আলপনার রঙে রাঙানো হয়েছে রাঙামাটিয়ার ঘরগুলো
আলপনার রঙে রাঙানো হয়েছে রাঙামাটিয়ার ঘরগুলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরেক ‘আলপনা গ্রাম’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের একটি সাঁওতালগ্রাম রাঙামাটিয়া। গ্রামজুড়েই একের পর এক মাটির বাড়ি। পাশেই হাজার বছরের পুরোনো জনপদের সাক্ষী হয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিরাট উঁচু এক ঢিবি, নওদা বুরুজ। গ্রামের সাঁওতালরা প্রায় সবাই খ্রিষ্টধর্মী। ২৫ ডিসেম্বর তাদের বড়দিন। বরাবরই তার আগে বরেন্দ্রর লাল আর সাধারণ মাটি দিয়ে লেপেপুঁছে ঘরদোর ঝকঝকে, তকতকে করে তোলেন গ্রামের মেয়েরা। নিজেদের উদ্যোগে সেখানেই এবার আলপনা এঁকে গ্রামটিকে রঙিন করে তুলেছেন একদল তরুণ।

রাঙামাটিয়া গ্রামের একটি ঘরের দেয়াল

আলপনার রঙে রাঙামাটিয়াকে রাঙানোর মূল উদ্যোক্তা রহনপুরের প্রত্ননিদর্শন সংগ্রাহক মাহির ইয়াসির। মাহির ইয়াসির বলেন, ‘রাঙামাটিয়া মাটির বাড়ির গ্রাম। এই গ্রাম নতুন করে কথা বলতে শুরু করেছে। মাটির দেয়ালে আঁকা আলপনায় ফুটে উঠেছে সাঁওতালদের জীবন, সংগ্রাম আর উৎসব।’ বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ছয় শিক্ষার্থী। গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিনে ও সারা রাত আলো জ্বালিয়ে আলপনা এঁকেছেন তাঁরা।

মাটির ঘরগুলোর দেয়ালের সৌন্দর্য খোলনলচে বদলে গেছে

তিন দিন ধরে রাতদিন পরিশ্রম করে মাটির দেয়ালের বাড়িগুলোর সৌন্দর্য খোলনলচে বদলে ফেলেন সাত তরুণ। আক্ষরিক অর্থেই মাটির দেয়ালগুলো এখন ছবির মতো সুন্দর হয়ে উঠেছে। এই রূপান্তরে গ্রামের বড়দিনের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। গ্রামের লুইস টুডু নামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় সাঁওতালরা শুরুতে কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও এখন তাঁরা খুব খুশি।

এই গ্রামের মিশন প্রান্তে মুক্তিযোদ্ধা বারনাবাস হাসদার বাড়ি। তাঁর বাড়ির দেয়ালেও আঁকা হয়েছে আলপনা। তিনি বলেন, ‘চারুকলার শিক্ষার্থীদের তুলিতে নতুন রূপ পেয়েছে আমাদের এই সাঁওতালপল্লি। বড়দিন উপলক্ষে অনেক মানুষ বেড়াতে আসে এই গ্রামে। এবার তাদের বাড়িঘরগুলো দেখে খুব ভালো লাগবে।’

আলপনায় ফুটে ওঠেছে সাঁওতালদের আত্মপরিচয়

বরেন্দ্রভূমির গ্রামটিতে এখন ঢুকলে চোখে পড়ে দেয়ালে দেয়ালে আঁকা দৃষ্টিনন্দন আলপনা। কোনো কোনো দেয়ালে আঁকা হয়েছে শিকারিজীবনের চিত্র, কোথাও নাচ-গান, বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন সাঁওতাল যুবক, আবার কোথাও সাঁওতাল মানুষের মুখ। মাটির দেয়ালে আঁকা আলপনায় এভাবেই ফুটে উঠেছে সাঁওতালদের জীবনসংগ্রাম, সংস্কৃতি আর উৎসব। দেয়ালজুড়ে আঁকা আলপনাগুলো শুধু নকশা নয়, এ যেন সাঁওতালদের আত্মপরিচয়।