
নভেম্বর ডায়াবেটিস সচেতনতা মাস। এ উপলক্ষে কংগ্রেসিয়া ও প্রথম আলোর আয়োজনে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত এক মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দেশের কয়েকজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘ডায়াবেটিস আমার, দায়িত্বও আমার’। সহযোগিতায় ছিল হেলদি লিভিং ট্রাস্ট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন। আলোচনায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি এবং বারডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. ফারিয়া আফসানা’র বক্তব্যটি এখানে তুলে ধরা হলো।
ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ। খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭ এবং খাওয়ার পরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৯ থেকে ১০–এর মধ্যে থাকাই যথেষ্ট।
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের চিকিৎসাটা শুরু করতে হবে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও কায়িক শ্রম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সঙ্গে প্রয়োজনমতো ওষুধ অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
মূলত যে কারণে ডায়াবেটিস হয়, তার প্রধান দুটি হচ্ছে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমে যাওয়া অথবা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়া। এ দুটি বিষয়কে লক্ষ্য করেই বাজারে থাকা ওষুধগুলো তৈরি করা হয়েছে।
এ ছাড়া এখন নতুন নতুন ইনসুলিন এবং অন্যান্য ইনজেক্টেবল কিছু এজেন্টও পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো শুধুই যে ডায়াবেটিসকে লক্ষ্য করছে, সেটিই নয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিসের যে জটিলতাগুলো আছে, সেগুলোও প্রতিরোধ করতে পারছে, যেমন হৃদ্রোগ।
টাইপ-১ ডায়াবেটিসের একমাত্র চিকিৎসাই ইনসুলিন। কারণ, রোগীর শরীরে ইনসুলিনের অভাব এবং এই ইনসুলিনের অভাবটা আমরা পূরণ করছি একটি হরমোন ওষুধ দিয়ে। ইনসুলিন টাইপ-১ ডায়াবেটিসের জন্য জীবন রক্ষাকারী একটা হরমোন ওষুধ। সুতরাং এটার কোনো বিকল্প নেই।
আবার টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও কিছু কিছু ওষুধ আমরা ব্যবহার করি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য। এ ছাড়া রক্তে গ্লুকোজ শোষণ হবে, এটা কমানোর জন্যও একধরনের ওষুধ আছে। রোগীর জটিলতা বিবেচনা করে চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন তাঁর কোন ধরনের ওষুধ প্রয়োজন।
ওষুধ বা ইনসুলিন নিয়ে আমাদের অনেক ভুল ধারণা আছে। অনেকে ভাবেন ওষুধ খাওয়া মানে ডায়াবেটিসের শেষ অবস্থা বা ওষুধের মাধ্যমে কিছু সময় চেষ্টা করে দেখা যাক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হয় কি না।
আসলে এর খুব বেশি সুযোগ নেই। কারণ, ওষুধ মানেই খারাপ কিছু না। ওষুধ খাওয়া মানেই যে তাঁর সারা জীবন ওষুধটা খেতে হবে, এমন কোনো ব্যাপার নেই। অবশ্যই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এবং তাঁর অন্যান্য পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে, গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকলে অনেক সময় ওষুধটা বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে।
এটা অবশ্যই অবস্থা হিসেবে ঠিক করতে হবে। আরেকটি ভুল ধারণা হলো ইনসুলিন। ইনসুলিন নিতে গেলেই সবাই খুব ভয় পায়। ভাবে, ইনসুলিনে ব্যথা পাব, ইনসুলিনই হয়তো ডায়াবেটিসের শেষ চিকিৎসা, এটা থেকে হয়তো আর ফেরত আসতে পারব না।
এ রকম ধারণাটা আসলে ঠিক নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিনের ব্যবহার (সার্জারির আগে বা গর্ভাবস্থায়) সাময়িক সময়ের জন্য। এ ক্ষেত্রে ওই নির্দিষ্ট সময়টা পার হয়ে গেলে আবারও আমরা মুখে খাবার ওষুধে ফিরে আসতে পারি।
আর ইনসুলিনের এখন অনেক আধুনিক ডিভাইস, সুই চলে এসেছে; যেটা দিয়ে অনেক কম ব্যথায় সহজে ইনসুলিন ডেলিভারি করা সম্ভব হয়। ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য কিন্তু এখন ইন্ডিকেশন চলে এসেছে মুখে খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করার জন্য। সুতরাং মুখে খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিন ব্যবহার করে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ থাকতে পারেন।