অফিসে বাড়তি দায়িত্ব সামলানোর প্রয়োজন হতেই পারে কখনো–সখনো। একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বাড়তি কাজ করা ইতিবাচক। কিন্তু সেই সীমা পেরিয়ে গেলে আপনার ব্যক্তিজীবন তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেই, একপর্যায়ে আপনার কর্মজীবনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই কখন, কীভাবে বাড়তি কাজকে ‘না’ বলা উচিত, জেনে রাখুন।
ধরা যাক, আপনার সহকর্মী কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সে সময় তো মানবিক বিবেচনায় আপনি বাড়তি কাজ করে দেবেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য যদি কালেভদ্রে জরুরি ভিত্তিতে কিছু বাড়তি কাজ করে দেওয়ার দরকার পড়ে, তা–ও আপনি করে দিতে পারেন। তবে প্রায়ই অতিরিক্ত চাপ নিলে কিন্তু মুশকিল। বিশেষ করে যখন আপনি ‘ওভারটাইম’ হিসেবে বাড়তি কোনো আর্থিক সুবিধাও পাচ্ছেন না, তখন নিজেকে কষ্ট দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করা বোকামি।
প্রায়ই যদি আপনাকে বাধ্য করা হয় বাড়তি চাপ নিয়ে কাজ করতে কিংবা যদি আপনার সামনে দাঁড় করানো হয় প্রায় অসম্ভব সব ‘ডেডলাইন’, তাহলে বুঝবেন, ‘না’ বলা জরুরি। যদিও অনেকেই ভাবেন, ‘না’ বলে দিলে অফিসের বসের কাছে নিজের ‘ইমেজ’ নষ্ট হবে। কিন্তু আপনি যদি বাড়তি কাজের জন্য দিনের পর দিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পান, পরিবারকে সময় দিতে না পারেন, তাহলে এই বাড়তি শারীরিক ও মানসিক চাপের প্রভাব পড়বে অফিসে আপনার কাজের ওপর। তাই আপনাকে বিবেচনায় রাখতে হবে, এভাবে বাড়তি কাজ করতে করতে যদি আপনি অফিসে নিজের দায়িত্বটাই সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত কিন্তু বস আপনাকে ‘ভালো’ কর্মীর মর্যাদা দেবেন না। কেউ কেউ আবার সহকর্মীর অনুরোধ ফেলতে না পারার কারণেও বাড়তি কাজের দায়িত্ব নিয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়তি দায়িত্ব নিতে হলেও ‘না’ করে দেওয়া উচিত। আপনার করে দেওয়া বাড়তি কাজের যদি মূল্যায়ন না হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে বাড়তি কাজকে ‘না’ বলাই ভালো।
বাড়তি কাজকে ‘না’ বলার আগে আপনার নিজের বিশ্বাস করতে হবে, আপনি যা করতে যাচ্ছেন, সেটা ঠিক। আপনি যদি একটা বাড়তি কাজের সত্যিকার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন, তাহলে তো আর ‘না’ বলবেন না। তাই কেন ‘না’ বলতে যাচ্ছেন, তা নিজের কাছে পরিষ্কার রাখুন। মাথায় রাখুন, ‘না’ বলার সময় বিরক্তি, ক্ষোভ কিংবা রাগ প্রকাশ করা যাবে না। খারাপভাবে ‘না’ বলার কারণে আপনার ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ যাতে সৃষ্টি না হয়, কেউ যাতে আপনার ‘শত্রু’ হয়ে না যান, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
‘না’ বলা কিন্তু একটা শিল্পই বটে। এমনভাবে ‘না’ বলবেন, যেন অপরপক্ষ আঘাত না পায়। আপনার উত্তর ‘না’, কিন্তু বলার ধরনটা যেন হয় আন্তরিক। ‘এটা আমার কাজ নয়’—এভাবে বলে দেওয়ার চেয়ে কাজের সুযোগ পাওয়ায় প্রথমে কৃতজ্ঞতা জানাতে পারেন। এরপর নিজের অবস্থানের পক্ষে কারণগুলোকে সহজভাবে গুছিয়ে বলুন। জানিয়ে দিন, আপনি কোন কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বুঝিয়ে দিন, সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি প্রয়োজন হলে সব বুঝিয়ে বলার পর এভাবেও বলতে পারেন যে আপনি বাড়তি কাজে মগ্ন হয়ে পড়লে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ