যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সেতু সংস্কার দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন এস এম কামালউদ্দিন। ১৯৭৩ সালে গড়ে তোলেন আবাসন প্রতিষ্ঠান কনকর্ড। এরপর আরও নানা খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে কনকর্ড। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২০০ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ করেছে তারা। তার মধ্যে সাভারের স্মৃতিসৌধ, শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শিল্প ব্যাংক ভবন, ইনডোর স্টেডিয়াম, আইডিবি ভবন, কনকর্ড পুলিশ প্লাজা অন্যতম। ২০১৬ সাল থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কনকর্ড গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কামালউদ্দিনের ছেলে শাহরিয়ার কামাল। গুলশানের কনকর্ড সেন্টারে বসে তাঁর কাছ থেকে কনকর্ডের হয়ে ওঠার গল্প শুনেছেন সানাউল্লাহ সাকিব
কনকর্ড গ্রুপের হাত ধরেই দেশে শুরু হয়েছিল সুউচ্চ ও সুন্দর ভবন নির্মাণের কাজ। এই গ্রুপের শুরু কীভাবে হয়েছিল?
১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পরপরই যাত্রা শুরু করে কনকর্ড। আমার বাবা কনকর্ডের চেয়ারম্যান এস এম কামালউদ্দিন যুদ্ধ দেখেছেন। দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখতে গড়ে তোলেন কনকর্ড। যুদ্ধবিধ্বস্ত ছয়টি সেতু সংস্কার ছিল আমাদের প্রথম কাজ। এর পর থেকে নির্মাণ খাতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছেন। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নকশা ও সুউচ্চ ভবন নির্মাণ—সব ক্ষেত্রেই কনকর্ড এগিয়ে। দেশের প্রথম তিনটি সুউচ্চ ভবন জীবন বীমা ভবন, জনতা ব্যাংক ও শিল্প ব্যাংক (বর্তমানে বিডিবিএল)—সব কটিই কনকর্ডের তৈরি। পাশাপাশি শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভিভিআইপি টার্মিনাল, আইডিবি ভবনের মতো অবকাঠামো আমাদের তৈরি। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ আমরা ৮৯ দিনে তৈরি করি। সাফ গেমসের আগে মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম তৈরি করা হয় মাত্র ৯ মাসে। বেসরকারি খাতের অনেক প্রকল্পও আমরা সময়ের আগে হস্তান্তর করেছি।
আপনার বাবা এস এম কামালউদ্দিন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন। তাঁর বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা...।
তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বাবা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (পরে বুয়েট) থেকে ১৯৬০-৬৪ সালে খুব ভালো ফল করে বের হন। এরপর চাকরি শুরু করেন দি ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডে। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, নিজে সফল হবেন। এ জন্য যুদ্ধের পর সুযোগ হলে অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখা শুরু করেন। ছয়টি সেতু সংস্কারের পর সড়কপথ উন্নয়নেও কিছু কাজ করেন। এরপর মতিঝিলের সুউচ্চ ভবনের পাশাপাশি একসঙ্গে অনেক কাজ করা হয়। বাবার লক্ষ্য ছিল, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান হবে কনকর্ড। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
আবাসনসংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠান আপনারা গড়ে তুলেছেন। আর কী কী খাতে কনকর্ডের ব্যবসা রয়েছে?
আমরা মূলত চার খাতে বড় আকারে ব্যবসা করছি। প্রথমত, আবাসন উন্নয়ন। আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট, বিলাসবহুল ও বাণিজ্যিক অ্যাপার্টমেন্ট। এই খাতে আমরা পথপ্রদর্শক। পাশাপাশি মানুষের জন্য সাশ্রয়ী প্রকল্প আমরাই প্রথম করেছি। এ ছাড়া নির্মাণ খাতে আমাদের ব্যবসা আছে। এডিসির অধীনে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পূর্তকাজের ৬০ শতাংশ আমরা করেছি। ভবন নির্মাণের সামগ্রী তৈরি আমাদের একটা অন্যতম ব্যবসা। এর মধ্যে রেডিমিক্স কংক্রিট ও পরিবেশবান্ধব ইট আছে। এ জন্য সরকারের পরিবেশ পদক পেয়েছি আমরা। চতুর্থ ব্যবসাটি হলো এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড হসপিটালিটি। ঢাকার আশুলিয়ায় কনকর্ডের আছে ফ্যান্টাসি কিংডম কমপ্লেক্স এবং চট্টগ্রামের ফয়’স লেক থিম পার্ক। আমাদের গ্রুপে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কর্মী আছেন।
আবাসনের পাশাপাশি অন্য ব্যবসাতেও গিয়েছিলেন।
সেগুলোর কী অবস্থা?
কয়েকবারই আমরা নতুন নতুন খাতে ব্যবসা করার চেষ্টা করেছি। যেসব খাতে দক্ষতা নেই ও পুরো সময় দেওয়া যায় না, সেই ব্যবসায় মুনাফা করা কঠিন। এ জন্য আমরা বের হয়ে এসেছি। আমরা পোশাক কারখানা করেছিলাম, গাড়ির ব্যবসা করেছিলাম, সেখানে সফল হতে পারিনি। পরে বের হয়ে এসেছি।
দেশে হাজারের বেশি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কনকর্ডকে কেন আলাদাভাবে দেখে মানুষ?
গুলশানের প্রথম বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট আমরাই করেছি। তখন সবাই বলেছিল, মানুষ নিজের বাড়ি ছেড়ে কেন অ্যাপার্টমেন্টে থাকবে। আমাদের বিশেষত্ব হলো, সব শ্রেণির মানুষের জন্য আমরা আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের যেমন বারিধারায় ১০-১২ হাজার বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট আছে, আবার ৫০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টও আছে। যখন ৫০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি শুরু করি, তখন সেটার দাম ছিল মাত্র ৬ লাখ টাকা। আবার বাণিজ্যিক ভবন, অফিস ভবন, দোকান আমরা সবচেয়ে বেশি নির্মাণ করেছি। ১০ হাজারের বেশি ইউনিট ইতিমধ্যে আমরা হস্তান্তর করেছি। এর মধ্যে লেকসিটি প্রকল্পে হস্তান্তর করেছি ২ হাজার ৮০০ অ্যাপার্টমেন্ট। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রকল্পে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহৃত হয়েছে। এ কারণে কনকর্ড অন্যদের থেকে আলাদা।
কনকর্ডের এই যে আলাদা সুনাম, এটা কীভাবে অর্জন করেছেন?
আমাদের চেয়ারম্যান এস এম কামালউদ্দিন শুরু থেকে যেসব নির্দেশনা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করেছেন, তা এই সুনাম অর্জনে সহায়তা করেছে। শুরু থেকে আমাদের কথা ছিল প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে। এখন পর্যন্ত আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির খেলাপ হয়নি। সময়ের আগে আমরা প্রকল্প করেছি। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি আগের চেয়ে ভালো নির্মাণসামগ্রী, নকশা দিয়ে প্রকল্প করার। প্রতিশ্রুতি, মান ও সেবার মান—এই তিন মিলে আমরা সুনাম অর্জন করেছি। খাতটি এমন, একজনকে ভালো সেবা দিলে তিনি আরও ১০ জনকে তা বলেন। কেউ খারাপ সেবা পেলে ১০০ জনের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেন।
গ্রাহককে উন্নত সেবা নাকি মুনাফা অর্জন—কোন দিতে কনকর্ডের নজর বেশি?
ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্রাহকসেবাই হলো প্রধান। ভালো গ্রাহকসেবা দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা এনে দেয়। আমরা যদি প্রতিশ্রুতিমতো সেবা দিতে পারি, গ্রাহকদের ভালো রাখতে পারি, তাহলেই মুনাফা হবে। তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে মুনাফাকে প্রাধান্য না দিয়ে ভালো সেবা দিতে হবে। পরিকল্পনামতো প্রকল্প নিতে হবে। তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা হবে।
কনকর্ড কি কোনো প্রকল্পে লোকসান করেছে?
আমরা ১ হাজার ২০০–এর মতো প্রকল্প করেছি। অনেক প্রকল্পে কনকর্ড লোকসান করেছে। লোকসানের অনেক কারণ থাকতে পারে। শুরুতে হিসাবে সমস্যা থাকতে পারে, সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে। ব্যবসায় সব সিদ্ধান্ত সঠিক না হলেই লোকসান হতে পারে। তবে লোকসানের ভয়ে প্রকল্প খারাপ করে ফেললে যে ক্ষতি হবে, তা দিয়ে মুনাফা করা সম্ভব হবে না।
আপনি কনকর্ডে যোগ দিলেন কবে?
আমি অক্সফোর্ড থেকে প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৯৫ সালে কনকর্ডে যোগ দিই। আগে থেকেই কোম্পানির সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা ছিল। বাবার সঙ্গে ছোটবেলা থেকে প্রকল্প পরিদর্শনে যেতাম। এ জন্য রড, বালু, কংক্রিট—এসবের সঙ্গে আমার যুক্ততা ছোট থেকেই। ১৯৯৫ সালে আইডিবি ভবন নির্মাণে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিই। পরে একটি কারখানায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করি। পরে আবাসনে যুক্ত হই। ২০১০ সালের পর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পাই। ২০১৬ সাল থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছি।
আপনি পুরোপুরি দায়িত্ব নেওয়ার পর কনকর্ডে কী
পরিবর্তন এনেছেন?
কিছু ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে, আবার কিছু ব্যবসা ছোট করে এনেছি। আমি মূলত আমাদের চেয়ারম্যানের লক্ষ্য পূরণ করে চলেছি। ওনার লক্ষ্য আবাসন খাতে অবদান রাখা। তার মধ্যে অন্যতম হলো সাশ্রয়ী আবাসন। আমরা লেকসিটির মতো স্যাটেলাইট টাউনশিপ প্রকল্প করেছি। এটা সফল হয়েছে। শুরুতে মাত্র ৬ লাখ টাকায় অ্যাপার্টমেন্ট দিয়েছি। সেখানে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। ধানমন্ডি, গুলশানে আমরা বেশ কয়েকটি প্রকল্প করছি। অনেক ভবন কাজ শুরুর আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দুই বছর আগে এসএমসি টাওয়ার ২–এর কাজ শেষ করেছি। পিকেএসএফ, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ভবনের নির্মাণকাজ চলছে।
লেকসিটির মতো প্রকল্প তো অন্য কোনো কোম্পানি
করছে না, কারণ কী?
এখন অনেকেই এমন প্রকল্প করবে। কারণ, সড়ক উন্নয়ন হয়েছে, মেট্রোরেল এসেছে। সামনে এক্সপ্রেসওয়ে আসবে। আমরা যখন এই প্রকল্প নিয়েছিলাম, তখন নিজস্ব শপিং সেন্টার, স্কুল, মসজিদ, সড়কসহ প্রকল্প করতে হয়েছে। আমাদের প্রকল্প মনে হয় একটু আগেই নেওয়া হয়েছিল। এরপরও সফল হয়েছে। এখন অন্যদের এ–জাতীয় প্রকল্প নিতে এত কিছু করতে হবে না। কারণ, যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হয়ে যাচ্ছে। ফলে অন্যরাও সফল হবে।
লেকসিটি প্রকল্পের বিশেষত্ব কী?
পুরো প্রকল্পে কোথাও পোড়ামাটির ইট ব্যবহৃত হয়নি। পরিবেশবান্ধব ইট ও ব্লক ব্যবহৃত হয়েছে পুরো প্রকল্পে। প্রকল্পটি ছিল সাশ্রয়ী। লেকসিটি প্রকল্পে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার করতে ১৯৯৮ সালে গড়ে তোলা হয় কনকর্ড রেডিমিক্স অ্যান্ড কংক্রিট প্রোডাক্টস লিমিটেড। প্রকল্পটি খোলামেলা, রয়েছে বাচ্চাদের জন্য খেলাধুলার জায়গা। এ ছাড়া বাজার, স্কুল, মসজিদ—সবই রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো প্রয়োজনে কাউকে বাইরে যেতে হবে না।
অন্য প্রকল্পগুলো সাশ্রয়ী হচ্ছে না কেন?
এখন একটি প্রকল্পের ৬০-৭০ শতাংশ খরচ হয় জমির পেছনে। জমির দাম যদি কমে, তাহলে প্রকল্পের খরচও কমবে। মানুষ আরও কম দামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে পারবেন। না হলে সাশ্রয়ী প্রকল্প নেওয়া কঠিন। অন্য উপায় হলো ঢাকার বাইরে যাওয়া। ঢাকার আশপাশে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে। ফলে এসব এলাকায় সাশ্রয়ী প্রকল্প গড়ে উঠবে।
অন্য আবাসন প্রতিষ্ঠানের মতো কনকর্ডের প্রকল্প বিক্রির জন্য অপেক্ষায় থাকে না। ফলে খরচও কিছুটা কম, এর প্রভাব তো দামে পড়ছে না।
কিছু খাতে আমাদের খরচ কম, আবার কিছু খাতে বেশি। যেমন আমাদের কর্মীদের পেছনে খরচ বেশি। আবার সামগ্রীর মান শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কনকর্ড ব্যবহার করে না। রড কেনা হয় তিন-চারটি কোম্পানি থেকে। কেব্ল কেনা হয় দু-তিনটি কোম্পানি থেকে। লিফট কেনা হয় নির্দিষ্ট দেশের ও নির্দিষ্ট ভেন্ডর থেকে। ভালো মান নিশ্চিত করায় দামের ক্ষেত্রে খুব বেশি ছাড় দেওয়া যায় না।
পরিবেশদূষণ এখন বেশ আলোচিত বিষয়। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব পরিবেশবান্ধব প্রকল্প করা। এ ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা কী?
এখনো অনেক কার্বন নিঃসরণ হয়ে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম দায়িত্ব পরিবেশের ক্ষতি না করে প্রকল্প শেষ করা। আবাসন নির্মাণ তো হতেই হবে, সে ক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতি না করে কীভাবে করা যায়, এটা দেখার বিষয়। আমরা পানি ও বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর জন্য প্রকল্পগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখছি। ইট পোড়ানোতে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য খারাপ শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা অন্যতম। আবার প্রতিবছর ইট তৈরি করতে গিয়ে আমরা ১ শতাংশ কৃষিজমি হারাচ্ছি। এই দুটি বড় বিষয়। আবার বায়ুদূষণ থেকে প্রতিবছর ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। এসব চিন্তা করে ১৯৯৮ সালের পর কোনো প্রকল্পে কনকর্ড পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করেনি। সব কটিতেই ব্যবহার করেছে পরিবেশবান্ধব ইট, হলো ব্লক, ইউনিপেভার্স ও টাইলস। এখন সব ভবন, এমনকি সড়কেও এসব সামগ্রী ব্যবহার করছে। আমরা প্রথম পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন করে ব্যবহার করছি, অন্যদেরও ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে যাচ্ছি। এখন আমাদের পাশাপাশি দেশের প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব ইট ও ব্লক উৎপাদন করছে। বিষয়টি উপলব্ধি করে সরকারি প্রকল্পেও এখন পরিবেশবান্ধব ইট ও ব্লক ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে অনেকেই এই প্রকল্পে নামছে। চীন ও ভারত এটা করতে ২০ বছর সময় নিয়েছে।
ঢাকা মহানগরের জন্য প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। আপনারা বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
জনসংখ্যার ঘনত্ব ঢাকার একটা বড় বিষয়। বসবাসযোগ্য শহরের তালিকাতেও ঢাকার অবস্থান ভালো নয়। কীভাবে ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব কমানো যাবে, এটা ভাবতে হবে। সমস্যা হলো, পাশের বাসা ২০ তলা বানানোর সুযোগ পেল, আপনি এখন ৮ তলার বেশি বানাতে পারবেন না। এটি একটি অসম প্রতিযোগিতা। এর একটা সমাধান করতে হবে। অনেক দিন ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় রাজধানীর প্রকল্পগুলো আটকে আছে। না হলে দু-তিন বছর পর বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। তখন আবার দাম বেড়ে যাবে। অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না। আমরা রিহ্যাব থেকে সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি সরকার এগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।
কনকর্ডকে আপনি কোথায় নিয়ে যেতে চান?
আবাসন খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে এখন কনকর্ড। পাশাপাশি রেডিমিক্স সামগ্রী, পরিবেশবান্ধব সামগ্রী, বড় প্রকল্প, থিম পার্ক—সব ক্ষেত্রে আমরা সেরা। আমরা যে শক্তি নিয়ে এসেছি, তা ধরে রাখতে চাই। দায়িত্বশীল হিসেবে এগিয়ে যেতে চাই। আবাসন খাতে আমরা এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি বলে অন্যরা আমাদের মতো হতে চাইছে। অন্য সব ব্যবসার ক্ষেত্রেও অন্যরা এখন আমাদের অনুসরণ করছে। আমরা সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে চাই। সেবার একটা মান আমরা নির্ধারণ করতে চাই, অন্যরা যা অনুসরণ করবে। সেবার মান, গুণ ও সৌন্দর্যকে আমরা সেই পর্যায়ে নিতে চাই।