Thank you for trying Sticky AMP!!

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের না লেখা উপন্যাস

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩—৪ জানুয়ারি ১৯৯৭)। ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম

ইলিয়াসের ‘করতোয়া মাহাত্ম্য’হোয়ার কথা ছিল করতোয়া পারের মানুষের জীবন আর সংগ্রাম, তাদের ইতিহাস-বিশ্বাস, লড়াই করে জয়ী হওয়া কিংবা হেরে যাওয়াকে এক বিশাল ক্যানভাস। ইলিয়াস বলেছিলেন, এটি হবে তাঁর ‘মাস্টারপিস’

১.
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, নীরব কবিত্ব এবং আত্মগত ভাবোচ্ছ্বাস দুটি ‘বাজে কথা’। অলিখিত উপন্যাসও তেমনি একটি অর্থহীন কথা। তবু আজ ১২ ফেব্রুয়ারি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্মদিনে যে উপন্যাসটি তিনি লিখতে চেয়েছিলেন কিন্তু লিখতে পারেননি, সেটি নিয়েই লিখতে চাই।

‘পদ্মা নদীর মাঝি’নাকি ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’-কোনটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, তা নিয়ে পাঠক-সমালোচকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তেমনি ‘চিলেকোঠার সেপাই’নাকি ‘খোয়াবনামা’-কোনটি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, এ নিয়ে ইলিয়াসের পাঠকদের মধ্যেও মতভেদ আছে। উল্লিখিত দুটি উপন্যাস লেখার পরও মানিক আরও বেশ কটি উপন্যাস লিখেছেন। উপন্যাসগুলো নানা বৈশিষ্ট্যে অনন্য হলেও এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে মানিকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস পূর্বোক্ত দুটির একটি। ইলিয়াস মারা যান মাত্র ৫৪ বছর বয়সে। মানিকও দীর্ঘজীবী হননি। মারা যান আরও কম বয়সে, মাত্র ৪৮ বছর বয়সে। মানিক আরও বাঁচলেও ‘পদ্মা নদীর মাঝি’বা ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র চেয়েও শ্রেষ্ঠ কোনো উপন্যাস লিখতে পারতেন কি না, এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা অসমীচীন হবে না। কিন্তু ইলিয়াসের ব্যাপারে এমন সংশয় থাকার অবকাশ নেই। কারণ ইলিয়াস যখন তাঁর সৃষ্টিশীলতার শিখরে, তখনই তাঁর জীবনাবসান হয়।

আরও কিছুদিন সময় পেলে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ ও কৈবর্ত বিদ্রোহের পটভূমিতে পরিকল্পিত তাঁর উপন্যাসটি লিখে যেতে পারতেন। আমরা যারা নব্বই দশকে ইলিয়াস ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ ছিলাম, এ বিষয়ে নিশ্চিত যে ইলিয়াস ভাইয়ের অকালমৃত্যু বাংলা সাহিত্যকে আরেকটি অসাধারণ উপন্যাস থেকে বঞ্চিত করেছে।

নব্বইয়ের দশকের একেবারে গোড়ার দিকে প্রথম আমি ইলিয়াস ভাইয়ের এম দাশ লেনের বাসায় যাই। আমি তখন ‘চিলেকোঠার সেপাই’পড়ে মুগ্ধ, অভিভূত, আচ্ছন্ন। আমার বালক বয়সের পুরোনো ঢাকায় উনসত্তরের উত্তাল গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতিকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছে ইলিয়াসের এই উপন্যাস।

প্রথম দিনই হলো দীর্ঘ আড্ডা। নানা বিষয়ে। আড্ডা ছেড়ে উঠতে চাইলেই ইলিয়াস ভাই বলেন, ‘আরে? মাধবী এসেই বলে যাই’! ইলিয়াস ভাই চা খেতেন বারবার। কড়া চা, ভরা কাপ। তাঁর চায়ের বৈশিষ্ট্য ছিল। গরম পানিতে এক চামচ চা-পাতা ফেলে দিলেই হতো।

সে দিনই প্রসঙ্গক্রমে বললেন, আরেকটি উপন্যাস লেখা শুরু করবেন শিগগিরই। এর জন্য অনেক নোট করে ফেলেছেন। উপন্যাসের কাঠামোটাও মাথায় চলে এসেছে। উপন্যাসটি হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। কিন্তু এর সুদূর পটভূমিতে থাকবে ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’।

পাল সাম্রাজ্যের শেষ দিকে, রাজা দ্বিতীয় মহীপালের (আনুমানিক ১০৭৫-১০৮০) অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৈবর্ত সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের নেতা দিব্য বা দিব্যকের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহে পাল রাজা দ্বিতীয় মহীপাল নিহত হন এবং কৈবর্ত নেতা দিব্যকের হাতে বরেন্দ্রের তথা হাতে উত্তরবঙ্গের শাসানাধিকার চলে আসে। দিব্যক বারেন্দ্রীকে একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত করেন। দিব্যকের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তার ছোট ভাই রুদোক। রুদোকের পর তাঁর পুত্র ভীম ক্ষমতাসীন হন। ভীম বারেন্দ্রীর জনপ্রিয় শাসক ছিলেন।

দ্বিতীয় মহীপালের মৃত্যুর পর প্রথমে সুরপাল এবং তারপর রামপাল রাজা হন। তাঁরা বারেন্দ্রী ছাড়া পাল রাজ্যের অবশিষ্ট অংশে রাজত্ব করতেন। রামপাল রাজা হওয়ার পর দিব্যকের আমলেই বারেন্দ্রী উদ্ধার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বরং কৈবর্তরা তাদের রাজ্য আক্রমণ করেছিল। অবশেষে রামপাল সাহায্য প্রার্থনা করে বিভিন্ন সামন্তের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান এবং জমি ও প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাদের দলে টানেন। এরপর রামপালের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন সামন্ত রাজার পদাতিক, অশ্বারোহী ও হস্তীবাহিনীসংবলিত এক বিশাল বাহিনীর সঙ্গে গঙ্গার উত্তরে ভীমের বাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে রামপাল ও ভীম উভয়েই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে ভীম জীবিতাবস্থায় বন্দী হন। রামপালের সৈন্যরা ভীমের শিবির লুট করে। কিন্তু ভীম বন্দী হলেও ভীমের বন্ধু হরি বিপর্যস্ত কৈবর্ত সৈন্যদের একত্র করে পুনরায় যুদ্ধে নামেন। কিন্তু প্রচুর অর্থ দিয়ে কৈবর্ত সেনা ও হরিকে বশীভূত করা হয়।

প্রথমে ভীমের সম্মুখে তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করা হয়। তারপর ভীমকে তীরবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। এর মাধ্যমে বারেন্দ্রীর কৈবর্ত শাসনের অবসান ঘটে।

কৈবর্ত বিদ্রোহ সম্পর্কে ওপরে বর্ণিত তথ্যের চেয়ে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। আর এসব তথ্যের একমাত্র উৎস হলো দ্বাদশ শতাব্দীর কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থ ‘রামচরিতম’।

৩.

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি কৈবর্ত বিদ্রোহ নিয়ে প্রচলিত মিথগুলো থেকে তাঁর উপন্যাসের উপাদান নিংড়ে বের করবেন। তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলো ঘুরে বেড়াবে বরেন্দ্র এলাকার ইতিহাসের অলিতে গলিতে। মুক্তিযুদ্ধের কাঠামোর মধ্যে তিনি বুনে দিতে চেয়েছিলেন এ দেশের ভূমিপুত্রদের আরেকটি বিদ্রোহের কাহিনি। কৈবর্ত বিদ্রোহের পটভূমিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন।

আবার কৈবর্ত বিদ্রোহকে তিনি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে না দেখিয়ে দেখাতে চেয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের প্রাচীন ইতিহাসের এক বিশাল ক্যানভাসে। তাই সব সময় বলতেন মহাস্থানগড়ের কথা। মৌর্যদের সময় থেকে প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ ছিল পুণ্ড্রবর্ধন, বর্তমান মহাস্থানগড়। ইলিয়াস বলতেন, মহাস্থানের প্রতি ইঞ্চি মাটি ঐতিহাসিক। এর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে একেক যুগের ইতিহাসের স্বাক্ষর। ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এর কাহিনি কাঠামোতেও তিনি মহাস্থানের বৈরাগীর ভিটাকে নিয়ে এসেছেন। ইতিহাস বা মিথ বড় করে না এলেও উঁকিঝুঁকি দিয়ে গেছে সেই উপন্যাসে।

ইলিয়াস বারবার মহাস্থানে যেতেন। হয়তো ইতিহাসের, মিথের স্পর্শ অনুভব করার জন্য। এই মহাস্থানগড় এলাকায় একাত্তরের এক রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এক দরবেশ পরিবারের ৭ জনসহ ১১ জনকে মেরে ফেলেছিল। এই ঘটনা খুবই বিচলিত করেছিল ইলিয়াস ভাইকে। তাঁর উপন্যাসে হয়তো মহাস্থানগড়ের সুদূর ইতিহাসের অন্য কোনো নির্মমতার সঙ্গে মিলেমিশে উঠে আসত মুক্তিযুদ্ধের এই বলিদান।

৪.

উপন্যাসে কৈবর্ত বিদ্রোহকে কীভাবে ব্যবহার করবেন জানতে চাইলে ইলিয়াস ভাই উপন্যাসে মিথের ব্যবহার নিয়ে তাঁর চমকপ্রদ ধারণা সম্পর্কে বলেছিলেন। বলেছিলেন কীভাবে একজন ঔপন্যাসিকের কাছে ইতিহাস আর মিথের সীমানাটা অনেক সময়ই ঝাপসা হয়ে যায়। ইলিয়াস ভাইয়ের কথা শুনে আমার ধারণা হয়েছিল, তাঁর উপন্যাসে কৈবর্ত বিদ্রোহের চরিত্রকে হয়তো চেনা যাবে মুক্তিযুদ্ধের কোনো রণাঙ্গনে কিংবা কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি হয়তো চালান করে দেবেন রামপাল-ভীমের যুদ্ধে।

তাঁর কাছে শুনেছিলাম কীভাবে একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর কৈবর্ত বিদ্রোহের মিথ এখনো বরেন্দ্র অঞ্চলে জীবন্ত আছে। শুনেছিলাম ‘ভীমের জাঙ্গাল’-এর কথা।

কৈবর্ত রাজাদের শাসনামল কেমন ছিল, সে বিষয়ে ইতিহাস বলতে গেলে নীরব। কিন্তু যেখানে ইতিহাস নীরব সেখানে কিংবদন্তি সরব হয়ে উঠতে বাধা নেই। বিদ্রোহী কৈবর্ত নেতাদের নাম আজও বারেন্দ্রীর মানুষ বাঁচিয়ে রেখেছে। সিরাজগঞ্জের সীমানার কাছাকাছি থেকে উত্তর-পশ্চিমে শেরপুর অতিক্রম করে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীর ধরে বগুড়া শহরের প্রান্ত ঘেঁষে আরও উত্তর দিকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার গিয়ে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার দামুকদহের বিলে মিশে যাওয়া যে দীর্ঘ মাটির সড়ক ও বাঁধের ভগ্নাবশেষ এখানে সেখানে দেখা যায়, তার ইতিহাস জানা না গেলেও এলাকার মানুষের কাছে এটি ‘ভীমের জাঙ্গাল’হিসেবে পরিচিত। জনশ্রুতি হলো রামপালের আক্রমণ ঠেকাতে কৈবর্ত-রাজ ভীম এটি তৈরি করেন। নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় আছে দিব্যকের নামের ‘দিবর দিঘি’আর দিঘির কেন্দ্রস্থলে গ্রানাইট পাথরের তৈরি নয় কোণবিশিষ্ট স্তম্ভটির নাম ‘কৈবর্ত স্তম্ভ’। মহাদেবপুর উপজেলায় আছে বিশাল ভীম সাগর। এসব মিথ, জনশ্রুতি ইতিহাসের বইয়ে স্থান না পেলেও উপন্যাসে উঠে আসতে বাধা নেই। কারণ একজন ঔপন্যাসিকের ইতিহাস বর্ণনার দায় নেই।

৫.

ইলিয়াস ভাই বলেছিলেন, তাঁর উপন্যাসের নাম হবে ‘করতোয়া মাহাত্ম্য'। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘এ কেমন অদ্ভুত নাম!’কারণ আমি জানতাম না এটি একটি প্রাচীন গ্রন্থের নাম। করতোয়া নদী সম্পর্কে দ্বাদশ শতাব্দীর কবি পণ্ডিত পরশুরাম সংস্কৃতে রচনা করেছিলেন এক কাব্যগ্রন্থ যার নাম ‘করতোয়া মাহাত্ম্য’। এই গ্রন্থে করতোয়া নদীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে কবি নদী তীরবর্তী বিভিন্ন বিখ্যাত স্থানের উল্লেখ করেছেন ও সেগুলোর মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। তাই ‘করতোয়া মাহাত্ম্য’মহাস্থানগড়ের শুধু নয়, পুরো উত্তরবঙ্গের প্রাচীন ইতিহাসের অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। ইলিয়াসের ‘করতোয়া মাহাত্ম্য’স্থান-কালের সীমানা অদলবদল করে দিয়ে করতোয়া পারের মানুষের জীবন আর সংগ্রাম, তাদের ইতিহাস-বিশ্বাস, লড়াই করে জয়ী হওয়া কিংবা হেরে যাওয়াকে এক বিশাল ক্যানভাসে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ইলিয়াস ভাই বলেছিলেন এটি হবে তাঁর ‘মাস্টারপিস’।

এরপর থেকে ইলিয়াস ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হোক আর ফোনে কথা হোক, আমি জিজ্ঞেস করতাম, ‘ইলিয়াস ভাই, মাস্টারপিস কত দূর?’এ সময় তাঁর সম্পাদনায় লেখক শিবিরের সাহিত্য পত্রিকা তৃণমূল প্রকাশনার কাজ শুরু হয়েছে। তাঁর সঙ্গে দেখা হচ্ছে ঘন ঘন। একদিন ‘মাস্টারপিস’এর অগ্রগতি জানতে চাইলে বললেন, আরেকটি উপন্যাস শুরু করেছেন। মনে আছে আরেক দিন আমাকে বলেছিলেন মাস্টারপিসের কিছু কিছু জিনিস এই উপন্যাসে চলে আসছে। ‘খোয়াবনামা’যখন প্রকাশিত হলো, তার শুরুতেই এর প্রমাণ পাওয়া গেল। দেখা গেল ফকির বিদ্রোহের নেতা ফকির মজনু শাহের অনুচর মুনশি বয়তুল্লাহ মহাস্থানের কেল্লায় যাওয়ার জন্য করতোয়ার দিকে ছোটার সময় গোরা সেপাইয়ের গুলিতে মরে যাওয়ার পর গলায় জড়ানো শিকল আর ছাইভস্ম মাখা গতর নিয়ে মাছের নকশাআঁটা পান্টি হাতে কাৎলাহার বিলের উত্তর শিথানে পাকুড়গাছের মাথায় উঠে বসেছেন। এই পাকুড়গাছের মাথা থেকে তিনি শুধু রাতভর বিল শাসন করেননি, দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পুরো উপন্যাস। মাতিয়ে রেখেছেন ইলিয়াসকেও।

৬.
অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ইলিয়াস ভাই তাঁর মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসটি লেখার জন্যই আরও কিছুদিন বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়টুকু তিনি পেলেন না। আর বাংলা সাহিত্য পেল না ইলিয়াসের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস।

ইলিয়াস ভাই তাঁর উপন্যাসের নাম যে ‘করতোয়া মাহাত্ম্য’দেবেন, এ কথা অন্যদের সঙ্গে আলাপ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। আমি শেকসপিয়ারকে উদ্ধৃত করে বলেছিলাম: ‘Tis in my memory lock'd/And you yourself shall keep the key of it. ’‘এটি আমার স্মৃতিতে তালা দিয়ে রাখলাম/চাবি থাকুক আপনার কাছে’। ইলিয়াস ভাই খুব হেসেছিলেন। ইলিয়াস ভাই যত দিন জীবিত ছিলেন, এ বিষয় নিয়ে আমি দ্বিতীয় কারও সঙ্গে আলাপ করিনি। আজ আমার সেই গোপনীয়তা রক্ষার দায় নেই।

চৌধুরী মুফাদ আহমদ। প্রাবন্ধিক।