আকাশের বাগানে উজ্জ্বল এক দুঃখ ফুটে আছে।
তখনও পুরোটা অন্ধকার
ছড়িয়ে পড়েনি সবখানে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম শূন্যে দৃষ্টি রেখে,
দুচোখে তমিস্রা ঘন হয়ে নেমে এল;
এবং তখন অতি দ্রুত দুঃখদের পরিবার-পরিজন
বন্ধ দরজার তালা খুলে হুড়মুড় বেরিয়ে আসতে শুরু করে দিল।
আমি কি এখন বুকের গভীর অন্ধকার
দুহাতে খনন করে তুলে আনব ওদের নাম, ধাম,
পরিচয়? এই সব উজ্জ্বল দুঃখদের?
সবচেয়ে বড় যিনি, পরিবারের প্রধান, আমার কষ্টলুব্ধক;
হাসপাতালের শুভ্র বিছানায় শুয়ে থেকে থেকে মিইয়ে গেল
ভোরের আলোর নিচে;
একটির নাম ধ্রুবকষ্ট,
সড়ক দুর্ঘটনার নিচে কয়েকটি চিৎকার মাত্র।
কৃত্তিকাদুঃখের কথাও বলি,
মানুষ কখনো দুঃখ-কষ্টের চুক্তিপত্রে স্বেচ্ছায় স্বাক্ষরও করে,
খুব স্থায়ী একটি দুঃখকে একান্ত আপন করে নেয়।
জন্মের আগেই ঝরে গেল যে গভীর ক্ষত,
সে রইল স্বাতী,
ওই তো, কী তীব্র জ্বলে আছে
মেঘেদের আসা-যাওয়া সদর্পে উপেক্ষা করে।
বিশাখাকে দেখো, স্কুলের উঠোনে ওর সঙ্গে...
সেবারই প্রথম,
কিছু হয়েছিল বুঝি?
বুঝে উঠবার আগেই চম্পট।
শুনে রাখো রোহিণীর কথাটিও,
ওর চুলে মেঘনা নদীর উত্তাল তরঙ্গ ছিল,
ঢেউ ওকে টেনে নিল নাভির গভীরে;
এ দেশের মেয়েরা রোহিণী হয়ে যায় কৈশোরোত্তীর্ণ কালেই...
চিত্রা, অনুরাধা, থাক...
রাত্রি দীর্ঘ এবং ঘন হচ্ছে,
কষ্টাম্বরে ফুটে উঠছে অসংখ্য উজ্জ্বল দুঃখ।
ভেঙে পড়া গ্রীষ্মের বিশাল
নাভির ওপর একা দাঁড়িয়ে সবুজ,
তিরতির করে কাঁপে খুব হলুদ হবার ভয়ে।
দস্যু বাতাসেরা দেখো কী অবলীলায় লুটে নেয়
সঞ্চিত সকল ক্লোরোফিল।
বিকেলের খোলা বারান্দায় নিস্তরঙ্গ জলাশয়,
একদল অতিশুভ্র হাঁসের ডানার নিচে নীল।
সে ছিল নিতান্ত ক্ষুদ্র, এবং এসেছিল একা, রাতের প্রগাঢ় অন্ধকারে;
নতুন চরের একদলা উষ্ণ কর্দমের ছোঁয়া।
অসীম দাপুটে এই দেহ,
চিন্তার উদ্ধত পেশিপুঞ্জ,
কুপোকাত নরম কাদার উপর্যুপরি আঘাতে।
সে আমার ঋজু দেহ, প্রায় পুরোটাই, গিলে নিল!
আজও কৃষ্ণপক্ষ, খোলা অন্ধকার হাঁটে;
প্রতীক্ষার ডাল ভারী হয়,
ভেঙে পড়ে জন্মের গুহায় উঁকি দেয়া
ভোরের নতুন এক রেখার ওপর;
না যদি সে বোঝে তার নিজের ক্ষমতা,
তবে সে বদলে যাক, অভিশাপ দিচ্ছি।
এ-দেহ তরল,
পাকানো পেশির জট,
তিনশত ষাট গেরো
ছড়ানো অস্থির খাঁচা, বড় জটিল, প্রকট।
তরল প্রবাহ এক বয়ে চলে,
বহমান দেহখানি সহস্র ধারায়।
কত শত প্রাচীন মোহনা, বহুমুখী,
তীব্র স্রোতে ঘুরে ঘুরে তড়পায়,
এই তো জেনেছি এতকাল।
আজ দেখি জল নেই, শুধু বয়ে চলে বায়ু
শূন্যে মিশে গেছে স্রোতস্বিনী,
তরলের পরমায়ু।
দেহের ভেতরে দেহ, অযুত-নিযুত,
শুধু হাওয়া,
হাওয়ার তরঙ্গ শুধু
সারা দিন করে আসা-যাওয়া।
পোশাক পরার কল্যাণে সুতোর ষড়যন্ত্র আমি
জেনে গেছি সভ্যতার আঁতুড়ঘরেই,
আজ সারা অঙ্গে রোদ, ছায়া, বৃষ্টি পরি
তোমরা অযথা কেন নগ্ন বলে গালমন্দ করো?
কবে আর বলো
বিদ্যের সঠিক মূল্যায়ন হবে এই পৃথিবীতে?