শিল্পী সোহাগ পারভেজের ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’
শিল্পী সোহাগ পারভেজের ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’

প্রদর্শনী

সাত দশকের চিত্রকলার সারসংক্ষেপ

হাতে লোকজ পুতুল ও কাঠের খেলনা নিয়ে ঈদমেলা থেকে বাড়ি ফিরছে কিশোর-কিশোরী—শিল্পী মুর্তজা বশীরের আঁকা এই চিত্র যেন আবহমান গ্রামীণ বাংলার মনন ও সংস্কৃতির আদর্শ কথা। এ ছাড়া ১৯৫২ সালে আঁকা ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলিবিদ্ধ শহীদের ছবি, কিংবা কাইয়ুম চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধার মুখাবয়ব শুধুই শিল্পকর্ম নয়, বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের রক্তাক্ত ইতিহাসগাথা। বলছি, গ্যালারি কায়ার ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদর্শিত চিত্রপ্রদর্শনী সম্পর্কে।

শিল্পী মুর্তজা বশীরের ‘ঈদমেলা থেকে ফেরা’

প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের শিল্পজগতের প্রয়াত কিংবদন্তি শিল্পী কামরুল হাসান থেকে শুরু করে সমকালের নবীন প্রতিভাধর শিল্পীদের কাজ রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৫২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আঁকা এসব শিল্পকর্মে উঠে এসেছে ভাষা, দেশ, প্রকৃতি, নিসর্গ, ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও বিমূর্ত চেতনার অনুপম মিলন। বলা চলে, এই প্রদর্শনী বিগত সাত দশকের বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রাপ্ত শিল্পীদের চিত্রকলার সারসংক্ষেপ সংকলন।

শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর ‘চিরন্তন বাংলা’

শিল্পী রফিকুন নবীর গোধূলি দৃশ্য, হামিদুজ্জামান খানের জলরঙে আঁকা বৃষ্টিস্নাত আকাশ ও ঢেউছোঁয়া সমুদ্রতীর, আহমেদ শামসুদ্দোহার সুন্দরবন, আনিসুজ্জামানের ধানখেত, কামালউদ্দিনের বান্দরবানের স্কেচচিত্রে ফুটে উঠেছে বাংলার ভূপ্রকৃতি ও ঋতুচক্রের কাব্যিক অনুবাদ। মোটকথা, বাংলার প্রকৃতি ও মানুষ বেশি উপস্থ হয়েছে অধিকাংশ শিল্পীর কাজে।

শিল্পী আহমেদ শামসুদ্দোহার ‘সুন্দরবন’

তরুণদের মধ্যে সোহাগ পারভেজ ও শাহানূর মামুন নিসর্গের সৌন্দর্যকে নবতর ভাবনায় মূর্ত করেছেন। নগরবাসী বর্মণের ‘উড়ন্ত লন্ডন’, কনকচাঁপা চাকমার ‘বসন্তের বাতাস’ কিংবা শেখ আফজাল হোসেনের মা ও শিশুর ছাগল নিয়ে ‘বাড়ি ফেরা’—সবই হয়ে উঠেছে লোকজ স্মৃতির একেকটি রঙিন আলেখ্য।

শিল্পী গৌতম চক্রবর্তীর ‘হাতি-১৫৭’

অভ্যন্তরীণ অনুভূতির বিমূর্ত প্রকাশ মিলেছে শিল্পী চন্দ্রশেখর দে, গৌতম চক্রবর্তী, রণজিৎ দাসসহ অনেকের কাজে। চিন্তার খোরাক জোগায় আশরাফুল হাসানের ‘কাগজের মানুষ’, আলপ্তগীন তুষারের ‘নাচোল বিদ্রোহ’ কিংবা শিশির ভট্টাচার্য্যের ফ্যান্টাসিধর্মী চিত্রকাব্যে। শিশিরের ছন্দময় রেখা যেন চিত্রনাট্যের পাণ্ডুলিপি।

শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া, মাহমুদুল হক, আবুল বারক আলভী, মোহাম্মদ ইউনুস ও মাকসুদা ইকবাল নিপার বিমূর্ত রচনায় প্রকৃতি, প্রেম ও ব্যঞ্জনার সংবেদনশীল অন্তরঙ্গতা পাঠযোগ্য হয়ে ওঠে রং, রেখা ও ফর্মের অবয়বে।

শিল্পী কাজী আব্দুল বাসেতের ‘শিরোনামহীন’

শিল্পী আব্দুর শাকুর শাহের কাজে লোকসাহিত্য ও লোকজ ধারার আধুনিক সংলাপ। তবে এই বিস্তৃত আয়োজনে অনেকেই হয়তো লোকশিল্পী কিংবা কথাকথিত অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীদের কাজের অভাববোধ করবে। কারণ, বাংলাদেশের চিত্রকলার শিকড়ে যে লোকজ স্বতঃস্ফূর্ত সৃজনধারায় রয়েছে—সেই চর্চাগুলোও যদি ভবিষ্যতের প্রদর্শনীতে স্থান পায়, তবে আশা করা যায় গ্যালারি কায়ার এই উদ্‌যাপন হয়ে উঠবে আরও সর্বজনীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।

শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের ‘শিরোনামহীন’

উত্তরার গ্যালারি কায়ায় ২৭ জুন শুরু হওয়া ‘আর্ট ইজ টাইম অ্যান্ড বিয়ন্ড’ প্রতিপাদ্যের প্রদর্শনীটি ১২ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকবে।