিষয় এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে নানান ভিডিও ও লেখা। এসব বর্ণকে বেশ অনুপ্রাণিত করে।
প্রতিদিন আধা ঘণ্টা সাইক্লিং
বর্ণ বলেন, ‘কম খেয়ে ওজন কমানোর একটি সমস্যা হচ্ছে, শরীরের পেশি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। দেখা যায়, পেট কিংবা গালের মাংসপেশি না কমলেও ঊরু কিংবা কোমর অতিরিক্ত শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার উল্টোটাও হয়।’ শরীরে পেশির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে আধঘণ্টা সাইক্লিং করেছেন তিনি।
বাদ দিতে হবে চিনি
ওজন কমাতে চাইলে সবার আগে চিনি খাওয়া বাদ দিতে হবে, বলেন বর্ণ। এটি কষ্টের কাজ, তবে চিনির আসলে কোনো ভালো দিক নেই।
সকালের নাশতায় স্মুদি
ওজনকে হাতের মুঠোয় রাখতে সকালে নিয়ম করে স্মুদি খেতে শুরু করেন বর্ণ। হাতের কাছে থাকা রঙিন ফলমূল, যেমন গাজর, কমলা, আপেলের সঙ্গে আদাকুচি মিশিয়ে জুসারে দিয়ে কোনো রকম পানি-চিনি ছাড়াই তৈরি করতেন স্মুদি। বলছিলেন, ‘আদা শরীরের জন্য ছাঁকনির মতো কাজ করে আর রঙিন ফলমূল স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বকের জন্যও ভালো।’ মাঝেমধ্যে বিটরুট, আপেল, গাজর ও মধু দিয়েও স্মুদি তৈরি করে খান তিনি।
মুখের মেদ কমাতে নিশ্বাসের ব্যায়াম
নাক নিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে, বলছিলেন বর্ণ। এমন আরও বেশ কিছু শ্বাসের ব্যায়াম ও মুখের যোগব্যায়াম করে মুখের মেদ কমিয়েছেন বর্ণ।
দরকার পুষ্টিবিদের পরামর্শ
ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নিজেকে খুব কঠিন জীবনযাপনের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন বর্ণ। ফলে নানা মানসিক সমস্যা হচ্ছিল। অল্পেই মেজাজ খারাপ হচ্ছিল, মাথাব্যথা ছাড়াও ছিল নানা সমস্যা। তখন একজন পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হলে তিনি জানান, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কমে গেছে ওজন। ৫ ফুট সাড়ে ৬ ইঞ্চি উচ্চতার জন্য ওজন হওয়া চাই অন্তত ৫০ কেজি। পরামর্শ অনুযায়ী কঠিন ডায়েট থেকে তখন নিজেকে বের করে আনেন বর্ণ।
Also Read: ওজন কমাতে তাড়াহুড়া নয়