শীত এলেই নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে
শীত এলেই নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে

নিউমোনিয়া ঠেকাতে যা করবেন

আজ ১২ নভেম্বর বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। নিউমোনিয়া নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর ২৫ লাখের বেশি মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, যার অর্ধেকের বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। বাংলাদেশে এখনো শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া।

নিউমোনিয়া ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি সংক্রমণ। এটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের মাধ্যমে হয়। সংক্রমণের ফলে ফুসফুসের ছোট বায়ুথলিগুলো তরল বা পুঁজে ভরে যায়, ফলে অক্সিজেন গ্রহণে বাধার সৃষ্টি হয়। নিউমোনিয়া শুধু একটি রোগ নয়, এটি আমাদের সামাজিক ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতিফলন। টিকাদান, সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও সচেতনতা—এই তিনটি উপায়ে রয়েছে প্রতিরোধের চাবিকাঠি।

কীভাবে ছড়ায়, কারা ঝুঁকিতে

বাতাসে থাকা জীবাণু নিশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করলে এর সংক্রমণ ছড়ায়। সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। আর দূষিত বস্তু বা হাতের মাধ্যমে মুখ-নাক স্পর্শ করলেও হয়।

পাঁচ বছরের কম বয়সী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণেরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। এ ছাড়া দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ব্যক্তি, ধূমপায়ী ও অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তি, দূষিত পরিবেশে বসবাসকারী মানুষদেরও নিউমোনিয়া বেশি হতে পারে।

উপসর্গ ও চিকিৎসা

নিউমোনিয়ার উপসর্গ বয়স ও সংক্রমণের ধরনভেদে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত হঠাৎ জ্বর ও কাঁপুনি, কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, ক্ষুধামন্দা বা শিশুদের ক্ষেত্রে খাওয়ায় অনীহা, বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি বা মানসিক অস্থিরতা পর্যন্ত হতে পারে।

নিউমোনিয়ায় গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়, বিশেষত শিশু ও প্রবীণদের। চিকিৎসা নির্ভর করে সংক্রমণের কারণের ওপর। ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়।

রোগের তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে সেটি মুখে খাওয়ার বা ইনজেকশন হতে পারে। ভাইরাল নিউমোনিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। বিশ্রাম, তরল খাবার ও উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করলে এটি ভালো হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে পানিশূন্যতা থাকলে শিরায় স্যালাইন দিতে হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। এটি প্রতিরোধে কিছু কার্যকর পদক্ষেপের একটি টিকা গ্রহণ। নিউমোকোক্কাল টিকা ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিউমোনিয়া প্রতিরোধে কার্যকর। বিশেষত, যাঁরা ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের অবশ্যই নেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সুষম খাদ্য গ্রহণে নিউমোনিয়াসহ সব রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে। হাত নিয়মিত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে, যেসব স্থানে জনসমাগম বেশি, সেখানে মাস্ক পরে যেতে হবে। করতে হবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকার অভ্যাস। ধূমপান পরিহার করতে হবে।