স্মরণ

কাজী নজরুল ইসলামের ৩টি ছড়া

গত পরশু ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। চলো, আজ পড়া যাক তাঁর লেখা ৩টি ছড়া...

ঝুম্‌কো লতায় জোনাকি

ঝুম্‌কো লতায় জোনাকি—

মাঝে মাঝে বিষ্টি গো

আবল তাবল বকে কে

তারও চেয়ে মিষ্টি গো

মিষ্টি মিষ্টি।

আকাশে সব ফ্যাকাসে

ডালিম-দানা পাকেনি,

চাঁদ ওঠেনি কোলে তার

মা ব’লে সে ডাকেনি।

রাগ করেছে বাঘিনী

বারো বছর হাসে না,

স্বপ্ন তাহার ভেঙে যায়

খোকা কেন আসে না।

পাথর হ’য়ে আছে—ঝিনুক দুধের বাটী দোলে না

মাকে বলে—“খোকা কই

কিছুই খোলা হ’ল না!

কিছুই ভাল লাগে না!”

কেঁদে’ বলে ঘরের জিনিস—“যেমন ছিলাম তেমনি আছি—

খোকা কেন ভাঙে না,

কিছুই ভাল লাগে না।”

প্রজাপতি

প্রজাপতি! প্রজাপতি! কোথায় পেলে ভাই

এমন রঙীন্ পাখা!

টুক্‌টুকে লাল্ নীল্ ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা।।

কোথায় পেলে ভাই এমন রঙীন্ পাখা!

তুমি টুল্‌টুলে বন-ফুলে মধু খাও,

মোর বন্ধু হয়ে সেই মধু দাও, মধু দাও;

দাও পাখা দাও সোনালী রূপালী-পরাগ-মাখা।

কোথায় পেলে ভাই এমন রঙীন্ পাখা।।

মোর মন যেতে চায় না পাঠশালাতে,

প্রজাপতি!

তুমি নিয়ে যাও সাথী ক’রে তোমার সাথে।

তুমি হাওয়ায় নেচে নেচে যাও,

তোমার মত মোরে আনন্দ দাও;

এই জামা ভালো লাগে না,

দাও জামা ওই ছবি-আঁকা।

কোথায় পেলে ভাই এমন রঙীন্ পাখা।।

মট্কু মাইতি

বাঁট্কুল রায়

মট্কু মাইতি বাঁট্কুল রায়

ক্রুদ্ধ হ’য়ে যুদ্ধে যায়,

বেঁটে খাটো নিট্‌পিটে পায়

ছেৎরে চলে কেৎরে চায়।

মট্কু মাইতি বাঁট্কুল রায়।।

পায়ে প’রে গাব্দা বুট আর পট্টি

গড়াইয়া চলে যেন গাঁঠ্‌রি ও মোটটি,

হনুলুলু সুরে গায় গান উদভট্টি

হাঁটি হাঁটি পা পা ডাইনে বাঁয়

মট্কু মাইতি বাঁট্কুল রায়।।

রাস্তায় তেড়ে এল এঁড়ে এক দামড়া

টুঁস খেয়ে বাঁট্কুল ছ’ড়ে গেল চাম্‌ড়া

ভয়ে মট্কুর চোখ হয়ে গেল আমড়া।

সে উল্‌টিয়ে সাতপাক ডিগবাজি খায়।

মট্কু মাইতি বাঁট্কুল রায়।।

ছড়াগুলোতে কাজী নজরুল ইসলামের বানানরীতি অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে