
টম ও জেরিকে তো সবাই চেনো। এই দুজনের মধ্যে তোমার কাকে বেশি পছন্দ? নিশ্চয়ই বলবে জেরিকে, তাই না? টম তো একটা দুষ্টু বিড়াল। জেরিকে হেনস্তা করতে লেগে থাকে সারা দিন। অথচ দেখো, কার্টুন ছবিতে জেরি কিংবা মিকি মাউসের মতো ইঁদুরকে বেশি পছন্দ করলেও বাস্তবে কিন্তু আমরা বিড়ালই বেশি ভালোবাসি। এমনকি সেই ইঁদুর ধরতেই অনেকে বাসায় বিড়াল পোষে।
তা ছাড়া বিড়াল অনেক আদরের হয় বলেই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পালিত পোষা প্রাণী হলো বিড়াল। শুধু তা-ই নয়, বাসায় যদি তুমি বিড়াল নাও পোষো, তবু দেখবে এরা তোমার আশপাশে ঘুর ঘুর করছে আর ‘মিউ মিউ’ ডাকছে। মিষ্টি ডাক শুনে কার না একটু আদর করতে ইচ্ছা হয় বলো। কার্টুনে বিড়াল মানুষের মতো কথা বললেও বাস্তবে তো আর সেটা সম্ভব নয়। কেমন মজা হতো, যদি তুমি বিড়ালের ভাষা বুঝতে পারতে?
বিজ্ঞানীদের মতে মানুষের কাছে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার জন্য বিড়ালেরা প্রায় শতাধিক ডাক ডাকে কিংবা অঙ্গভঙ্গি করে। প্রাণী চরিত্র বিশেষজ্ঞ গ্যারি উইজম্যান বলেন, বিড়ালেরা ভিন্ন ভিন্ন মিউ ডাক দিয়ে মানুষকেই তাদের ভাষাটা শেখাতে চায়।
বোঝো অবস্থা! ভাবছ, তুমি তোমার পোষা বিড়ালটাকে শেখাও। তা নয়, উল্টো বিড়ালটাই আসলে তোমাকে ‘ট্রেনিং’ দেয়!
আশপাশে যখন কোনো বিড়াল মিউ মিউ ডাকে, তখন একটু গভীরভাবে লক্ষ করলেই এই ডাকগুলো আলাদা করতে পারবে।
একটা ছোট্ট মিউ ডাক দিয়ে বিড়াল কী বোঝায় জানো? তোমাকে হাই-হ্যালো, অর্থাৎ সম্ভাষণ জানায়। আবার তুমি যদি অনেক দিন পর বাসায় আসো, দেখবে বিড়ালটা বারবার সেই ছোট্ট মিউ ডাকটা দিচ্ছে। এর মানে তুমি আসায় সে বেজায় খুশি! খিদে লাগলে একটু মাঝারি দৈর্ঘ্যের মিউ ডাক দিয়ে খাবার কিংবা পানি দেওয়ার আকুতি জানায় বিড়ালেরা। কিন্তু খাবার দিতে দেরি হলে সেই মিউ ডাকটা একটু ছোট করে উচ্চ স্বরে ডাকতে থাকবে সে। যদি কোনো অভিযোগ থাকে কিংবা তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়, তবে মিউ না করে ‘ম্রো ম্রো’ ধরনের একটা আওয়াজ করে ওরা।
মিউ মিউ ছাড়াও আরও বিশেষ কিছু আওয়াজ শুনবে বিড়ালের মুখে। যেমন যখন গরগর করে আওয়াজ করে, তখন বুঝতে হবে সে অনেক খুশিতে আছে। মা বিড়াল যখন তার বাচ্চাকে আদর করে, তখন বিড়ালছানা মূলত গরগর আওয়াজের মাধ্যমে মাকে বলতে চায় যে তার সব ঠিক আছে। ব্যথা পেলে, রেগে গেলে কিংবা অসুস্থ হলেও বিড়াল গরগর করে নিজেদের শান্ত করার জন্য। কিন্তু এই গরগর শব্দটা একটু অন্য রকম হয়। খুব রেগে গেলে কিংবা ভয় পেয়ে নিজেকে রক্ষার জন্য বিড়ালরা সাপের মতো হিসহিস শব্দ করতে থাকে। কোনো বিষয়ে খুব উত্তেজিত, চিন্তিত অথবা কোনো শিকার তার আশপাশেই আছে, কিন্তু সে তাকে ধরতে পারছে না—এমন পরিস্থিতে বিড়ালেরা একটি বিশেষ ধরনের শব্দ করে। ইংরেজিতে যাকে ‘চ্যাটারিং’ বলে। বাংলায় তুমি ‘দাঁতে দাঁত ঘষার শব্দ’ও বলতে পারো।
বিভিন্ন ধরনের ডাক কিংবা আওয়াজ ছাড়াও বিশেষ অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও বিড়ালেরা মানুষের কাছে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। সোজা ওপরে লেজ উঠিয়ে মাথা একটু বাঁকিয়ে, অর্থাৎ অনেকটা প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো হলে বুঝতে হবে সে খুশিতে আছে। লেজ যদি কাঁপাতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে তোমাকে দেখে খুব খুশি এবং উত্তেজিত। আবার লেজ যদি সোজা হয়ে নিচের দিকে নেমে থাকে, তাহলে বুঝবে সে ভয় পেয়েছে কিংবা তেড়ে আসতে পারে। এই সময় কিন্তু বিড়ালের কান দুটোও টান টান হয়ে যায়। বিড়ালের চোখ খুব মায়াবী। সে তার চোখের ভাষাতেও অনেক কিছুই বোঝাতে পারে। যদি বিড়ালটি তোমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অথবা আস্তে আস্তে চোখ টেপে, তবে বুঝে নাও, বিল্লিটা তোমাকে খুব ভালোবাসে!
সাজিদুল হক
সূত্র: ডেইলিমেইল ও পেটস ওয়েব