তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৫৪৭স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন।মাহবুব-উল-আলম, বীর প্রতীকসাহসী দলনেতামুক্তিযুদ্ধকালে অক্টোবরের মাঝামাঝি মাহবুব-উল-আলমসহ এক দল মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হন ভারতের কৈলাশ শহরে। তাঁরা ছিলেন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধা। চারটি দল ও কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। তিনি ছিলেন একটি উপদলের নেতৃত্বে। তাঁদের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন মেজর এ জে এম আমিনুল হক (বীর উত্তম, পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল)।মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে ঝটিকা আক্রমণ পরিচালনা করা। একের পর এক আক্রমণ করে পাকিস্তানিদের বিপর্যস্ত এবং সম্ভব হলে সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের বিতাড়ন করা। সীমান্ত থেকে পাকিস্তানিদের উচ্ছেদ করে তাঁরা ক্রমশ সিলেটের দিকে অগ্রসর হবেন। এ লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা তখন থেকেই অভিযান শুরু করেন।অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় একযোগে বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালান। মাহবুব-উল-আলম তাঁর উপদলের সহযোদ্ধাদের নিয়ে ফুলতলা-সাগরনাল চা-বাগানে আক্রমণ করেন। এর অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে। সীমান্ত এলাকা। এখানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি।মাহবুব-উল-আলম নির্দিষ্ট দিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন। চা-বাগানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকন ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে একসময় পৌঁছে যান নির্দিষ্ট স্থানে। শেষ রাতে তাঁরা আক্রমণ চালান। পরদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর মাহবুব-উল-আলম সহযোদ্ধাদের নিয়ে আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন। ১ ডিসেম্বর তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে মূল দলের সঙ্গে আলীনগর চা-বাগানে (মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার অন্তর্গত) আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ করে। দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। এরপর পাকিস্তানিরা পিছু হটে ভানুগাছে আশ্রয় নেয়। মাহবুব-উল-আলমসহ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের অনুসরণ করে উপস্থিত হন ভানুগাছে। এখানে আগে থেকেই ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা। স্থানটি ভৌগোলিক ও সামরিক দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সিলেট দখলের জন্য ভানুগাছ থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে উচ্ছেদ করা ছিল অত্যন্ত জরুরি।৬ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে ভানুগাছে আক্রমণ করেন। সারা দিন ধরে এখানে যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনারা মরিয়া হয়ে তাঁদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে। মাহবুব-উল-আলম ও তাঁর সহযোদ্ধারা এতে বিচলিত হননি। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তাঁদের বীরত্বে পাকিস্তানিদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। বিপর্যস্ত পাকিস্তানিরা পরদিন সেখান থেকে পালিয়ে যায়।মাহবুব-উল-আলম ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের (তখন পশ্চিম পাকিস্তান) কাকুলে নবীন সেনা কর্মকর্তা (ক্যাডেট) হিসেবে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার পথ খুঁজতে থাকেন। অবশেষে মে মাসের শেষে আরও ১২ জন বাঙালি ক্যাডেটের সঙ্গে পালাতে সক্ষম হন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ২ জুন ভারতে পৌঁছেন।কয়েক দিন আগরতলায় অবস্থান করার পর তাঁকে মুক্তিবাহিনীর প্রথম ওয়ার কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে যুদ্ধ করেন।মুক্তিযুদ্ধে বিশেষত ভানুগাছ যুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মাহবুব-উল-আলমকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৫।মাহবুব-উল-আলম স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। পর্যায়ক্রমে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে অবসর নেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার আহমেদপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি ঢাকায় (বাসা ৫৩০/এ, সড়ক ১০ ডিওএইচএস, বারিধারা) স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম আবু মুসা মো. মসিহা, মা রোকেয়া মসিহা। স্ত্রী বেগম ছালমা মাহবুব। তাঁদের দুই ছেলে। সূত্র: মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ব্রিগেডভিত্তিক ইতিহাস।গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমানrashedtr@prothom-alo.info
আরও পড়ুন
-
পৃথিবীর কোন দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকতে পারছে অবাধে: ওবায়দুল কাদের
-
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনে হাজার কোটি টাকা বাড়তি চায় চীনা ঠিকাদার
-
রাঙামাটিতে এলোপাতাড়ি গুলিতে ইউপিডিএফের কর্মীসহ দুজন নিহত
-
বিশ্বের সেরা এয়ারলাইনস আট মাসের বেতনের সমান বোনাস দিচ্ছে
-
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের ভেন্যুতে ঝড় বয়ে গেছে