আমাদের মস্তিষ্ক নতুন কিছু পেলেই উত্তেজিত হয়, যেমন নতুন মডেলের ফোন
আমাদের মস্তিষ্ক নতুন কিছু পেলেই উত্তেজিত হয়, যেমন নতুন মডেলের ফোন

কেন আমরা সব সময় আরও চাই, সুখের চাবিকাঠি আসলে কী

নতুন ফোন, ফ্যাশনেবল জুতা, ঝকঝকে সোফা—কতটা দরকারি? গবেষণা বলছে, বেশি কিনলেই সুখ বাড়ে না, বরং বাড়ে অস্থিরতা।

ঢাকার কোনো শপিংমলে ঢুকলেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এদিকে সর্বশেষ স্মার্টফোন, ওদিকে নতুন আসবাব, আবার অন্যদিকে রঙিন পোশাকের সমারোহ। মনে হয়, কিছু না কিছু নিয়েই ফিরতে হবে। কিন্তু সত্যিই কি এই কেনাকাটা আমাদের জীবনে সুখ বাড়ায়? নাকি কিছুদিনের মধ্যেই আনন্দ ফিকে হয়ে যায়?

কেন আমরা সব সময় আরও চাই

হয়তো একটা নতুন ফোন কিনেছেন। প্রথম কয়েক দিন আপনি সেটি নিয়ে বেজায় খুশি। কিন্তু কিছুদিন পরেই মনে হয়, ‘আহা! নতুন যে মডেলটা এসেছে, সেটা হলে আরও ভালো হতো।’

এটাই আদতে স্বাভাবিক। আমাদের মস্তিষ্ক নতুন কিছু পেলেই উত্তেজিত হয়। একসময় এটা ছিল বেঁচে থাকার উপায়। কিন্তু আজকের দিনে সেই প্রবৃত্তিই আমাদের ভোগবাদী করে তুলছে।

আমরা ভাবি, বিকল্প যত বেশি, তত স্বাধীনতা; কিন্তু গবেষণা বলছে, উল্টোটা ঘটে

ক্ষণস্থায়ী আনন্দের ফাঁদ

গবেষকরা একে বলেন ‘হেডোনিক অ্যাডাপটেশন’। মানে, সুখ বা দুঃখ যা–ই আসুক, মানুষ দ্রুত তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে ফেলে। লটারি জেতা বা ব্যয়বহুল সোফা কেনার আনন্দ যেমন স্থায়ী হয় না, তেমনি বড় ধাক্কার দুঃখও সময়ের সঙ্গে সামলে নেওয়া যায়। ফলে যতই নতুন কিছু কিনি না কেন, স্থায়ী সুখ তাতে আসে না।

বিকল্প বেশি মানেই ঝামেলাও বেশি

আমরা ভাবি, বিকল্প যত বেশি, তত স্বাধীনতা। কিন্তু গবেষণা বলছে, উল্টোটা ঘটে।
একবার এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে ২০ ধরনের জ্যাম রাখা হলে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি—কোনটা কিনব।

তবে যখন মাত্র ৬টা জ্যাম রাখা হলো, তখন সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন ক্রেতারা। অতিরিক্ত বিকল্প আদতে আমাদের বিভ্রান্ত করে, সিদ্ধান্ত নিতে দুশ্চিন্তা বাড়ায়।

কিছু কিনতে চাইলে অন্তত এক সপ্তাহ অপেক্ষা করুন

মিনিমালিজম: কম জিনিস, বেশি প্রশান্তি

মিনিমালিজম মানে শুধু সাদা দেয়াল বা ছিমছাম ঘর নয়। এর আসল মানে হলো অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে মনকে হালকা করা।

কীভাবে করবেন

  • আলমারির জন্য একটি সীমা ঠিক করুন—জামাকাপড় যা–ই আছে, তা–ই যথেষ্ট।

  • কিছু কিনতে চাইলে অন্তত এক সপ্তাহ অপেক্ষা করুন।

  • জিনিসের বদলে অভিজ্ঞতায় খরচ করুন—ভ্রমণ, বই বা নতুন কিছু শেখায়।

  • প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের অনুশীলন করুন। যা আছে, সেটাই যথেষ্ট ভেবে শান্তি খুঁজুন।

কিছু প্রতিবন্ধকতা আসবেই

ফোমো (FOMO): মনে হয়, না কিনলে মিস হয়ে যাবে। চেষ্টা করুন এটিকে JOMO হিসেবে দেখার—Joy of Missing Out। মানে, না কিনে বরং শান্তি পাচ্ছেন।

অপরাধবোধ: পুরোনো জামা বা উপহার ছাড়তে খারাপ লাগতে পারে। কাউকে দিলে সেটার আসল মূল্য আরও বেড়ে যায়।

পরিবারের অনাগ্রহ: সবাইকে একসঙ্গে রাজি করানো কঠিন। নিজের আলমারি বা ডেস্ক থেকে শুরু করুন। ধীরে ধীরে অন্যরা ইতিবাচক দিক দেখবে।

সুখ মানে যথেষ্ট, যথেষ্ট মানেই সুখ

আমরা ভেবেছি, আরও কিনলে আরও সুখী হব। কিন্তু গবেষণা বলছে, সুখের আসল রহস্য হলো যথেষ্টে সন্তুষ্ট থাকা।

আজ থেকেই শুরু করা যায়। হোক সেটা আলমারি গোছানো, মুঠোফোনের অ্যাপ কমানো বা সময় ব্যবহারের অভ্যাস পাল্টানো।

সুখ আদতে তখনই টেকসই হয়, যখন আমরা বুঝি—আরও নয়, যা আছে তা–ই যথেষ্ট।