
মানুষের ক্রন্দসী ভাষাকে ধরতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্রের পানির পাঁকে ১৯৯৫–এর ২৯ ডিসেম্বর স্তব্ধ হয়ে যায় প্রার্থনায় উত্থিত মোনাজাতের হস্তযুগল। গত সোমবার ছিল মোনাজাতউদ্দিনের ৩০তম প্রয়াণদিবস। গণমানুষের প্রতি ও সাংবাদিকতায় তাঁর নিবেদনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ লেখা।
‘পচা-গলা রঙ-লেপা হে “সভ্যতা” আগামী প্রজন্মের কাছে তোমাকে নিশ্চয়ই জবাব দিতে হবে, বিপুল খাদ্য খাবারের পাশে দাঁড়িয়ে থেকেও দমরুদ্দিনেরা কেন হয়েছে কঙ্কাল? কেন সে আজও নেংটি পরে থাকে? জবাব দিতে হবে—কেন হাকিমুদ্দিন তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না? কেন প্যানকাটু বর্মনের কর্মের হাত পরিণত হয় ভিক্ষুকের হাতে? কেন চিকিৎসা পায় না খাউজানি-সবেরুদ্দি-আনোয়ারা? কেন আশ্রয় হারায় আহাদ আলী? কেন ভাগ্য–বিশ্বাসী হয়ে থাকে অজিবর? নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই এর জবাবদিহি একদিন তোমাকে করতেই হবে ওপর সাদা ভেতর কালো হে “সভ্যতা”।’
এই ছিল মোনাজাতউদ্দিনের শেষ প্রার্থনা, যা তিনি তাঁর শেষ গ্রন্থ লক্ষ্মীটারীর প্রচ্ছদে লিখে গেছেন।
তিস্তাপারের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম লক্ষ্মীটারী। এর অভ্যন্তরে জীবন-জীবিকার যে টানাপোড়েন, যে দ্বান্দ্বিক জঙ্গমতা, কষ্ট ও কর্ষণের যে দ্বিধাবিভক্তি, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যে দোদুল্যমানতা, জ্বর ও জ্বালার যে বহ্নিশিখা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল গ্রামটির সামগ্রিক আবহ—তার এক বাস্তব অথচ অবিশ্বাস্য ইচ্ছাপত্র মোনাজাতউদ্দিনের লক্ষ্মীটারী। এই বইয়ের প্রকাশনার যাবতীয় কাজ তিনি করে গিয়েছিলেন নিজ হাতে, কিন্তু নিজে দেখে যেতে পারেননি এর প্রকাশিত রূপ।
‘শিয়রে টিমটিমে কূপির সলতে কেরোসিন শুষে খেতে খেতে ক্লান্ত, একটু একটু লাফাচ্ছে শিখাটা, বোধ হয় এক্ষুনি নিতে যাবে, কামরাটা গিলে খাবে অন্ধকার’, এই বাকনির্মিতি কি জসীমউদ্দীনের ‘পল্লী জননী’র হাহাকারে নিনাদিত করে না আমাদের? ‘পাশে জ্বলিয়া মাটির প্রদীপ বাতাসে জমায় খেল/ আঁধারের সাথে যুঝিয়া তাহার ফুরায়ে এসেছে তেল।’ কিংবা ‘অন্ধকার একটু পাতলা হলে, মনে হলো একটা চৌকো খোলা সাদা বাক্সের ভেতর শুয়ে আছি। যেন কবর।’ তবে কি মোনাজাতউদ্দিন তাঁর মৃত্যুর আগাম কোনো ইঙ্গিত পেয়েছিলেন? না হলে কেন কবর এবং লাশের এসব অনুষঙ্গ? অন্যান্য বইতে তো তিনি অনেক উপমাই এনেছেন। কিন্তু কবর কিংবা মৃত্যু আসেনি। নাকি মৃত্যুর সেই নির্বাণচেতনালোক জাগ্রত হয়েছিল তাঁর মনের গভীর কন্দরে, যেখানে হঠাৎ আলোক ঝলকানিতে জ্বলে ওঠে সত্যের ধূপকাঠি!
তিস্তাপারের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম লক্ষ্মীটারী। এখানে জীবন-জীবিকার যে টানাপোড়েন, যে দ্বান্দ্বিক জঙ্গমতা, কষ্ট ও কর্ষণের যে দ্বিধাবিভক্তি, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যে দোদুল্যমানতা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল গ্রামটির সামগ্রিক আবহ—তার এক বাস্তব অথচ অবিশ্বাস্য ইচ্ছাপত্র মোনাজাতউদ্দিনের ‘লক্ষ্মীটারী’।
গ্রামীণ মানুষ এবং পরিবেশের সঙ্গে এক হয়ে মিশে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন বাস্তবতার গভীর সংবেদ। মনে হয়, মোনাজাতউদ্দিন প্রতিবেদনের ঢঙে সংগীতের সুরে রচনা করেছিলেন এক অনুপম শোকগাথা। তাঁর কলমের বুকে জেগে ওঠে রক্তের প্রলেপ—‘এই দেশে জন্ম নিয়ে কী পাপ প্যানকাটু করেছে যে সে কাজ পাবে না, খাবার পাবে না, উলঙ্গ থাকবে, আর তাদের নিয়ে যারা উন্নয়ন-প্রকল্প বানায় বা উন্নয়নের কথা বলে, তারা ঘণ্টায় ঘণ্টায় পোশাক বদলাবে, রং মাখবে, যাবতীয় পুষ্টি খাবে, গাড়ি হাঁকাবে।’
জীবনযুদ্ধে পরাজিত ‘তিস্তার বালুচরে দাঁড়িয়ে থাকা পিঠবাঁকা প্যানকাট এখন বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো।—তোবড়ানো মুখ, ঘোলা চাখের মনি, কপালে শত কুঞ্চন, বুকের হাড়ে সাদা লোম—গর্তে ডোব্বা পেটের চামড়ায় অসংখ্য ভাঁজ।’ এভাবেই দর্শনের অনুভূতিকে তিনি প্রকাশ করেছেন ভাবে ও ভাষায়, প্রতিবাদ ও প্রবহমানতায়। গ্রামপ্রধান একটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা আজও কতটুকু অমানবিক, কিংবা আদৌ মানবিক কি না, এই প্রশ্নকারীদের ছলা-প্রবঞ্চনা, শোষণ-নিপীড়নের বিভিন্ন ও বহুমুখী ফাঁক–ফোঁকরে অতিসন্তর্পণে আলোকসম্পাত করেছেন মোনাজাতউদ্দিন তাঁর লক্ষ্মীটারীতে। যেখানে ‘মালিক যেমন শ্রমিকের শ্রম নিংড়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছে, তেমনি সমাজের অন্যান্য শ্রেণী-অবস্থানেও এই খাওয়াটাই যেন প্রধান জীবনধর্ম। মহাজন সুদ খাচ্ছে। কিছু মিনিস্টিার-বুরোক্র্যাট, টেকনোক্রাট উপরি-পার্সেন্টেজ খাচ্ছে।’
নিভৃত পল্লির জীবনপ্রবাহে ভিলেজ পলিটিকসের মারপ্যাঁচের অন্তরালে সাংবাদিক কলমেও মাঝেমধ্যে কিছু খাদ্য–খাবার ঢুকে গেলেও মোনাজাতউদ্দিনের কলম ছিল যেমনই দুঃসাহসী, তেমনি বেগবান। তাঁর লেখায় পাই গম চুরি করেও একজন মেম্বারের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘এইবার আমাকে মাফ করি দেন। চলেন মসজিদে যাই, কিরা কাটি, জীবোনে আর কোনো দিন এই কাম করমো না।...এই রেপোট তোমরা লেখপেন না রেপোটার, হামি মরি যামো। বহু টাকা করচ করি হামি সিউ (সিও) সাহেবকে ম্যানেজ করছি।’
গ্রামপ্রধান একটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা আজও কতটুকু অমানবিক, কিংবা আদৌ মানবিক কি না, এই প্রশ্নকারীদের ছলা-প্রবঞ্চনা, শোষণ-নিপীড়নের বিভিন্ন ও বহুমুখী ফাঁক–ফোঁকরে অতিসন্তর্পণে আলোকসম্পাত করেছেন মোনাজাতউদ্দিন তাঁর ‘লক্ষ্মীটারী’তে।
এবং শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে ঘরে দরজার শব্দে তিনি খুলে দেখেন, ‘সামনে মেম্বার সাহেবের কিশোরী কন্যা। পেছনে তার প্রথম পক্ষের বড়ো ছেলে। আরো একজন। শেষে মেম্বার।’ তারপরও মোনাজাতউদ্দিনের কলম থেমে থাকেনি।
‘আমার কিছু নাই’ আর ‘ফসল মারা গেল’ বলে যে ভূস্বামী এখানে লোকদেখানো আর্তনাদ করে, তারাই আবার ‘জমির পর জমি কিনছে, নতুন নতুন ঘর তুলছে’। পক্ষান্তরে ‘এর পাশেই পেটে–পিঠে এক হয়ে যাওয়া এক মন্তাজ আলী, যে লোকটি কৃষিকর্মী, উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে গায়ে–গতরে রক্ত-ঘামে জড়িত থাকা সত্ত্বেও অতি অল্প পারিশ্রমিকে খাওয়া না-খাওয়া মানুষটি সপরিবারে অপুষ্টিতে শুকোয়।’
মোনাজাতউদ্দিন যেন বঙ্কিমবাবুর উপমায় কমলাকান্তর মতো নিজেকে আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন তাঁর ভাষার কৌণিক ও সরল আপতনের ধাঁচে ও ঢঙে, ভর্ৎসনা ও বেদনায়। কমলাকান্ত যেমন বাজারের কেনাবেচার অসংগতি দেখে হেসে উঠে হো হো শব্দে, ঠিক তেমনি মোনাজাতউদ্দিনের লক্ষ্মীটারীতে ৪০০ টাকার তামাক ৬০ টাকায় বিক্রির ঘটনা বর্ণিত হয়েছে শ্লেষ ও চাঁছাছোলার মতোই ঘৃণায়, ‘আগে বদরগঞ্জ ও সাঘাটায় মূল্যবঞ্চিত কৃষকদের দেখেছি পাটে আগুন ধরিয়ে দিতে। নওগাঁয় দেখেছি পঁচিশ পয়সার মূলো নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিতে।’ কিন্তু লক্ষ্মীটারীর বাজারে মূল্যবঞ্চিত এক তামাকচাষী হাকিমুদ্দিন তার কষ্টের উৎপাদিত ফসলের গাঁটিতে ঘরঘর ছরছর করে পেচ্ছাব করলো।’
‘খেলাধূলা বলতে নেই লক্ষ্মীটারীতে। সুস্থ চিত্তবিনোদনের মত কোনো ব্যবস্থা নেই। বিড়ি কোম্পানির প্রচার দলে হিজড়াদের “আজা মেরে বাল মাতিরা ইন্তেজার হ্যায়” গানের সাথে বুক-কোমর ঝাঁকানো নাচও কোথাও কোথাও জমে ওঠে।’ লক্ষ্মীটারী গ্রামের যাবতীয় অনুষঙ্গে তিনি একটি নারী চরিত্রকে কল্পনা করছেন। পাশাপাশি অঙ্কন করেছেন বেশ কিছু অপরিহার্য চরিত্র। প্রথম থেকে শেষাবধি লক্ষ্মীটারীতে একটি শৈল্পিক স্বাদুতা আছে, আছে প্রতিবেদনগত কৌশল এবং তত্ত্ব ও তথ্য সংগ্রহের পটুত্ব। না হলে কীভাবে গমচোর চেয়ারম্যান-মেম্বার মুখ খোলে, স্বীকার করে চুরির ঘটনা ‘গম হামরা বেচেছি। বেশি নয় মাত্র ছয় মণ—কিন্তু হামরা সেই টাকা তো বাড়িত নিয়া গিয়া বাজার করি নাই, অপিচারোক খাওয়াইচি।’ অপর দিকে গ্রামের প্রকৃতির মতো সহজ-সরল মানুষগুলো অপবাদ দিয়েছে মোনাজাতউদ্দিনকে, ‘আসলে কন্ তোমরা ইগলা ছাপাবার নন। চেয়ারম্যান তোমাক হাত করি ফেলাইচে।’
কিন্তু গ্রামের মানুষেরা জেনেছিল, মোনাজাতউদ্দিন কোনো দিন কারও কাছে বিক্রি হয়ে যাননি।
চেয়ারম্যান যে হাত করতে চাননি, তা কিন্তু নয়, চেয়েছিলেন। কোনো সাংবাদিক গেলে তাঁর একমাত্র জায়গা ছিল চেয়ারম্যানের বাড়িতেই। কিন্তু মোনাজাতউদ্দিন ফ্যামিলি প্লানিং ক্লিনিকের মেঝেতে অন্ধকার ঘরে, ব্যাঙ আর মশার উৎপাত উপেক্ষা করে কাটিয়েছেন রাত। দেখেছেন, লক্ষ্মীটারীর লক্ষ্মীছাড়া অবস্থা, যেখানে রাতের হিসেবে পথের ধারে হেলে পড়া কলার মোচা পেয়েই মহাখুশি হয় আহাদ আলী, যেখানে অধিকাংশ মানুষ জানে না জন্মশাসন কী, যেখানে ক্ষুধা নিবারণের জন্য আজও মানুষের প্রত্যাশা ‘হামাকচাইর আনা পয়সা দ্যেও, মুড়ি খামো’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মোনাজাতউদ্দিনের মনে হয়েছে, এসব মানুষের ক্ষুধা, জঠর-জ্বালা, অসহায়ত্ব—চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে কলম ও নোটবুক, পোশাক–পরিচ্ছদ, শরীর, হৃদয়ের সবকিছু। তিস্তা বিধৌত এই লক্ষ্মীটারীর নদী নিয়ে ব্যবসা হয়। নদীর প্রবাহ তাই থেমে গেছে বলা যায়; থেমে গেছে জীবনের সুস্থ ও মৌলিক বিকাশ। ফলে মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলে ‘হাঁ হয়ে থাকে’ তরুণ–যুবকেরা।
মোনাজাতউদ্দিন দেখেছিলেন, কোথায় যেন একটা গভীর ফারাক আর আঞ্চলিকতার করাতকল হাহাকারমুখর করে তুলেছে বাংলা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন। কোথায় যেন একটা সত্য প্রকাশের লাজুকলতা বেড়ে উঠছে প্রকাশ্যেই। এখানে সাঁকো নয়, ডানা ভেঙে মুখথুবড়ে পড়ে যায় গ্রামীণ মানুষ আর উন্নয়নের প্রাত্যহিক সম্পর্কের যুগল বালিহাঁস।
মন ও মননে সংবাদের গভীরে মোনাজাতউদ্দিন সদাই খুলে রাখেন অন্তর্নিহিত সত্যের এক সুরেলা আরশি। গ্রামীণ রাতের শোকাতুর ঝিঁঝিঁপোকার রসদ মানবিক বোধে সদা জাগ্রত তাঁর সাংবাদিক চেতনার বৈভবে। বাস্তবতার বিষবাষ্প আর বিস্মিত বিহ্বলতা প্রতিনিয়ত ফুটে ওঠে তাঁর লেখার মধ্যে মায়াবী মূলের সারল্যে। সেখানে ঝুলে থাকে রৌদ্রবিহ্বল হৃদয়ের টান আর শিহরিত পাখিদের মুখরতা। গ্রামীণ মানুষের ভারবাহী ভাবনাগুলো মন্থন করে মোনাজাতউদ্দিন লিখে রাখেন উপশমের মলম; যা বোধকে করে বহ্নিময়, চেতনাকে করে দীপ্তিমান। উৎসের বহ্নি থেকে জীবনের যাত্রাপথে যাতনাময় যে জ্বালা, তাকে এক অনাবিল আলোয় তিনি করে তোলেন জোছনামুখর। তাই তো সংবাদের উৎস থেকে সুষুপ্ত বহ্নিময় শিখাকে তিনি প্রজ্বালিত করেন প্রতিটি লেখার মশালে লক্ষ্মীটারীর প্রতিটি লেখায়।
জীবন আর দৈনন্দিনতার তীব্র টান শাণিত শেল হয়ে বেজে ওঠে মোনাজাতউদ্দিনের প্রতিবেদনের ছোঁয়ায়। সামাজিক ও রাজনৈতিক অসাম্য আর অসংগতিতে তাঁর কলম সর্বদাই সোচ্চার, নম্রতায় উচ্চ কণ্ঠ। লেখনীতে তিনি রৌদ্রের ডানা দিয়ে ঢেকে দেন শোষণ, রাজনীতি, ধর্ম ও সমাজের গ্রহণ। একদিকে শাশ্বত বাংলার গ্রামীণ জীবনের টানাপোড়েন আর সর্বজনীন নির্যাতনের নিরেট উপস্থাপন, অন্যদিকে জীবনের অভিজ্ঞতা ও সঞ্চয়—এই দ্বিবিধ সংশ্লেষ ও সংযোজনে প্রতিটি প্রতিবেদনে তিনি রেখে যান দক্ষতার ছাপ। ঠাট্টা-মশকরার ভঙ্গিতে সজোর ধাক্কা মেরে জাগিয়ে তোলেন আমাদের বিবেকের বোধ।
মোনাজাতউদ্দিন বাংলা সংবাদপত্রের এক অনুপম কলম। কেননা, তাঁর চিরায়ত চেতনার এক চির উজ্জ্বল যাপনের নাম—নিমজ্জন। যতই গভীরে নামি—অতল; যতই ওপরে ভাসি—অসীম; সংবাদভাষ্যে তিনি যতটা নীরব ও সাবলীল, ততটাই জলঝরনার মতো চঞ্চল ভেতরে–ভেতরে।
মোনাজাতউদ্দিন দেখেছিলেন, কোথায় যেন একটা গভীর ফারাক আর আঞ্চলিকতার করাতকল হাহাকারমুখর করে তুলেছে বাংলা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন। কোথায় যেন একটা সত্য প্রকাশের লাজুকলতা বেড়ে উঠছে প্রকাশ্যেই। এখানে সাঁকো নয়, ডানা ভেঙে মুখথুবড়ে পড়ে যায় গ্রামীণ মানুষ আর উন্নয়নের প্রাত্যহিক সম্পর্কের যুগল বালিহাঁস। ফুলেল আবেগে তাঁর লেখায় অবলীলায় বেজে ওঠে দূর থেকে ভেসে আসা শোষিত মানুষের কান্নার সুর, ফুটে ওঠে জীবনের অপরিহার্য গন্দম। তাই সাংবাদিকতার তথাকথিত ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজধানীতে বসে থেকে তিনি প্রতিবেদন লেখেননি। প্রতিনিয়ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেছেন গ্রামীণ জনপদের, বিশেষ করে রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঠে-প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে।
মোনাজাতউদ্দিনের শেষ প্রত্যয়ও ছিল এসব সংবাদ ‘নিউ জেনারেশন’–এর কাছে তুলে ধরা; ‘তারা যখন বড় হয়ে রাজনীতিতে আসবে, দেশ পরিচালনায় আসবে’, তারা যেন নীতিনির্ধারণের সময় সামনে রাখে নমরুদ্দিন-প্যানকাটু খাউজানি আর গীতবালাদের।