১০০–তে দুই সুমাইয়াই পেয়েছেন ৮৭.৫

দুই সুমাইয়া
ছবি: সংগৃহীত

সুমাইয়া জানতেনই না, এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে। দুপুরে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগের ক ইউনিটের ফলাফল দিল আর রাতে সুমাইয়ার এক বান্ধবী ফোনে জানাল, ‘তুই তো ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিস!’ এমন একটা খুশির খবরেও সুমাইয়া নিরুত্তাপ, ও আচ্ছা। ইনি হলেন রাজধানী ঢাকার বনশ্রীর সুমাইয়া রহমান। তিনি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের আরেক সুমাইয়া, সুমাইয়া বিনতে মাসুদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম হয়েছেন। ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় দুই সুমাইয়াই পেয়েছেন ৮৭.৫ নম্বর।

ঢাকার সুমাইয়া

সুমাইয়া রহমানকে ফোনে পাওয়া সহজ নয়। হবে কী করে, তিনি তো ফোনই ব্যবহার করেন না। বাবার নম্বর পাওয়া গেল। কিন্তু সেই নম্বরেও কল ঢুকছিল না। ভাগ্যিস, হোয়াটসঅ্যাপ ছিল। হোয়াটসঅ্যাপ করে জানা গেল, ব্যবসার কাজে এখন ভারতে আছেন সুমাইয়ার বাবা। তিনি থাকেন সৌদি আরবের জেদ্দায়। সুমাইয়ারা তিন বোন। সুমাইয়াই বড়। পুরো পরিবারই জেদ্দায় থাকত। তবে বছরে একবার এক–দেড় মাসের ছুটিতে দাদাবাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীতে এসে ঈদ করে যেত। সুমাইয়ার বাবা আবদুল রহমানের কাছ থেকে পেলাম মায়ের নম্বর। মা রেহানা পারভীনের মাধ্যমেই আলাপ হলো সুমাইয়ার সঙ্গে। তবে আগে মায়ের কাছে জানতে চাইলাম, আপনার মেয়ে কি ছোটবেলা থেকেই পড়ুয়া? মা বললেন, ‘হ্যাঁ। ও ছোটবেলা থেকেই চুপচাপ। কোনো গ্যাঞ্জাম, হুড়াহুড়ি, আড্ডাবাজি পছন্দ না ওর। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে জেদ্দায়। তারপর দেশে এসে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। ওকে কোনো দিন পড়াশোনার কথা বলতে হয়নি। বরং বলতাম, ওঠ, আজ আর পড়তে হবে না। কিন্তু পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ও উঠত না।’

মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিক—দুই পরীক্ষায়ই সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছেন সুমাইয়া। ক্লাস ফাইভে বৃত্তি না পেলেও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিলেন অষ্টম শ্রেণিতে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেও সুমাইয়া ভর্তি হয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। সুমাইয়ার কাছে জানতে চাইলাম, পড়াশোনার বাইরে আর কী ভালো লাগে? কয়েক সেকেন্ড ভাবার পর উত্তর এল, গোয়েন্দা গল্প পড়তে ভালো লাগে। আর ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে।

খুলনার সুমাইয়া

ঢাকার সুমাইয়ার মতো খুলনার সুমাইয়াও ফোন ব্যবহার করেন না। তাঁকেও মায়ের ফোনেই পাওয়া গেল। বললেন, ‘মায়ের ফোনই আমার ফোন। আর মায়ের ফেসবুকই আমার ফেসবুক। আমরা দুজন একই ফেসবুক ব্যবহার করি। যেদিন রেজাল্ট দিল, সেদিন ফেসবুক স্ক্রল করেই নিউজটা চোখে পড়ে—দুই সুমাইয়া যৌথভাবে প্রথম হয়েছে। সেখানে নিজের নাম আর ছবি দেখে নিশ্চিত হই।’

‘আগে থেকে কি অনুমান করেছিলেন যে প্রথম হবেন?’ ‘না। আমি মেডিকেলের কোচিং করে সেখানে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাইনি। ৭১.৫ পেয়েছি। তাই এত আত্মবিশ্বাস ছিল না। গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছিল। জানতাম, এখানে ভালো করব। তবে প্রথম হব ভাবিনি।’ পাশ থেকে যোগ দিলেন মা সালমা খাতুন। জানালেন মেডিকেলে চান্স না পাওয়ার কারণ—ছোটবেলা থেকেই ওর ইচ্ছা ছিল মেডিকেলে পড়ার। কিন্তু পরীক্ষার এক মাস আগে ওর ‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’–এর মতো হয়। ঠিকমতো পড়তে, খেতে বা ঘুমাতে পারত না ও। তাই মনমতো রিভিশন দিতে পারেনি। ভর্তি পরীক্ষাও মনমতো হয়নি। সুমাইয়া জানান, প্রাথমিকভাবে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন। তবে দ্বিতীয়বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেবেন।

সুমাইয়ার বাবা মাসুদুর রহমান বিমানবাহিনীর অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ২০০৯ সালে যশোর সেনানিবাস থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এখন তিনি খুলনার পাইকগাছায় আসবাবের ব্যবসা করেন। ছোট ভাই পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। সুমাইয়া পঞ্চম আর অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকেও পেয়েছেন জিপিএ ৫। পড়াশোনার পাশাপাশি এই সুমাইয়ার ভালো লাগে ছবি আঁকতে। অবসরে জলরং আর তেলরঙে প্রকৃতি আঁকেন।

জানতে চেয়েছিলাম, ‘আপনার মতো যাঁরা গুচ্ছ পরীক্ষায় ভালো ফল করতে চায়, তাঁদের কী পরামর্শ দেবেন?’ সুমাইয়া বলেন, ‘রাত জেগে পড়তে হবে, বিষয়টা এমন নয়। আমি কোনো দিন রাত জেগে পড়িনি। তবে নিজে রুটিন করে প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করেছি। আর সবার ওপর মূল বই। পাঠ্যবইয়ের কোনো বিকল্প নেই। আগে পাঠ্যবই ভালো করে শেষ করতে হবে। না হলে কোনো নোট বা কোচিং দিয়েই ভিত্তিটা তৈরি হবে না। শূন্যতা পূরণ হবে না। ভর্তি পরীক্ষায় শর্টকাট বলে কিছু নেই।’