
মাছের তেল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস। উপাদানটি হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্য দারুণ উপকারী এবং মাছের তেল থেকে পাওয়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাস্থ্যকর।
উদ্ভিজ্জ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের তুলনায় মাছের তেল থেকে পাওয়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উপকারিতা অনেক বেশি। মাছের তেলের দুটি প্রধান ধরনের ওমেগা-৩ হলো আইকোসাপেন্টায়েনোয়িক অ্যাসিড (ইপিএ) এবং ডোকোসাহেক্সায়েনোয়িক অ্যাসিড (ডিএইচএ)। আর উদ্ভিজ্জ ওমেগা-৩ মূলত আলফা-লাইনোলেনিক অ্যাসিড (এএলএ)। খাবারের সঙ্গে আমরা অনেক সময় অজান্তেই ওমেগা-৩–এর বদলে ক্ষতিকর চর্বি গ্রহণ করি, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জেনে নিন মাছের তেলের ১১টি উপকারিতা।
গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রচুর মাছ খান, তাঁদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। মাছ বা মাছের তেল হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। মাছের তেল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও রক্তচাপ কমাতে কার্যকর। এ ছাড়া ধমনি অনমনীয় করে, এমন প্লাক তৈরি রোধ করে।
কিছু গবেষণা থেকে অনুমান করা হয়, ওমেগা-৩ হৃদ্রোগের তীব্রতা এবং হৃদ্রোগে মৃত্যুহার কমাতে সহায়ক। স্ট্রোক প্রতিরোধ বা স্ট্রোক থেকে মৃত্যুর হার কমানোর সঙ্গে ওমেগা-৩–এর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
তরল ছাড়া মস্তিষ্কের ওজন নিলে এতে প্রায় ২০ শতাংশ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যার মধ্যে ওমেগা-৩ অন্তর্ভুক্ত। অতএব মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য ওমেগা-৩ অপরিহার্য। কিছু নির্ভরযোগ্য গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের রক্তে ওমেগা-৩–এর মাত্রা কম থাকে। বেশি পরিমাণে ওমেগা-৩ গ্রহণ বিষণ্নতার মতো কিছু মানসিক সমস্যার লক্ষণগুলোর সূত্রপাত রোধ করতে বা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
যাঁরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা-৩ গ্রহণ করেন না, তাঁদের চোখের সমস্যার ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া বৃদ্ধ বয়সে দৃষ্টিশক্তির অবনতি হতে শুরু করে, যার অন্যতম কারণ এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এএমডি)। মাছ খেলে এএমডির ঝুঁকি কমতে পারে।
মাছের তেলে প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। তাই দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায় মাছের তেল খাওয়া উপকারী হতে পারে। মাছের তেলের সাপ্লিমেন্টগুলো রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জয়েন্টের ব্যথা এবং ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা।
আমাদের ত্বকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড। মাছের তেল এবং মাছের তেলের সাপ্লিমেন্ট খেলে সোরিয়াসিস, ডার্মাটাইটিসসহ কয়েকটি চর্মরোগ দ্রুত সেরে ওঠে।
ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে, এমনকি তারপরও ভ্রূণের প্রাথমিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকদের ধারণা, অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েরা মাছের তেলের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশের উন্নতি ঘটে, দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়, অ্যালার্জির আশঙ্কা কমে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
লিভার আমাদের শরীরের বেশির ভাগ চর্বি প্রক্রিয়াজাত করে এবং ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। মাছের তেল লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের লক্ষণ দূর করতে এবং লিভারে চর্বির পরিমাণ কমাতে মাছের তেল বেশ কার্যকর।
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি) হলে শিশু খুব বেশি চঞ্চল এবং অমনোযোগী হয়ে ওঠে। মাছের তেলের সাপ্লিমেন্ট শিশুর এডিএইচডির লক্ষণগুলো কিছুটা উপশম করতে পারে।
অনেকের ক্ষেত্রেই বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমতে থাকে। তবে যাঁরা বেশি মাছ খান, তাঁদের মস্তিষ্ক বৃদ্ধ বয়সেও তুলনামূলকভাবে বেশি সচল থাকে। ২০২৩ সালে ৪৮টি গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট ডিমেনশিয়া এবং বয়সের কারণে জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পাওয়া ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সহায়ক।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ হাঁপানিজনিত প্রদাহ, এর বিভিন্ন লক্ষণের তীব্রতা এবং এমনকি হাঁপানির ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমাতেও সাহায্য করতে পারে। তবে এই প্রভাব নিশ্চিত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ক্ষেত্রে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও উপকারী হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের মতে, নারীদের প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ মিলিগ্রাম এবং পুরুষদের প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করা উচিত।
সামুদ্রিক খাবারে অ্যালার্জি থাকলে বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আপনার মাছের তেলের সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে আপনার যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, আপনি যদি জন্মবিরতিকরণ পিল কিংবা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাহলে চিকিৎসককে না জানিয়ে মাছের তেলের সাপ্লিমেন্ট খাবেন না, এটা বিপজ্জনক।
২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডোকোসাহেক্সায়েনোয়িক অ্যাসিড (ডিএইচএ)–সমৃদ্ধ মাছের তেলের সাপ্লিমেন্ট স্থূলকায় পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়। তবে এসব ফলাফল প্রমাণ করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
সূত্র: হেলথলাইন