
নানা কারণে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন লম্বা ছুটিতে। ঘটে যেতে পারে কোনো দুর্ঘটনাও। তাই লম্বা ভ্রমণে সাধারণভাবে যা নেওয়া হয়, তার বাইরেও কিছু জিনিস গুছিয়ে রাখা প্রয়োজন। এমন কিছু জিনিসের কথা জানালেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।
ভ্রমণে বমির প্রবণতা থাকে অনেকের। হায়োসিন-জাতীয় ওষুধ এমন সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে। যাত্রার আগে ওষুধ খেয়ে নিলেও দীর্ঘযাত্রার ক্ষেত্রে যাত্রার মধ্যে আরেকটি ডোজের প্রয়োজন হতে পারে। আবার বমির প্রবণতা না থাকলেও অনেকসময় ভারী খাবার খাওয়ার পর কারও কারও বদহজম হয়। বমিভাব বা বমিও হতে পারে। তাই গ্যাসের ওষুধ এবং বমির ওষুধ সঙ্গে রাখা ভালো। অনডানসেট্রন-জাতীয় ওষুধ বমির সমস্যায় কাজে দেয়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে কখনো কখনো ঠান্ডা-কাশিও দেখা দিতে পারে। অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ এক্ষেত্রে কাজে দেয়। তবে শ্বাসের কোনো রোগ থাকলে সব অ্যান্টিহিস্টামিন নিরাপদ নয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে কোনটি আপনার জন্য নিরাপদ।
দীর্ঘ যাত্রায় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন যে কেউ। আপনার বাহনটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত না হলে সঙ্গে রাখতে পারেন পাখা। ব্যাটারিচালিত ছোট ফ্যান দারুণ কাজে আসে। আর ট্রাভেল পিলো ব্যবহার করা হলে ঘাড়ব্যথা এড়ানো সহজ হয়।
চার ঘণ্টার বেশি সময় বসে যাত্রা করলে কারও কারও পায়ের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। বিশেষত যাঁদের বয়স ৪০ পেরিয়েছে কিংবা যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি। তা ছাড়া যেসব নারী ইস্ট্রোজেনসমৃদ্ধ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি বেশি। যাঁদের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেশি থাকে, তাঁরা বিশেষ ধরনের মোজা পরতে পারেন, যে মোজা পায়ে চেপে থাকে। এই বিশেষ মোজাকে বলা হয় কমপ্রেশন সকস বা কমপ্রেশন স্টকিংস। কেবল ভ্রমণের সময়ই পরতে হয় এই মোজা।
ছুটিতে আয়েশ করা চাই-ই চাই। তবেই না মন হয়ে উঠবে সতেজ। দীর্ঘ ভ্রমণের সময় আয়েশের জন্য আপনার কাজে আসতে পারে নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন। চোখে আসা আলো ঠেকাতে আরও কাজে আসতে পারে স্লিপ মাস্ক।
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা এবং ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক রোগ ছড়ায় মশার মাধ্যমে। তাই মসকিউটো রিপেল্যান্ট ব্যবহার করুন এবং ব্যাগে রাখুন। শিশুদের জন্য বেছে নিন তাদের উপযোগী মসকিউটো রিপেল্যান্ট।
বেড়াতে গেলে প্রত্যেকের নেইলকাটার, ট্রিমার, রেজার প্রভৃতি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত। অন্যের ব্যবহার্য সামগ্রী ব্যবহার করা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। তাতে বহুবিধ সংক্রমণ ছড়াতে পারে। অনেক সময় চাইলেও আপনি নতুনভাবে এসব কেনার সুযোগ না-ই পেতে পারেন। এমনকি সেলুনে শেভ করবেন মনে করলেও নিজের ব্লেড সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত।
বেড়াতে গিয়ে পোশাকআশাক ময়লা হবেই। সব পোশাক ধোয়ার সুযোগ না-ও হতে পারে। কিন্তু ময়লা পোশাক থেকে ছড়াতে পারে জীবাণু। তাই পরিষ্কার পোশাক থেকে এসব আলাদা রাখতে পাতলা ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত। এই ব্যাগ আপনি বাসা থেকে নিয়ে বেরোতে পারেন।
কাঁটার মতো ক্ষুদ্র কিছু ত্বকে আটকে গেলে তা সরানো জরুরি। নইলে ব্যথা এবং সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এমন কিছু সরানোর জন্য আপনি কাজে লাগাতে পারেন চিমটা। জীবাণুনাশক দ্রবণও সঙ্গে রাখুন। জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে মুছে চিমটা ব্যবহার করা উচিত।
পোড়া ক্ষতের মলম, ব্যান্ডএইড, অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ, গজ, ব্যথানাশক ওষুধ প্রভৃতিও রাখা উচিত একটা ছোট্ট বাক্স বা ব্যাগে। নিজেদের তো বটেই, যেখানে যাচ্ছেন, সেখানকার প্রয়োজনেও লাগতে পারে আপনার এই ছোটখাট সরঞ্জাম।