কেউ অভিনয়শিল্পী, কেউ সংগীতশিল্পী। তবে শখে কলম তুলে নেন মাঝেমধ্যে। প্রথম আলোর অনুরোধে পাঠকদের জন্য কবিতা লিখেছেন তাঁরা

মেলাভাঙার গান
তৌকীর আহমেদ
হলুদ ফিতে লাল চুড়ি,
রঙিন ফ্রকের কোঁচড়ে
বাতাসা, গজা, নৈ টানা।
নাগরদোলায় ঘূর্ণন শেষে
গ্যালিলিওর মতো একই বোধে উপনীত সে,
যার নাম কখনো সে শুনবে না হয়তো,
তবু বোধের কী আশ্চর্য মিল কালান্তরে।
তীব্র ঘূর্ণনে এখন বিপর্যস্ত সে
ভিসুভিয়াসের লাভার মতো উদ্গিরণ
করে সে বাতাসা, গজা আর নৈ টানার নৈবদ্য।
সাপুড়ের খেলা, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ
কিছুই দেখা হয় না তার।
কিন্তু তার চেয়েও বড় কষ্ট পেয়ে বসে তাকে—
হলুদ ফিতে হারানোর কষ্ট।
এদিক–ওদিক আঁতিপাঁতি খুঁজে চলে তার
বিষণ্ন ক্লান্ত চোখ—কোথাও পাওয়া যায় না
হলুদ ফিতে।
সময় বয়ে যায়।
সময়ের স্রোতে বালিকার সুখ হারায়।
বেলা ফোরালে মেলা ভাঙে,
ভাঙা মেলা—শুক্কুর বারের হাটের
মাঠটাকে বিরান করে হঠাৎ,
একে একে চলে যায় সাপুড়ে,
জাদুকর, বেদে আর মিঠাইওয়ালা।
পড়ে থাকে একরাশ ছেঁড়া কাগজ
ছেঁড়া ঠোঙা, রঙিন সুতলি অসম্পূর্ণ সরীসৃপের মতো
ফিরে যায় সবাই, ফিরে যেতে হয়,
কে কবে থেকেছে ভাঙা মেলায়।
মেলা ভাঙে
বুক ভাঙে বালিকার।
হলুদ ফিতের কষ্ট তাকে না ভাঙা মেলার
স্বপ্ন দেখায়। সেই স্বপ্ন ক্রমেই
হলুদ ফিতের আকার নিয়ে জড়িয়ে যায়
তার লালচে ফেরফ্যারা চুলে।
মেলা ভাঙে, ভাঙতেই হয়, ভাঙবেই তো
তবু বালিকার চুলে জড়ানো
হলুদ স্বপ্ন—
কিশোরীর হয়, তরুণীর হয়
সময় বয়ে যায় তবু
মেলা ভাঙে স্বপ্ন হারায়, সুখেরা পালায়
কে কবে থেকেছে ভাঙা মেলায়
আমরাই তো
জাহিদ হাসান
বড় পরিবারে একটা আনন্দ আছে, আবার একটা কষ্টও আছে!
বড় পরিবারে যদি কেউ অসুস্থ হয়
তোমাকেই যেতে হবে হাসপাতালে
এমন কথা নয়, অন্য একজন গেলেই হলো
আবার বড় পরিবারে যদি একটা মাছ কেনা হয়
কেউ মাছের টুকরা পায়, কেউ পায় না...
এটাই বড় পরিবার
আমি থেকে আমরা, আমরা থেকে আমাদের
আমি যদি আমার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বলি, যাও
ঈদের বাজার করো
আমরা খুশি
কিন্তু যদি ৫০ হাজার টাকা না দিয়ে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বলি,
যাও বাজার করো, তাতেও খুশি...
বাকি (৫০ থেকে ২৫) ২৫ হাজার টাকা কেন আমাদের পরিবারের
ভাই বা বোনকে দিই না?
দিলে তারাও খুশি...
দেশটা কি পরিবারের বাইরে?
আমার খুশি থেকে যদি আমাদের খুশি হয়,
অসুবিধা কী?
আমরাই তো...
(বি.দ্র. বলেছিল কবিতা লিখতে, মনের কথা লিখে দিলাম। কবিতা তো মনের কথাই।)
মেয়েটি সমুদ্রকে ভালোবেসে এক ফোঁটা পানি দিতে চেয়েছিল
মোশাররফ করিম
মেয়েটি সমুদ্রকে ভালোবেসে এক ফোঁটা পানি দিতে চেয়েছিল
কিন্তু অকূল অর্ণব তা কোথায় রাখবে, তার তো কূল নেই।
তারপর হাঁটতে হাঁটতে একটা একলা পাহাড়ের সঙ্গে দেখা হলে
পাহাড়টি যুগের পিপাসা নিয়ে মেয়েটিকে ডাক দিলে
কাঙালের সঙ্গে কাঙালের মিলন হলো।
মেয়েটি এখন পাহাড়ের সঙ্গে হাঁটে
মেয়েটি পাহাড়ের সঙ্গে হাঁটে আর সমুদ্রের গর্জন শোনে
মেয়েটি পাহাড়ের সঙ্গে হাঁটে আর সমুদ্রের ঢেউ গোনে
মেয়েটি পাহাড়ের সঙ্গে হাঁটে আর সমুদ্র তাকে ওঠায় নামায়
দোলায় ভাসায়।
মেয়েটি পাহাড়ের সঙ্গে হাঁটে
হাঁটতে হাঁটতে একটা সমুদ্রের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে
পাহাড়টি থেমে যায়।
মেয়েটিও।
পাহাড়টি বলে ওঠে, আমার কোনো গর্জন নেই
আমি ওঠাতে পারি না, নামাতে পারি না
দোলাতে পারি না, ভাসাতে পারি না।
আমার আছে, বুকভরা চাপা কান্না
তাতে তোমার কিছু যাবে আসবে না।
যানজটের ছড়া
কনা
কী বলব ভাই, রাস্তাঘাটে চলতে পারি কই?
ট্রাফিক জ্যামে দু–এক ঘণ্টা ঠিকই বসে রই!
যতই থাকুক কাজের তাড়া, বসেই থাকতে হবে
গাড়িগুলোর কাছিমগতি, পৌঁছুব আর কবে?
ঢাকা শহর স্থবির এখন, স্থবির ছবি যেন
ট্রাফিক জ্যামে এই এভাবে থাকতে হবে কেন?
ইশ্, যদি বা জ্যামশূন্য ঢাকার রাস্তা হতো!
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে মজা পেতাম কত!
শেষ চিঠি
বিদ্যা সিনহা সাহা মিম
দরজাটা বন্ধ, কিন্তু জানালা
খোলা থাকল,
শুধু তোমার জন্য।
কখন ইচ্ছে হলে
দূর থেকে অামাকে দেখো...
অামি জানি তোমার ইচ্ছে হবে,
অামারও...
অাবার কখনো কোথাও দেখা হয়ে গেলে
থমকে দাঁড়াব না,
চলে যেতে যেতে হয়তো পিছন ফিরে
একটুখানি দেখব তোমাকে।
অাগের মতো দূরে এসে অামাকে
জড়িয়ে ধোরো না।
অামি জানি তোমার ইচ্ছে হবে,
আমারও...
পড়ন্ত বিকেলের সেই স্মৃতিগুলো আর
কাছে টানব না।
মনে পড়বে হয়তো কিছু
সময়ের জন্য।
স্বপ্ন দেখার সেই পুরোনো দিনগুলো
আর খোঁেজা না...
জানি তোমার ইচ্ছে হবে,
আমারও...