কোলাজ: আপন জোয়ার্দার
কোলাজ: আপন জোয়ার্দার

ফুটবল: বন্ধনের এক বিষাদযাত্রা

উরুগুয়ের বামপন্থী লেখক এদুয়ার্দো গালিয়ানোর সকার ইন সান অ্যান্ড শ্যাডো বইটিকে ফুটবল–রোমান্টিকতার শ্রেষ্ঠতম সাহিত্য বলেই গণ্য করেন ফুটবলপ্রেমীরা।

ছোট ছোট গল্পে এতে আছে ফুটবল–সংস্কৃতির
নির্যাস। রয়েছে এ খেলার ইতিহাস, রাজনীতি আর একে ঘিরে মানুষের আবেগ–অনুভূতির এক ছত্র। বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনাকর মুহূর্তে সৈয়দ ফায়েজ আহমেদের অনুবাদে সেই বিখ্যাত বই প্রকাশ করছে প্রথমা প্রকাশন। ফুটবল: ইতিহাসের খণ্ডচিত্র নামে অনুবাদগ্রন্থটি সপ্তাহখানেকের মধ্যেই প্রকাশিত হবে। বই থেকে নির্বাচিত অংশ।

ফুটবল

এদুয়ার্দো গালিয়ানো

ফুটবল খেলার ইতিহাস হচ্ছে নন্দন থেকে বন্ধনের এক বিষাদযাত্রা। যখনই খেলাটি পরিণত হলো ইন্ডাস্ট্রি তথা শ্রমশিল্পে, তখনই খেলার আনন্দ থেকে যে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, একেবারে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা হয় তা। আমাদের এই আধুনিক যুগে, যা কিছু অপ্রয়োজনীয়, তাকেই খারিজ করে দেয় পেশাদার ফুটবল। আর অপ্রয়োজনীয়র সংজ্ঞা তো আমরা জানিই—যা কিছু থেকে টাকাপয়সা কামানো যায় না।

কোনো এক পাগলাটে মুহূর্তে একজন বয়স্ক মানুষ যখন শিশুর মতো বেলুন দিয়ে খেলে, একটা বিড়াল যখন উলের বল নিয়ে কারিকুরি করে, একজন ব্যালে ড্যান্সার যখন বেলুন কিংবা তুলার বলের মতো হালকা বল নিয়ে কেবলই মম চিত্তে নৃত্য করে কিংবা যেসব খেলা কেবল মনের খোরাকের জন্য হয়, যেখানে আর কোনো লাভের চিন্তা অথবা ঘড়ি কিংবা কোনো রেফারি থাকে না, সেসব খেলা থেকে কেউ একটা ফুটা পয়সাও রোজগার করতে পারে না।

আজকের দিনে খেলা পরিণত হয়েছে প্রদর্শনীতে, যাতে থাকে কিছু কুশীলব আর দেখার জন্য অগণিত দর্শক। আর এই প্রদর্শনী দুনিয়ার অন্যতম লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, যা আয়োজন করা হয় খেলাটাকে প্রাণবন্ত নয়; বরং বাধা দেওয়ার জন্য। পেশাদার প্রযুক্তি আর আয়োজন ফুটবলকে দিয়েছে বিদ্যুতের মতো গতিশীলতা আর দানবীয় শক্তি, যে ফুটবল উপেক্ষা করে অপার আনন্দকে, কল্পনাকে খুন করে আর অপরাধ হিসেবে আখ্যা দেয় দুঃসাহসকে।

সৌভাগ্যক্রমে, এখনো মাঠে দেখা যায়, যদিও খুবই কদাচিৎ, কিছু গোঁয়ার বেয়াদব চিত্রনাট্যের থোড়াই কেয়ার করে এবং বল পায়ে পুরো বিপক্ষ দলকে কাটানোর পাপ করে, যা দেখে পুরো মাঠের দর্শক, এমনকি বিস্মিত রেফারিও মুক্ত স্বাধীন হওয়ার নিষিদ্ধ আনন্দের দুর্নিবার অনুভূতিতে কেঁপে ওঠে। 

খেলোয়াড়

মাঠের প্রান্তসীমা বরাবর হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে চলে সে। তার জন্য একদিকে অপেক্ষা করছে স্বর্গের মহিমা, আর অন্যদিকে—নারকীয় পতন! 

প্রতিবেশীদের ঈর্ষার পাত্র সে; পেশাদার এই ক্রীড়াবিদকে কারখানার শ্রমিক কিংবা অফিসের কেরানির কাজ করতে হয় না; বরং সে আনন্দের জন্য পয়সা পায়। যেন লটারি জিতেছে সে। 

যদিও এর জন্য বালতি বালতি ঘাম ঝরাতে হয়, সুযোগ থাকে না ব্যর্থতা বা ক্লান্তির, তবে তাকে দেখা যায় সংবাদপত্র আর টেলিভিশনে।

রেডিওতে শোনা যায় তার নাম, মেয়েরা তার কথা শুনলেই হয় উদ্বেলিত আর বাচ্চারা হতে চায় তার মতো। 

খেলাটা সে শুরু করেছিল আনন্দের জন্য, বস্তির ধুলামাখা পথে, কিন্তু এখন তাকে কর্তব্যের খাতিরে স্টেডিয়ামে খেলতে হয়, যেখানে তার আর কোনো বিকল্প নেই কেবল জয়ের পর জয় ছাড়া। 

ব্যবসায়ীরা কিনে নেয় তাকে, বেচে দেয়, ধার দেয় এবং আরও খ্যাতি, আরও আরও টাকার প্রতিশ্রুতিতে এসব করতে দেয় সে। সে যত বেশি সফল হয়, যত বেশি টাকা উপার্জন করে, ততটাই হয়ে পড়ে কারাবন্দী। কঠোর সামরিক শৃঙ্খলা মেনে বেঁচে থাকার বাধ্যবাধকতায়, তাকে প্রতিদিনের পীড়াদায়ক নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলন করতে হয় এবং অগণিত ব্যথানাশক ওষুধ আর কার্টিজেন ইনজেকশন সহ্য করতে হয়, যেগুলো তার শরীরকে ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে রাখে ব্যথা। আর বড় বড় খেলার আগের দিন তাকে বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়, যেখানে সে বাধ্য হয় পরিশ্রম করতে, বিস্বাদ খাবার খেতে, কেবল পানি খেয়েই নেশাতুর হতে আর চরম একাকিত্ব নিয়ে ঘুমাতে।

অন্যান্য মানবসংক্রান্ত ব্যবসায়, বৃদ্ধ বয়সে পতন হতে থাকে, কিন্তু একজন ফুটবল খেলোয়াড় তিরিশেই বুড়িয়ে যেতে পারে। অকালে দুর্বল হয়ে যায় মাংসপেশিগুলো।

‘মাঠটা যদি কোনো ঢালে হতো, এই লোক কখনো গোল করতে পারত না।’

‘এই বেটা? গোলকিপারের হাত দুইটা বাইন্ধা রাখলেও হালার পো গোল দিতে পারত না।’ 

অথবা তিরিশের আগে যদি সে বলের একটা বিষম আঘাত পায় অথবা দুর্ভাগ্যক্রমে মাংসপেশি ছিঁড়ে যায় কিংবা লাথি খেয়ে হাড় ভেঙে যায় এবং সেটি আর জোড়া লাগে না। এক অতি বিষাদময় দিনে খেলোয়াড়টি আবিষ্কার করে যে সে তার জীবনটা জুয়া রেখেছিল একখানা মাত্র তাসের ওপর আর তার সব ধনসম্পদ উধাও হয়ে গেছে এবং সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে সব খ্যাতি।  

খ্যাতি নামের সেই চনমনে নারী, ওকে নিঃস্ব, রিক্ত অবস্থায় ত্যাগ করার সময় বিদায় বলা তো দূর, একটাবার ফিরে পর্যন্ত তাকায়নি।

সমর্থক

বাড়ি থেকে সমর্থক স্টেডিয়ামে ছুটে যায় প্রতি সপ্তাহে একবার।

ব্যানার উড়তে থাকে আর বাতাসে ছড়িয়ে থাকে প্রচণ্ড কোলাহল, পটকা ফাটার আওয়াজ আর তালে তালে বেজে ওঠা বাদ্য; হাতে থাকে টুকরা কাগজ আর রঙিন জরির বৃষ্টি। দৈনন্দিন জীবনের ক্লিশে কার্যক্রম ভুলে হারিয়ে যায় পুরো শহর। শুধু টিকে থাকে এক প্রার্থনালয়। সেই পবিত্র স্থানে, দুনিয়ার একমাত্র সংশয়হীন ধর্মের উপাস্যদের প্রদর্শন করা হয়। যদিও সমর্থকেরা এই অপার বিস্ময় টেলিভিশনে আরও আয়েশ করে দেখতে পারে, কিন্তু তা-ও সে বরং এই তীর্থস্থানে যেতে চায়, যেখানে সে চর্মচক্ষে ওর দেবদূত আর দেখতে পাবে আজকের দিনের শয়তানের লড়াই।

এখানে সমর্থক তার হাতের রুমালটি ঝাঁকায়, কোঁত করে ঢোঁক গিলতে থাকে, সমানে হাতের নখ আর টুপি কামড়াতে থাকে, বিড়বিড় করে প্রার্থনা করে, চিৎকার করে গালাগাল দেয় এবং হঠাৎ এক গগনবিদারী হুংকার দিয়ে পাশের লোকটাকে সপাটে জাপটে ধরে গোলের আনন্দে উন্মাদের মতো নৃত্য করতে থাকে। সেই মন্দিরের আরও লাখ লাখ ভক্তের মতো, চন্দ্র-সূর্যের মতোই সত্য বিষয়গুলো আবার জোর দিয়ে জানায়—আমরাই সেরা, রেফারিগুলো সব চোরের হাড্ডি আর আমাদের প্রতিপক্ষগুলো বাটপার। 

‘আমার ক্লাব আজকে খেলছে,’ এই কথাটা সমর্থক কদাচিৎ বলে; বরং সে বলে, ‘আজকে আমাদের খেলা।’ সে জানে, ‘১২ নম্বর খেলোয়াড়টি’ স্বর্গীয় বাতাস ডেকে এনে ঘুমন্ত বলে প্রাণ সঞ্চার করে আর বাকি ১১ জন খেলোয়াড় যেমনটা জানে যে ওদের সমর্থকদের ছাড়া খেলা মানে সংগীত ছাড়া নাচ দেওয়ার মতো। 

যখন খেলা শেষ হয়, গ্যালারিতে সেঁটে থাকা সমর্থকেরা বিজয় উদ্​যাপন করে, ‘আমরা কী দারুণ একটা গোল দিয়েছি!’ ‘ওদের কী দারুণভাবেই না পর্যুদস্ত করলাম!’ অথবা পরাজয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ওরা আবার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে,’ ‘চোট্টা রেফারি’। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নেয় সমর্থকেরাও। খালি স্টেডিয়ামে ছায়া দীর্ঘায়িত হতে থাকে। কংক্রিটের সিঁড়িতে এদিক-ওদিক কিছু জায়গায় আগুন জ্বলতে থাকে আর মানুষের কণ্ঠস্বর ও মিইয়ে যেতে থাকে । স্টেডিয়ামকে একা রেখে সমর্থক আবার ফিরে যায় নিঃসঙ্গতায়: আমাদের থেকে আমির একাকিত্বে। সমর্থকেরা চলে যায়, ভেঙে যায় জনতার মিলনমেলা আর রোববারটার ওপর বিষণ্নতা ভর করে যেমনটা করে মেলা ভাঙার পর—ধূসর, রিক্ত বুধবারে। 

গোলবারের অভিশাপ

গোলকিপারটির চেহারা যেন কুঠারাঘাতে খোদাই করা ছিল আর মুখভর্তি চাঁদের কলঙ্কের মতো বসন্তের দাগ। তাঁর সুবিশাল মুষ্টিবদ্ধ হাতজোড়া গোলের জালকে খুব কষে তালা আর সিলবন্ধ করে রাখত আর তাঁর পা জোড়া ঠেকিয়ে রাখত একের পর এক কামানের গোলা। আমি যত ব্রাজিলীয় গোলরক্ষক দেখেছি, তাঁদের মধ্যে মাঙ্গাকে আমার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। একবার মন্টেভিডিওতে, আমি তাঁকে দেখেছিলাম এক পোস্ট থেকে আরেক পোস্টে গোল দিতে। মাঙ্গা নিজের পোস্ট থেকে শট নিয়েছিলেন আর বলটা অন্য কোনো খেলোয়াড় স্পর্শ করার আগেই বিপক্ষের জালে প্রবেশ করে। ব্রাজিল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তিনি অতি সামান্য পয়সায় উরুগুয়ের ক্লাব ন্যাসিওনালের হয়ে খেলছিলেন। ব্রাজিলীয় দল ’৬৬-এর বিশ্বকাপ থেকে মাথা নিচু করে বিদায় নেয় এক লজ্জাকর পরাজয়ের পর আর মাঙ্গা হয়েছিলেন সে-জাতীয় বিপর্যয়ের বলির পাঁঠা। একটা ম্যাচেই খেলেছিলেন তিনি। একটি ভুল করেন তিনি, পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন আর কপালটাই এত খারাপ যে পর্তুগাল ফাঁকা পোস্টে গোল করে বসে। সেই দুর্ভাগা ভুলটা এত বড় কেলেঙ্কারিতে পরিণত হয় যে এরপর দীর্ঘদিন গোলকিপাররা কোনো ভুল করলে সেগুলোকে বলা হয় ‘মানগুয়েরিদাস’।

এ রকমই একটি ব্যাপার ঘটেছিল ’৫৮ বিশ্বকাপে, যখন আর্জেন্টিনার হারের মূল্য চুকাতে হয় আমাদিও কাররিজোকে। তারও আগে ঘটেছিল, ১৯৫০ সালে, যখন মারাকানার ফাইনালে ব্রাজিল হেরে যাওয়ার পর গোটা জাতির নির্মম চাবুকের ঘা বুকে পেতে নিতে হয় মোয়াসির বারবোসাকে।

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে ক্যামেরুন কলম্বিয়াকে হারায়, যে কলম্বিয়া অমিত শক্তিশালী জার্মানির সঙ্গে জেতে দারুণ এক ম্যাচ। আফ্রিকান দলটির জয়সূচক গোলটি আসে গোলকিপার হিগুইতার নির্বুদ্ধিতায়। কারণ, তিনি বলটা পায়ে নিয়ে এগোতে এগোতে মাঝমাঠে গিয়ে এর নিয়ন্ত্রণ হারান। যে মানুষেরা হিগুইতার এই সাহসী তামাশা দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ত, সেই একই মানুষেরা বেচারা দেশে ফেরার পর তাঁকে কাঁচা গিলে ফেলার জন্য উদগ্র রাগে ফেটে পড়ছিল।

কলম্বিয়া দলটি হিগুইতাকে ছাড়াই ১৯৯৩ সালে আর্জেন্টিনাকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে। এই বিপুল গ্লানির পর কাউকে না কাউকে যূপকাষ্ঠের বলি হতেই হতো আর সেটা আর কেই-বা হবে? অতি সহজ উত্তর—গোলকিপার! সেই মর্মান্তিক পরাজয়ের সব ক্লেদ গায়ে মাখতে হয় সের্হিও গয়কোচিয়াকে। আর্জেন্টিনা এর আগে ৩০ ম্যাচে অপরাজিত ছিল আর এর প্রতিটিতে সাফল্যের নায়ক ছিলেন গয়কোচিয়া। কিন্তু কলম্বিয়ার গোল উৎসবের পর এই পেনাল্টি ঠেকানোর জাদুকরি ক্ষমতার অধিকারী এই গোলকিপার শুধু যে দল থেকে বাদ পড়েন তা-ই না, সমর্থকদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় দেওয়া নাম ‘সেন্ট গয়কো’ও চিরতরে হারিয়ে যায়। সমর্থকদের কেউ কেউ তো এই দাবি করেছিল, এই হতচ্ছাড়ার উচিত হবে আত্মহত্যা করা।

গোলকিপার

তাকে দ্বাররক্ষী, গোলি, বাউন্সার অথবা জালরক্ষকও বলে কেউ কেউ। তবে তাকে স্রেফ বলা যেত শহীদ, সর্বদাতা, অনুশোচনাকারী অথবা ঘুষি খাওয়ার বস্তা। যেই জায়গা দিয়ে সে হেঁটে যায়, সেখানে নাকি ঘাস গজায় না। 

সে একা, দূর থেকে একা একা খেলা দেখার শাস্তি ভোগ করা অপরাধী। কখনো সে গোলপোস্ট ছেড়ে বের হয় না, ওর একমাত্র সঙ্গী দুটি পোস্ট আর ক্রসবার, অপেক্ষা করে জল্লাদেরা তাকে খুন করতে আসবে বলে। আগে কালো পোশাক পরত সে, রেফারির মতো। এখন রেফারিকে কাকের মতো পোশাক পরতে হয় না আর গোলকিপার নিজের একাকিত্বকে সান্ত্বনা দিতে পারে নানা বর্ণের পোশাক পরে। 

গোল করে না, গোল ঠেকানোর জন্য খেলে সে। গোল হলো ফুটবল খেলার প্রাণ, উৎসবের আগুন জ্বালিয়ে দেয় গোলদাতারা, আর গোলকিপার! ঠান্ডা চাদরে নিভিয়ে দেয় সেটা।

তার গেঞ্জির পেছনে লেখা থাকে ‘১’। সে কি সবার আগে মজুরি পায়? জি না, সে সবার আগে দেয়। সব সময় দোষটা এই বেটা নন্দঘোষের ঘাড়েই বর্তায়। আর যখন দোষ পাওয়া যায় না, তখনো তাকেই দায়ী করা হয়। যখন কোনো খেলোয়াড় ফাউল করে, শাস্তিটা পায় কিপার। তারা বিশাল ফাঁকা পোস্টের সামনে তাকে একা ফেলে দূরে দাঁড়িয়ে দেখে, তার জল্লাদ এগিয়ে যাচ্ছে। আর যেদিন দলের দিন খারাপ যায়, সব ঝাল তার ওপর দিয়েই যায়। অন্যদের পাপের বোঝা বেচারাকে একাই বইতে হয় অনর্গল সব অশ্রাব্য বাক্যবাণের। 

অন্য খেলোয়াড়েরা মাঝেমধ্যেই একবার-দুবার ভুলভাল করতে পারে, পরে আবার দৃষ্টিনন্দন ড্রিবলিং, জাদুকরি পাস, দারুণ একটা ভলি দিয়ে করতে পারে সেই পাপের স্খলন। কিন্তু গোলকিপার? নৈবচ নৈবচ। দর্শক কখনো গোলকিপারকে ক্ষমা করে না। সে কি গড়াগড়ির ছলে আসলে অভিনয় করছিল? কী রকম বিদঘুটে দেখাচ্ছে না? বলটা কি পিছলে গেল? ওর লোহার মতো শক্ত হাতে কি আজ মাখন মাখা নাকি? একটামাত্র ভুলে গোলকিপার একটা ম্যাচ কিংবা গোটা টুর্নামেন্টটা হাতছাড়া করতে পারে আর হুট করেই দর্শকেরা ওর সব কৃতিত্ব ভুলে তাকে চরম গালাগাল দিয়ে চিরন্তন নরকে পাঠিয়ে দিতে পারে। বেচারাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাড়া করে এই দুঃস্বপ্ন।


অনুবাদ: সৈয়দ ফায়েজ আহমেদ