ভাই বা বোন কি টক্সিক আচরণ করছে

সহোদর টক্সিক আচরণ করলে অনেক সময়ই সম্পর্কে ফাটল ধরে
ছবি: প্রথম আলো

ভাই–বোন, নির্ভরতার এক সম্পর্ক। ছোট–বড় যেকোনো সমস্যায় তাঁদের কাছেই ছুটে যাই আমরা। তবে অনেক সময় আবার এই ভাই বা বোনের আচরণে জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ।

আপন মানুষ বলে সেসব সমস্যার কথা অনেকে বলতেও পারেন না। এতে মিষ্টি এই সম্পর্কে এমন তিক্ততা তৈরি হয়, যা অনেক সময় ভাই বা বোনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতেও বাধ্য করে।

বোন হলো মিষ্টি এক সর্ম্পক

১. ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলায়

সহোদর বা সহোদরা সবকিছুতেই আপনার দোষ ধরে। যেমন আপনার পছন্দের মানুষ বা বন্ধুকে কোনো কারণ ছাড়াই ঘৃণা করে। শুধু সম্পর্ক নয়, পড়াশোনা ও কর্মজীবন থেকে শুরু করে আপনার নেওয়া প্রায় প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তার মনোভাব নেতিবাচক থাকে। ব্যক্তিগত ব্যাপারে তাকে নাক গলাতে নিষেধ করলেও সে যদি না শুনে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ভাই বা বোনটি টক্সিক (বিষাক্ত) আচরণ করছে।

নিজের যে বিষয়গুলোয় ভাই বা বোনের হস্তক্ষেপ চান না, সেগুলো তাকে না বলার পরামর্শ দেন মার্কিন মনোরোগ–বিশেষজ্ঞ ও থেরাপিস্ট ফেবে ব্র্যাকো–ওউসুর। তিনি মনে করেন, সহোদর বা সহোদরা যদি সহানুভূতিশীল না হয়, তাহলে তাকে সব কথা বলা ঠিক নয়।

২. আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়

টক্সিক ব্যক্তিদের আচরণের ধরনই এমন, বললেন আমেরিকার মনোবিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন সাইকোলজি টুডে–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোবিদ আবিগেইল ব্রেনার। তিনি বলেন, অন্যকে ব্যবহার করে তারা নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে চায়। এ ধরনের সম্পর্কে কোনো ভারসাম্য থাকে না। ভাই বা বোনের কাছ থেকে এমন নিয়ন্ত্রণের আভাস পেলে তাকে বিনয়ের সঙ্গে বুঝিয়ে বলুন যে সেটা আপনি পছন্দ করছেন না। তাকে বলুন, ‘আমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনা করে নিয়ো।’

৩. সীমারেখা মানে না

আপনার কাছে যখন–তখন নানা রকম বায়না ধরে। পরিস্থিতি বিবেচনা না করে আপনার সঙ্গে ইচ্ছেমতো আচরণ করে। ফেবে বলেন, আপনার সীমারেখা পরিষ্কারভাবে তাকে জানিয়ে দিন। সেটা না মানলে পরিণতি কী হবে, তা–ও তাকে বলে দিন। তাকে বলতে পারেন, ‘শুধু নিজের দিকটা না ভেবে আমাকেও বুঝতে চেষ্টা করো।’

অনেক সময় দেখা যায়, ভাই আপনার কাছ থেকে শুধু সুবিধা আদায় করে নেয়

৪. সব সময় ‘ভিকটিম’ সাজে

ধরুন, আপনার ভাই অথবা বোন আপনার কাছে কিছু টাকা চাইল। কিন্তু কোনো কারণে আপনি টাকা দিতে পারলেন না। এতে ভীষণ চটে গিয়ে আপনার সঙ্গে খুব রূঢ় আচরণ করবে। পরিবারের অন্যদের জানাবে যে আপনি তার সঙ্গে অন্যায় করেছেন। মার্কিন থেরাপিস্ট জেসমিন বিশপ বলেন, আপনার ‘না’ শুনে কেউ রূঢ় প্রতিক্রিয়া দেখালে বুঝতে হবে আপনার ‘না’কে ‘হ্যাঁ’ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই ভয় না পেয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকুন। আর এটা করতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অপরাধবোধে ভুগবেন না।

৫. আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে

নিজের কোনো সাফল্য নিয়ে ভাই বা বোনের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই যদি দেখেন যে সে কথা ঘুরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে গেছে এবং সে আপনার চেয়ে কত ভালো, তা নিয়ে আলাপ করছে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার সহোদর টক্সিক। বিশপ বলেন, এমনটি হলে চুপ না থেকে তাকে সরাসরি বলুন যে তার সঙ্গে কোনো তুলনা আপনি চান না। আপনি তার সমর্থন প্রত্যাশা করেন, প্রতিযোগিতা নয়।

৬. তার সঙ্গে সময় কাটানো সব সময়েই ক্লান্তিকর

সহোদর বা সহোদরার সঙ্গে সময় কাটানোর সময় এবং পরে আপনি ক্লান্ত বোধ করেন। সাধারণ ক্লান্তি নয়; বরং তার টক্সিক আচরণের ফলে মানসিকভাবে ঝিমিয়ে পড়েন। তার নাটকীয়তা, অতিরিক্ত চাহিদা আর সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকার প্রবণতা আপনার সব মানসিক শক্তি শুষে নেয়। মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ও থেরাপিস্ট ডেবোরা ভিনাল বলেন, এমন হলে তার সঙ্গে সময় কাটানো কমিয়ে দিন। আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল তো আপনাকেই রাখতে হবে।

সব সময় বোন নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে চায়

৭. সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হতে চায়

আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় সে শুধু নিজের কথাই বলে। আপনার ব্যাপারে কখনোই কিছু জানতে চায় না। এমনকি ‘কেমন আছ?’টুকুও নয়। এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত টক্সিক। এমন আচরণ কতটা নিয়মিত, তা লক্ষ করার পরামর্শ দেন থেরাপিস্ট ভিনাল। তিনি বলেন, তাকে স্পষ্ট করে জিজ্ঞাসা করুন যে সে কেন আপনার জীবনের ভালো–মন্দের কথা জানতে চান না? এভাবে বললে হয়তো সে বুঝতে পারবে এবং এতে তার বদলানোর একটা সুযোগ তৈরি হবে।

৮. সাহায্যের পেছনে শর্ত থাকে

কোনো একটি উপকার করার সঙ্গে সঙ্গেই সে আপনার কাছে নিজের জন্য কিছু একটা চেয়ে বসবে। পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে সাহায্য করবে, তবে সেটা যদি একধরনের দেনা–পাওনার খেলা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেটা স্বাস্থ্যকর নয়। এ ধরনের শর্তযুক্ত সম্পর্কের ফাঁদে না পড়ার পরামর্শ দেন ভিনাল। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু হতে পারে মাত্র এক অক্ষরের একটি শব্দ—‘না’।

নিঃস্বার্থভাবে পাশে দাঁড়াতে পারে, এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাহায্য নিন। আর আপনি নিজেও সেই মানুষ হোন, যিনি কোনো প্রতিদানের প্রত্যাশা ছাড়াই অপরের পাশে দাঁড়াবেন।