Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশ কিংবা অস্ট্রেলিয়া—কিশোয়ার সবখানেই ডাল–ভাত খান

২৬ ডিসেম্বর, শীতের সকাল। বেঙ্গল মিটের আয়োজনে রাজধানীর গুলশান–১–এ চলছিল রান্না। যিনি রাঁধছেন, তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শেফদের একজন, মাস্টারশেফ প্রতিযোগী কিশোয়ার চৌধুরী। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার এই ফাইনালিস্ট বাঙালি রান্নাঘরের চেনা পদ তুলে ধরেছেন বিশ্বমঞ্চে। কিশোয়ার পড়াশোনা করেছেন ইতিহাস ও নৃতত্ত্ব নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও জার্মানির হাইডেলবার্গে। পেশায় তিনি গ্রাফিক ডিজাইনারও বটে! দেখছেন পৈত্রিক ব্যবসাও। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন, সেট বদলানো, রিটেক— এসবের মাঝে ‘একের ভেতর অনেক’ কিশোয়ারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ মিলবে কি না, দ্বিধা কাটছিল না। এমন সময় মাছের ঝোল আর খাসির রেজালা—এই দুই পদের মাঝে ১৫ মিনিটের বিরতি পাওয়া গেল। বিরতিতে গ্রিনরুমে মেকআপ নিতে বসলেন কিশোয়ার, ফাঁকে ফাঁকে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন জিনাত শারমিন

প্রশ্ন

আপনার কাজটা ভীষণ ক্লান্তিকর। ঠিকঠাক রান্না করা, আবার একই সঙ্গে শুটিং করা। ঠিকভাবে দেখানো, বলা, মাল্টিটাস্কিং...

আমি উপভোগ করি; রান্না করতে, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেও। সবকিছুর মধ্যে মূল উদ্দেশ্য একটাই, রান্নাটা যেন ভালো হয়। চূড়ান্ত রান্নাটা যখন ঠিকঠাক হয়, খুব ভালো লাগে।

গ্রিনরুমে মেকআপের ফাঁকে ফাঁকে চলেছে কথোপকথন
প্রশ্ন

প্রশ্ন: এবার কত দিনের জন্য দেশে এলেন?

অনেক দিনের জন্য। প্রায় দেড় মাসের জন্য আসা। ছোটবেলায় আমি আমার মা–বাবার সঙ্গে এই বড়দিনের সময় দেশে আসতাম। এখন আমি আমার সন্তানদের নিয়ে আসি। আমার মেয়ে সেরাফিনার বয়স ৬। ছেলে মিকাইলের ১৪। ওরা ঢাকা শহর খুব ভালোবাসে।

প্রশ্ন

ওদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলেন?

তেমন কোথাও না। নতুন রেস্তোরাঁগুলোতে ঢুঁ মারছি। নতুন খাবার চেখে দেখছি। রান্না করছি। আমাদের কাছে আদতে ঘোরার চেয়ে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোটাই মুখ্য। আমার সন্তানেরা ওদের দাদা–দাদি ও সবার সঙ্গে সময় কাটায়। ওরা ঢাকায় রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। সঙ্গে ওদের কাজিনরাও থাকে। ওরাও তখন নতুন করে রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটা আবিষ্কার করে!

ক্রিসমাসের ছুটি বাংলাদেশে কাটান কিশোয়ার
প্রশ্ন

এই শীতে গ্রামের দিকে যাওয়া, পিঠাপুলি খাওয়ার সুযোগ হয়েছে?

না, হয়নি। তবে ইচ্ছা আছে যাওয়ার। আজকের শুটটা শেষ হলে আপাতত আর কাজ নেই।

প্রশ্ন

আপনি তো সাধারণত বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেভাবে কাজ করেন না। কেন বেঙ্গল মিটের সঙ্গে যুক্ত হলেন?

অস্ট্রেলিয়ায় আমার বাবার অনেক বড় একটা গরুর খামার আছে। সেই সূত্রে বেঙ্গল মিটের সিইও এ এস এম আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে অনেক আগে কথা হচ্ছিল। প্রতিবছর এখানে কোরবানি দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এসব পশু যেভাবে উৎপাদিত হয়, এটাকে ঠিকঠাক একটা নিয়মের মধ্য নিয়ে আসার বিষয়ে আমরা কথা বলছিলাম। বেঙ্গল মিট যেভাবে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত করে, তা স্বাস্থ্যকর। এই মাংস কিন্তু কেনার আগপর্যন্ত কখনোই হাতের স্পর্শ পায় না, কিংবা কোনো মেঝেতে রাখাও হয় না। আমি আগে ঢাকায় আসার সময় সসেজ, বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়াজাত খাবার অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়ে আসতাম। সালামি স্যান্ডউইচ বা অন্য কিছু বানানোর জন্য। এখন এসব এখানেই পাওয়া যায়। বেঙ্গল মিট যে কেবল মাংস বিক্রি করছে, তা নয়; ওরা পুরো প্রক্রিয়াটায় একটা পরিবর্তন আনতে চায়। সেটার সঙ্গে আমি একমত।

কিশোয়ার কিন্তু ডাল–ভাত–ই খান
প্রশ্ন

আপনি এত মজার মজার রান্না করেন, বিশ্বের নানা প্রান্তের খাবার চেখে দেখেন, তারপরও এত ফিট থাকেন কীভাবে?

আমরা অস্ট্রেলিয়ায় থাকি বা বাংলাদেশে, সব সময় ডাল–ভাত, বাঙালির স্বাভাবিক খাবার খাই। প্রবাসী বাঙালিরা সবাই–ই তাই খায়। আর বাঙালির যে শতবছরের খাবারের ঐতিহ্য, এটা খুবই স্বাস্থ্যকর। তা ছাড়া আমি যেহেতু খাবার নিয়ে বই লিখি, সে জন্য ঘুরে বেড়াই। খাই। সেটা এমনিতেই ভারসাম্য রক্ষা করে। কোনো গোপন সূত্র নেই। মিষ্টি খাওয়া যাবে না, শর্করা খাওয়া যাবে না—এ রকম একেকটা সূত্র একেক সময় জনপ্রিয়তা পায়। ১০ বছর পরপর এসব বদলেও যায়। তবে একটা বিষয় হচ্ছে, টাটকা খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

কিশোয়ার চৌধুরী
প্রশ্ন

আপনি বাংলাদেশ থেকে যখন অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান, এখান থেকে কী নিয়ে যান?

বাংলাদেশ থেকে ওভাবে খাবার নিয়ে যাওয়া যায় না। নানা রকম ‘ফুড রেসট্রিকশন’ আছে। তবে চালকুমড়ার বড়ি নিয়ে যেতাম। এখন পৃথিবী অনেক বৈশ্বিক হয়েছে। সবখানে সবকিছু পাওয়া যায়। তা ছাড়া আমার খাবারের জন্য যা কিছু দরকার, চেষ্টা করি উৎপাদন করতে, বানিয়ে নিতে। যেমন আমাদের বাগানে লাউ, টমেটো থেকে শুরু করে শাকসবজি, কয়েক পদের মরিচ—এসবই চাষ করি। আচার, আমচুর ও বড়ি বানাই। যারা বানায় না বা বানাতে পারে না, তারা হয়তো অনেক কিছু কেনে, নিয়ে যায়।

বাবার ব্যবসাও দেখাশোনা করেন কিশোয়ার
প্রশ্ন

আপনার ছেলে–মেয়েরা কী খেতে ভালোবাসে?

মুরগির তরকারি। ঝোল ঝোল করে রান্না করা চিকেন কারি।

প্রশ্ন

আপনার ছেলে তো ভালো রান্না করে। সে আপনাকে কী রান্না করে খাওয়ায়?

ও এখনো বাঙালি রান্না পারে না। কেননা এসব তো একটু ‘টেকনিক্যাল’ রান্না। বাফেলো উইং, আইওলি সস—এমন ছোটখাটো নানা কিছু। হি ইজ আ গুড কুক।

প্রশ্ন

নারীরা তুলনামূলক রান্নাবান্না বেশি করলেও নারী শেফ কিন্তু অনেক কম। এ জন্য কী করছেন?

দুদিন আগেই একটা কর্মশালা করলাম। এখানে শেফ, ব্লগার, উদ্যোক্তা—এ রকম অনেকে অংশ নিয়েছিলেন। নারীদের আরও বেশি করে ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে হবে। সার্টিফায়েড হয়ে আসতে হবে। আসলে রান্নার সঙ্গে তো জেন্ডারের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা একটা লাইফ স্কিল। সবাইকে পারতে হবে। তবে নারীরা রান্নাঘরে রান্না করছেন, কিন্তু ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁদের সেভাবে পদচারণ নেই, এটা দুঃখজনক। আমি এর আগেরবার একটা প্রজেক্টে পাবনার একটা গ্রামে গিয়ে দেখি, সেখানে অনেক নারী কসাই পেশায় যুক্ত। বাংলাদেশের এ রকম একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী কসাই দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে! কিন্তু বাংলাদেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে এটা একটা বিচ্ছিন্ন দৃশ্য।

কিশোয়ার চৌধুরী
প্রশ্ন

সামনে কী করছেন?

দেখি। ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে সার্টিফায়েড নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন, আর এর সঙ্গে বেচে যাওয়া খাবার নষ্ট না করে তা দিয়ে কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন পদ তৈরি করা যায়—এই দুই বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

Also Read: কথাগুলো তো সত্য, কাউকে না কাউকে তো বলতেই হবে: সোবিয়া আমিন