সিনেমা হল, পুল, জিম থেকে পারলার সবই আছে এই বাড়িতে

আবাসিক একটা বাড়িতে কত রকম সুবিধা যে যুক্ত করা যায়, তার চমৎকার এক উদাহরণ ‘দিনা বাড়ি’। ঢাকার বাইরের সেই বাড়ি ঘুরে একটা জিজ্ঞাসাই জেগেছিল মনে, ‘কী নেই এই বাড়িতে!’ লেখাটা পড়ে শেষ করুন, এই ধাঁধা আপনাকেও মাথা চুলকাতে বাধ্য করবে। আসলেই তো, কী নেই!

বাড়ি চিনতে কোনো অসুবিধা হলো না। এমনকি কাউকে জিজ্ঞেস করারও দরকার পড়ল না। স্থপতির দেওয়া গুগল ম্যাপ ধরে ঢাকা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে আমরা রওনা হয়েছিলাম। 

এলাকার কাছে আসতেই বাড়িটা আলাদা করে চোখে পড়ল। মফস্‌সলের আর দশটা বাড়ি থেকে পুরোপুরি আলাদা। ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান ও নাসরিন সুলতানা দম্পতির ‘দিনা বাড়ি’। বাড়ির বাসিন্দাদের যে গাছপালা, পানি, মাটি, ফুল, পাখি পছন্দ, সেটা বাড়ির গেটে পা রেখেই বোঝা যায়। এই বাড়িই ২০২৪ সালের এপ্রিলে ‘আইএবি ইন্টেরিয়র ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ এ আবাসিক বাড়ির অন্দর বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। ডোমাস আর্কিটেক্টের স্থপতি মুস্তফা আমীনের নকশা করা এই বাড়িতে গ্রাম–শহর মিলেমিশে একাকার।

যেভাবে স্থপতির খোঁজ

ঢাকার তেজগাঁও লিংক রোডের নিনাকাব্যে তখন সবে অফিস শুরু করেছে ইপিলিয়ানো গ্রুপ। সেখানেই একদিন অফিসের কাজে যান মাহবুবুর রহমান। আর গিয়েই অফিস দেখে মুগ্ধ হন। এরপর নিজেদের বাড়ি করার জন্য এমন একজন স্থপতির খোঁজ করতে শুরু করেন, যিনি তাঁদের বাড়িকে করে তুলবেন এমনই শৈল্পিক। দেখেছিলেন বান্দরবানের সাইরু হিল রিসোর্টও। এভাবেই তাঁরা স্থপতি মুস্তফা আমীনকে খুঁজে বের করেন। একদিন স্থপতির বাড়িটিও ঘুরে দেখতে যান। আর তারপরই সিদ্ধান্ত নেন, বাড়ির দায়িত্ব মুস্তফা আমীনের হাতেই ছেড়ে দেবেন।

মুস্তফা আমীন বলেন, ‘আমাকে ওনারা শুধু তাদের চাহিদাটুকু বলেছিল। তাদের কী পছন্দ, সেসব গল্প করেছে। বাকিটা আমি ইচ্ছেমতো সাজিয়েছি। আলো, হাওয়া আর সবুজ আমার নকশায় সব সময়ই প্রাধান্য পায়। এই বাড়িতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।’

পরিপাটি ওয়াশরুম

শুরুতে তিন ছেলেমেয়ের জন্য তিনটি আলাদা তলা করতে চেয়েছিলেন নাসরিন সুলতানা–মাহবুবুর রহমান দম্পতি। সেভাবেই স্থপতিকে বলেছিলেন। তাঁদের ভাবনা শুনে মুস্তফা আমীন বোঝালেন, ‘তোমাদের সন্তানেরা এখনো অনেক ছোট। এই সময় তাদের আলাদা করার কথা না ভেবে যতটা সম্ভব আগলে রাখতে পারো। এতে পারিবারিক বন্ধন আরও মজবুত হবে। পরে যখন দরকার হবে, সন্তানদের আলাদা তলায় পাঠিয়ে দিয়ো। আপাতত আমি সন্তানদের কাছাকাছি রেখেই নকশা করি।’

গাছপালাঘেরা চওড়া বারান্দা রাখা হয়েছে সন্তানদের শোবার ঘরের সঙ্গে

স্থপতির এই ভাবনার সঙ্গে মন থেকে একমত না হলেও মুখে কিছু বললেন না নাসরিন। শুধু ভাবলেন, ‘আমিই ঠিক।’ তবে সেই ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি। বাড়িতে বসবাস শুরু করার এক বছরের মধ্যেই নাসরিন সুলতানা রায় দিলেন, ‘বাবা আঙ্কেলই ঠিক ছিলেন। এখন সেটা পুরোপুরি বুঝতে পারছি। সন্তানদের কাছাকাছি রাখা খুবই জরুরি।’

মেয়ে দিয়ানার পড়ার টেবিলের একাংশ

এই ক্ষণে বলে রাখা জরুরি, দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটির কাজে যুক্ত থাকতে গিয়েই পরিবারটির সঙ্গে মুস্তফা আমীনের দারুণ বোঝাপড়া হয়ে গেছে। নাসরিনকে নিজের মেয়েই মনে করেন মুস্তফা আমীন। আর নাসরিনও তাঁকে ‘বাবা আঙ্কেল’ বলে ডাকেন। নাসরিনের তিন ছেলেমেয়ে তাইফ, দিয়ানা ও আদিল স্থপতিকে ডাকেন ‘নানা আঙ্কেল’। এখনো তাঁদের বিভিন্ন আবদার নানা আঙ্কেলের কাছে। বাড়ির ছোট ছেলে আদিল ঘোষণা দিল, তার চেয়ে বোনের ঘরটা বেশি সুন্দর। কারণ, নানা আঙ্কেল দিয়ানাকে বেশি ভালোবাসেন। সেই সঙ্গে নানার কানে কানে গিয়ে বলেও এল, তার ঘরে নতুন আরও কী কী দরকার। সেসব করে দেবেন বলেও আশ্বাস দিলেন নানা। সারা দিন এমন ছোট ছোট অনেক ঘটনা দিয়েই বোঝা যায়, স্থপতির সঙ্গে এই পরিবারের এক আত্মীয়তার সম্পর্কই গড়ে উঠেছে।

ভবন তৈরির চ্যালেঞ্জ

দোতলার একটি লিভিং এরিয়া

কাজটি হাতে নেওয়ার পর শুরুতেই নরসিংদীতে জমিটি দেখতে যান মুস্তফা আমীন। দেখতে গিয়েই বুঝলেন, জমিটা এমনভাবে আছে যে বাড়িটি পশ্চিমমুখী করতে হবে। সাধারণত দক্ষিণমুখী বাড়িকে বেশি আরামদায়ক বলা হয়ে থাকে। সেদিক থেকে পশ্চিমমুখী বাড়ি তৈরি স্থপতিদের কাছে একধরনের চ্যালেঞ্জই। মুস্তফা আমীন বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়েই আমি বাড়িটার সামনের অংশে ল্যান্ডস্কেপিং করলাম। বাড়ির মধ্যে পানি, মাছ আর গাছপালাকে নিয়ে এলাম। বাড়িতে ঢুকেই বসার ঘরের সামনের দরজাটা ভাঁজ করে দিলে সবুজ ঘাস আর গাছপালাঘেরা উঠানটা সামনে চলে আসে।’ চমৎকার এই প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে কেউ ভাবতেও পারবে না, পশ্চিম দিকটা নিয়ে স্থপতিকে কতটা ভাবতে হয়েছে।

নিচতলায় দ্বিতীয় ড্রয়িংরুমের সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ডোর থাকায় আলো–বাতাসের কমতি নেই

বাড়িটি তৈরির আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল দীর্ঘ সময়। কাজ শুরু করার পর শেষ করতে লেগেছে প্রায় আট বছর। তবে এই পুরো সময়ই যে কাজ হয়েছে, তা নয়। কখনো বাজেট, কখনো নকশায় ছোটখাটো পরিবর্তন ইত্যাদি নানা জটিলতায় বাড়ির কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে ২০১৯ সালের শেষ দিকে এসে আবার শুরু হয় কাজ। এবার এল প্রকৃতির বাধা। করোনার আঘাতে সবাই ঘরবন্দী হয়ে পড়লেন। কাজ থেমে গেল। ব্যবসা–বাণিজ্যসহ চারদিকে অনিশ্চয়তা। নরসিংদী ছেড়ে মনোহরদীর গ্রামের বাড়িতে চলে গেলেন মাহবুব–নাসরিন দম্পতি।

বাড়িতে প্রবেশের সময় রঙিন মাছে ভরা ছোট্ট লেক আর ঘাসের লন চোখে পড়বে

পরে পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করল, কাজটা শেষ করতে চাইলেন স্থপতি। তত দিনে মাহবুব–নাসরিন গ্রামেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আরেক বিপদে পড়লেন মুস্তফা আমীন, কীভাবে তাঁদের গ্রাম থেকে ফেরাবেন! ‘তখন অনেক দিন নিজেও পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রামের বাড়ি গিয়েছি। পরিবারটির সঙ্গে গ্রামীণ পরিবেশে সময় কাটিয়েছি। আর ভেবেছি, ওরা যে যে জন্য গ্রামে থাকতে চায়, সেসবই ওদের নতুন বাড়িতে এনে দেব। সেই শর্ত দিয়েই আবার কাজ শুরু করি,’ বলছিলেন স্থপতি মুস্তফা আমীন।

ভাঙা–গড়ার খেলা

এই জায়গাটুকু পেরিয়ে গেলেই নিচতলার দ্বিতীয় বসার ঘরের দেখা মিলবে

নকশায় নানা কিছু যুক্ত করে কাজ এগোতে থাকল। শুরুতে কিছুদিন মুস্তফা আমীন তাঁর টিমের ছেলেমেয়েদের হাতে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। পরে নিজেই এই কাজের দেখভালের সিদ্ধান্ত নিলেন। কয়েকটি জায়গা মনমতো করতে ভেঙে আবার গড়েছেন। কোনো কোনো জায়গায় নতুনভাবে কিছু উপাদান যুক্ত করেছেন। তেমনই একটা জায়গা নিচতলার প্রথম বসার ঘর পেরিয়ে ভেতরের দিকের বসার ঘরে যাওয়ার পথ। শুরুতে জায়গাটা এমনভাবে করা হয়েছিল যে খাবার ঘর পেরিয়ে বসার ঘরে যেতে হতো। তাই খাবার ঘরের বাইরের দিক থেকে আলাদা একটা পথ বের করে একটা কোজি এরিয়া বানালেন স্থপতি। সেখানে ছোট্ট একটা দরজা আর কফি টেবিল পেরিয়ে এসে বসতে হয় দ্বিতীয় ড্রয়িংরুমে। যার দুই দিকে পানির লেক আর কাঠের হাঁটাপথ।

মার্বেলের তৈরি বিশাল খাবার টেবিল

পুরো বাড়িতে প্রাচীর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গাছ। উঁচু ফ্রেমের মধ্যে থরে থরে সাজানো হয়েছে নানা রকম প্ল্যান্ট। সেসবের ফাঁক গলে পুরো ভবনের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত যেমন আলো–হাওয়া আসে, তেমনি বাড়ির গোপনীয়তা বজায় থাকে।

নিচতলায় দুটি বসার ঘরের মাঝখানে আছে ১২ সিটের মার্বেলের খাবার টেবিল। মাথার ওপরে ছোট ছোট বাতির বিশাল চাক, পেছনে রঙিন একটা চিত্রকলা। খাবার ঘরের একদিকে ওপেন কিচেনের আদলে খাবার পরিবেশনের জায়গা। দুইধারে শোকেসে রাখা নানা রকম বাটি ও গ্লাসের সংগ্রহ। এর এক পাশ ধরে দরজা খুলে ভেতরে গেলেই বিশাল রান্নাঘর।

নানা রকম গ্লাসে সাজানো জুস কাউন্টার

সেখানে নানা রকম চুলা আর ওভেন। এই রান্নাঘরে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের জন্য বাড়ির একাংশে আলাদা করে একটা বিশ্রাম ও খাবার টেবিল আছে। কিচেন থেকে যেখানে সরাসরি যাওয়ার জন্য চমৎকার একটা পথ করা আছে। নিচতলার প্রথম বসার ঘরটির দেয়ালে বিশাল একটি ফ্রেম। প্রথম দেখায় যেটাকে টেরাকোটা ভেবে ভুল হবে, আসলে সেটা জামদানি ও ব্লকের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত কাঠের ফ্রেম।

টেরাকোটা নয়, জামদানি ও ব্লকের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত কাঠের ফ্রেম

ওপরে ওঠার সিঁড়ি ও লিফট পাশাপাশি। যেকোনোটা ধরে দোতলায় উঠে এলেই চোখে পড়বে নরম সোফায় সাজানো একটা বিশ্রামের জায়গা। এর একদিকে দুটি শোবার ঘর, অন্যদিকে আরও দুটি। সামনের দিকের দুটি ঘরের সঙ্গেই আছে নানা রকম ফুলের গাছ আর ঘাসে ঘেরা প্রাঙ্গণ। বকুল, কাঠগোলাপ, কাঠালিচাঁপা, কামিনীসহ অনেক রকম ফুলের গাছ। একটা বেডরুম পেরিয়ে সামনের দরজাটা খুলতেই পানির কুলকুল শব্দ আর কাঠালিচাঁপার তীব্র ঘ্রাণ নাকে এসে লাগল। অজান্তেই চোখ দুটো বুজে এল, দক্ষিণমুখী রেলিং ধরে কয়েক মিনিট কাটিয়ে দিলাম। পেছন থেকে এগিয়ে এলেন মাহবুবুর রহমান, ‘এই জায়গাটার লোভেই বাইরে থাকতে পারি না। অফিস থেকে কতক্ষণে বাসায় ফিরব, সেটাই ভাবি। রাতে যখন ফ্রেশ হয়ে এই জায়গায় এসে বসি, যেন অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে থাকি। জোছনা রাত হলে তো কথাই নেই।’

চা বা স্ন্যাকস খাওয়ার জন্য জায়গাটা জুতসই

দোতলার পেছনের অংশে বসে খাওয়ার আরও একটা জায়গা আছে। চা বা হালকা স্ন্যাকস খাওয়ার জন্য জায়গাটা জুতসই। মেঝেতে গদি পেতে জলচৌকির উচ্চতায় এই খাবার টেবিল। সঙ্গেই আছে একটা ড্রাই কিচেন। যেখান থেকে খাবারগুলো এই টেবিলে পরিবেশন করা হয়। পেছনের এই অংশে বড় কাচের জানালার বাইরে সবুজ গাছপালা।

পুরো বাড়িই ফুলদানি আর নানা রকম চিত্রকর্মের ফ্রেমে সাজানো।

তৃতীয় আর চতুর্থতলায়

অতিথিদের থাকার জন্য আলাদা ঘর আছে এই বাড়িতে

মোট ১৩ কাঠা জমির ওপর গড়ে ওঠা এই ভবনের তৃতীয় তলায় আছে আরও কয়েকটি বেডরুম। প্রতিটির সঙ্গেই আছে ওয়াশরুম। যেখানে গোসল ও টয়লেটের জায়গা কাচের দেয়ালে আলাদা করা। বাইরের আলো বাথরুমে প্রবেশের জন্য রাখা হয়েছে কাচ। এই তলায় আরও আছে একটা লাইব্রেরি।

দিনের আলোয় ঝলমলে লাইব্রেরি

এই ঘরে টিভি ছাড়াও রাখা হয়েছে আধুনিক নানা রকম সুবিধা। বসে পড়ার জন্য আছে নানা রকম সোফা ও চেয়ার। আছে একাধিক স্টোররুম। দক্ষিণ দিকে স্টেডিয়ামমুখী করে বানানো হয়েছে জিম। আধুনিক যন্ত্রপাতিতে ঠাসা এই ঘরে পরিবারের সদস্যরা একেকজন একেক সময়ে ব্যায়াম করেন। এই তলায় আরও আছে স্পা ও হেলথ সেন্টার। কারও অসুখ–বিসুখ করলে এখানে এসে চেম্বারের মতো করে রোগীও দেখতে পারবেন চিকিৎসক। এ ছাড়া স্পা ও সৌন্দর্যসেবা নেওয়ার জন্য আছে একটি ছোট্ট ঘর।

বাড়ির মধ্যে আছে নারীদের স্পা ও সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্র

চতুর্থ তলার এক পাশে পুল এরিয়া। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেই নানা রকম গেম অ্যাকটিভিটি চোখে পড়বে। আছে ক্লাইম্বিং, রোপওয়ের সুবিধাও। মূল সুইমিংপুলের সঙ্গে এখানে আরও আছে ওপেন শাওয়ার, জাকুজি, স্টোন বাথ, স্টিম বাথের সুবিধা।

সুইমিং পুল

চারতলার অন্যদিকটা খোলামেলা। এখানে অনায়াসে প্রায় ১০০ মানুষের আয়োজন করা যাবে। এই অংশের একদিকে ওভেন, গ্রিলার মেশিনসহ খাবার পরিবেশনের জন্য আছে আলাদা কাউন্টার। এখান দিয়ে একটা প্যাঁচানো সিঁড়ি উঠে গেছে ছাদে।

খোলা ছাদে পার্টি এরিয়া

যেখানে যেতে যেতেই চোখে পড়বে লন্ড্রি রুম, বর্ষায় কাপড় শুকানোর ঘর ইত্যাদি। আর ছাদে এলেই ভিন্ন পরিবেশ। প্লট প্লট করে যেখানে নানা রকম শাকসবজি আর ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। এই জায়গাটুকু যেন বাড়ির কর্তা–গিন্নির মনোহরদীর গ্রামের বাড়ির আবহকে আরও জোরালোভাবে ফিরিয়ে দিয়েছে।

আছে ফুল, ফল ও সবজি আবাদের জায়গা

এখানেই শেষ নয়

বেজমেন্টে আছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমসহ সিনেমা হল

নিচতলা থেকে ছাদ পর্যন্ত বর্ণনা পড়ে যদি মনে করেন এখানেই শেষ, তাহলেই কিন্তু ভুল হবে। কারণ, বাড়ির আসল চমক তো বেজমেন্টে। কার পার্কিং তো আছেই, আরেক পাশে করা হয়েছে ডরমিটরি। সেখানে ছয়জনের আলাদা ঘুমানোর জায়গাসহ আছে ওয়াশরুম ও টিভি দেখার ব্যবস্থা। আরেক পাশে আছে সিনেমা হল। বড় পর্দার সামনে ২১ সিটের বসার ব্যবস্থা, আলাদা করে কিছু পাতলা চেয়ারও রাখা আছে।

ভাঁড়ার ঘর

লোকজন বেশি হলে সেগুলো সেট করে দেওয়া যায়। সাউন্ড কোয়ালিটিও সিনেপ্লেক্সের মতো। এই বাইরেও বেজমেন্টে আরও আছে একটা অফিস রুম। আছে হিমাগার। গ্রাম থেকে সবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদি এনে এখানে সংরক্ষণ করা হয়। শুকনা বাজার রাখার জন্যও আলাদা একটা ঘর আছে। পাশে একটি ঘরে স্যালন। নরসুন্দর ডেকে চুল কাটানোর সব রকম সুবিধা এখানে রাখা হয়েছে। এমন ছোট ছোট বিষয়গুলো যত্ন করে বাড়ির মধ্যে যুক্ত করেছেন স্থপতি।

বাড়ির সদস্যদের একেকজন একেক সময় জিম করেন

বাড়ি ঘুরে দেখতে দেখতেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। চারতলার পার্টি এরিয়ায় এসে বসলাম আমরা। একটু পর সেখানেই মাটির চুলায় আগুন জ্বালিয়ে তৈরি হলো চিতই পিঠা। নানা রকম ভর্তা আর গরুর মাংসের সঙ্গে চিতই খেতে খেতে অতিথিরা টেবিল গরম করে ফেললেন।

আন্তর্জাতিক একটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে বাড়িটি

আকাশে বৈশাখ মাসের শেষ দিনের জ্বলজ্বলে চাঁদ। আমরা বিদায় নিয়ে লিফটে চড়লাম। লিফটে একেকটি তলা পার হচ্ছি আর স্বচ্ছ কাচের দরজা দিয়ে বাড়িটা দেখছি। রাতের উষ্ণ আলো সেখানে যেন আরেক রূপকথার জন্ম দিতে চলেছে।

(লেখাটি ২০২৪ সালে প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজন বর্ণিল বসত–এ প্রকাশিত হয়েছিল)